শিশুর বিকাশে পরিবার, বিদ্যালয় রাষ্ট্র সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে

| শনিবার , ২০ নভেম্বর, ২০২১ at ৭:৩১ পূর্বাহ্ণ

আজ সর্বজনীন শিশু দিবস। জাতিসংঘ ঘোষিত ১৯৫৯ সালের ‘শিশু অধিকার ঘোষণা’ ও ১৯৮৯ সালের ‘শিশু অধিকার কনভেনশন’ প্রণয়নের দিন অর্থাৎ ২০ নভেম্বর বিশ্বব্যাপী সর্বজনীন শিশু দিবস পালিত হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন তারিখে শিশু দিবস পালন করা হয়। আমাদের বাংলাদেশে ১৯৯৬ সাল থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে ১৭ই মার্চ শিশু দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আর অক্টোবরের প্রথম সোমবারকে ধরা হয় বিশ্ব শিশুদিবস। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জুনের এক তারিখ শিশু দিবস। আর সর্বজনীন শিশু দিবস নভেম্বরের ২০ তারিখ। এবারের প্রতিপাদ্য হলো, ‘কোভিড-১৯ এর কারণে শিশুদের শেখার ক্ষতি পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করা’।
ইউনিসেফ ও ইউনেস্কো প্রকাশিত এশিয়ায় শিক্ষা খাতের ওপর ‘কোভিড-১৯ এর প্রভাব ও মোকাবিলা কার্যক্রম বিষয়ক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ’ (সিটএন রিপোর্ট) শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের প্রথম দিকে কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর পর থেকে স্কুল বন্ধ থাকায় বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ শিশুর এবং দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব এশিয়াসহ এশিয়ার প্রায় ৮০ কোটি শিশুর পড়াশোনা ব্যাহত হয়েছে।
প্রতিবেদনটি শিশুদের পড়াশোনার ওপর মহামারির অব্যাহত প্রভাব এবং তা মোকাবিলায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকারের গৃহীত কর্মসূচি ও উদ্যোগের কথা তুলে ধরে। যখন সাধারণত শিশুদের বার্ষিক ছুটি থেকে স্কুলে ফেরার কথা, সেই সময়ে এই প্রতিবেদনে নিরাপদ হওয়া মাত্রই স্কুলগুলো খুলে দেওয়ার জন্য সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু দেশে, যেমন ফিলিপাইনে, মহামারির পুরো সময়ে স্কুলগুলো বন্ধ রাখা হয় এবং সে কারণে প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের ২ কোটি ৭০ লাখ শিক্ষার্থীর সশরীরে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বাংলাদেশে গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুলগুলো পুনরায় খুলে দেওয়ার আগ পর্যন্ত মহামারির পুরোটা সময় স্কুলগুলো বন্ধ ছিল।
ক্রমাগত স্কুল বন্ধ থাকার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোর পরিণতি অত্যন্ত গুরুতর, যার মধ্যে রয়েছে পড়াশোনার ক্ষতি; মানসিক দুর্দশা; স্কুলের খাবার ও নিয়মিত টিকা না পাওয়া; কাঠামোগত শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি; এবং শিশুশ্রম ও বাল্য বিয়ে বৃদ্ধি। এই ভয়াবহ পরিণতিগুলোর মধ্যে অনেকগুলো ইতোমধ্যে অসংখ্য শিশুকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং অনেকগুলো আগামী বছরগুলোতে অনুভূত হতে থাকবে।
পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ইউনিসেফের পরিচালক মার্কোলুইজি কোরসি এ বিষয়ে বলেন, ‘শিক্ষা সেবার ব্যাঘাত শিশুদের ওপর, বিশেষ করে সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা শিশুদের ওপর যে প্রভাব ফেলেছে তা আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। যখন স্কুল বন্ধ থাকে, তখন শিশুরা শেখার ও বেড়ে ওঠার সবচেয়ে বড় সুযোগটি হারায়।’
শিশুকে তার বাসযোগ্য করার অঙ্গীকার গ্রহণ খুবই জরুরি। কেননা, অনেকের প্রত্যয় ভরা কণ্ঠে শিশুর সম্ভাবনার কথা শোনা গেলেও শিশু এখনো নির্যাতনের শিকার। সে অবহেলিত। সুবিধা বঞ্চিত। কোথাও কোথাও সে তার স্বাভাবিক কাজে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। কোথাও না কোথাও সে অপমাণিত হচ্ছে। কোথাও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শ্রম দিতে হচ্ছে। ফলে গোটা পৃথিবী আজ তার জন্য নিবেদিত। সব কটি দেশে শুরু হয়েছে বিশ্ব শিশু আন্দোলন। তার অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত করতে বৃদ্ধি পাচ্ছে জন-সচেতনতা। শিশুর প্রতি নির্যাতন ও অবহেলার বিরুদ্ধে গড়ে তোলা হচ্ছে জনমত। নেওয়া হচ্ছে সামাজিক উদ্যোগ। বিশ্বের এক জননন্দিত মহানায়ক-দক্ষিণ আফ্রিকার বিপ্লবী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন, ‘যে জাতি শিশুদের কথা ভাবে না, সেটা কোনো জাতিই নয়।’ তাই বলা যায়, একটি জাতিকে যদি অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিতে হয়, তাহলে প্রথমেই দরকার শিশুর পরিচর্যা। মেধায় মননে শক্তিতে তাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই জাতি সমৃদ্ধ হবে। শিশুর মৌলিক অধিকার বিষয়ে সোচ্চার জাতিসংঘ। প্রণয়ন করা হয়েছে শিশু অধিকার সনদ। এটি জাতিসংঘের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই সনদ এখন একটি আন্তর্জাতিক আইন। তার বেঁচে থাকার অধিকারের সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে বিকাশের অধিকার। কীভাবে বিকশিত হবে সে? তার চায় শিক্ষা। তার প্রয়োজন অবকাশ যাপন। তার জন্য জরুরি বিনোদন। মানসিক বিকাশে দরকার সাহিত্য। শিশুসাহিত্য। শিশুসাহিত্য শিশুর অধিকার। শিশুর সৃজনশীলতা ও বিকাশের দিকে লক্ষ্য রেখে আনন্দময় পরিবেশে বিজ্ঞানমুখী শিক্ষায় তাদের গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। শিশুর বিকাশে পরিবার, বিদ্যালয়, সমাজ, রাষ্ট্র সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে