শিশুর ডায়রিয়া প্রতিরোধ: ডায়রিয়া প্রতিরোধে অতি গুরুত্বপূর্ণ ৭টি বিষয় মেনে চললে ডায়রিয়ার প্রকোপ অনেক কমে যায়। সেগুলো হল : হাত ধোয়া ও অন্যান্য ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা পালন।
হ সাবান ও যথেষ্ট পরিমাণ পরিষ্কার পানি দিয়ে পরিবারের সবাইকে ভালোমতো হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। ক. খাওয়ার আগে. খ. শিশুকে খাওয়ানোর আগে গ. পায়খানা করার পরে ঘ. শিশুর পায়খানা পরিষ্কার করার পরে ঙ. রান্না করার আগে চ. খাবার পরিবেশন করার আগে–অবশ্যই হাত ধুতে হবে। অন্যান্য ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা যেমন শিশুর ও নিজের নিয়মিত নখ কাটা, প্রতিদিন গোসল, বাচ্চাকে দুধ দেওয়ার পূর্বে স্তন পরিষ্কার ইত্যাদি পালন করা।
হ জন্মের প্রথম ৬ মাস পর্যন্ত শিশু শুধুমাত্র বুকের দুধ খাবে। বুকের দুধ খাওয়ালে শিশুর ডায়রিয়া হয় না, কারণ বুকের দুধ জীবাণুমুক্ত শিশুরোগ প্রতিরোধকারী। বোতলে দুধ খাওয়ালে ডায়রিয়া বেশি হয়। কারণ বোতল সব সময় পরিষ্কার রাখা কখনোই সম্ভব নয়।
হ ৬ মাস বয়স হওয়ার পর থেকে শিশুকে বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার পরিবারের সবাই যা খায় তা নরম করে পরিবেশন করে খাওয়াতে হবে।
হ নিরাপদ পানি ব্যবহার করা। সাধারণত টিউবওয়েলের পানি বা ফোটানো পানি নিরাপদ। টিউবওয়েলের নিকট গোসল, ধোয়ামোছা বা মলমূত্র ত্যাগ করতে দেওয়া যাবে না। পায়খানা অবশ্যই টিউবওয়েলের ১০ মিটার দূরে ও নিচুতে হতে হবে ও পশুর নাগালের বাইরে রাখা উচিত। পরিষ্কার পাত্রে পানি সংগ্রহ করা উচিত। মূল পাত্র থেকে পানি তোলার জন্য ব্যবহৃত মগ আলাদা থাকা দরকার।
হ শিশুর বয়স ৯ মাস পূর্ণ হলেই হামের টিকা দিতে হবে। হাম আক্রান্ত শিশু সহজেই ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ইত্যাদিতে আক্রান্ত হয়।
প্যাকেট স্যালাইন শরবত তৈরির পদ্ধতি:
প্রথমে সাবান ও পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে হবে। আধা লিটার বা আধা সেরের চেয়ে বেশি পানি ধরে এমন একটি পাত্র এবং আধা লিটার বা আধা সের পানি মাপা যায় এরকম একটি গ্লাস বা অন্য কোনো পাত্র পানি দিয়ে ভালোমতো পরিষ্কার করে নিন। স্যালাইন প্যাকেটের উপরের অংশ কেটে সবটুকু গুঁড়া স্যালাইন তৈরির জন্য পরিষ্কার পাত্রের মধ্যে এমনভাবে ঢেলে নিন যাতে প্যাকেটের মধ্যে দানা না থাকে। পাত্রে আধা লিটার বা আধা সের পানি ঢেলে নিন। স্যালাইন ভালো করে গুলে নিন যাতে কোনো তলানি না থাকে। সাধারণত সঠিকভাবে তৈরি করা স্যালাইনের স্বাদ হয় চোখের পানির মত, নিজে খেয়ে দেখে নিন তৈরি করা স্যালাইনের স্বাদ কেমন হল।
কীভাবে লবণ–গুড় বা লবণ–চিনির শরবত তৈরি করতে হয়:
প্রথমে সাবান ও পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন। আধা লিটার বা আধা সেরের চেয়ে বেশি পানি ধরে এমন একটি পাত্র এবং আধা লিটার বা আধা সের মাপা যায় এমন একটি গ্লাস বা অন্য কোনো পাত্র পানি দিয়ে ভালোমত পরিষ্কার করে নিন। শরবত বানানোর পাত্রে আধা লিটার বা আধা সের খাবার পানি মেপে নিন এবং তাতে তিন আঙুলের প্রথম ভাঁজের ১ চিমটি লবণ দিন। ১ মুঠো গুড় বা চিনি পানির মধ্যে দিন এবং ভালো করে মেশান, যেন কোনো তলানি পাত্রের নিচে জমা না থাকে। মিশ্রণ চেখে দেখুন, যদি চোখের পানির চেয়ে তা বেশি লবণাক্ত হয় তবে ঐ মিশ্রণ ফেলে দিয়ে পুনরায় কম লবণাক্ত শরবত তৈরি করুন।
তৈরি করা খাবার স্যালইন কতক্ষণ রাখা যায়:
প্যাকেট থেকে তৈরি করা খাবার স্যালাইন ১২ ঘন্টা ব্যবহার করা যায়। ১২ ঘন্টা পর যদি তৈরি করা স্যালাইন অবশিষ্ট থাকে তবে তা ফেলে দিয়ে নতুন করে স্যালাইন তৈরি করে খাওয়াতে হবে। তৈরি লবণ–গুড়/চিনির শরবত ৬ ঘন্টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। ৬ ঘন্টা পর তৈরি করা লবণ–গুড়/চিনির শরবত যদি অবশিষ্ট থাকে তবে তা ফেলে দিয়ে নতুন করে শরবত তৈরি করে খাওয়াতে হবে।
হ স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা তৈরি করতে হবে এবং বাড়ির ছোটবড় সবাইকে পায়খানায় মলত্যাগ করতে হবে। পায়খানায় যেন মাছি না ঢুকতে পারে এবং মল যেন ডোবা, পুকুর, নদী বা ব্যবহার করার পানির সঙ্গে না মেশে, এরূপভাবে পায়খানা তৈরি করতে হবে।
হ বাচ্চাদের মল দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা। ছোট শিশুদের পায়খানা বড়দের মতোই রোগ ছড়াতে পারে, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি। তাই শিশু পায়খানা করার পরপরই তা তুলে নিয়ে বড়দের ল্যাট্রিনে ফেলতে হবে। পায়খানা করার পর শিশুদের পরিষ্কার করে সেই পানিও ল্যাট্রিনে ফেলতে হবে।
লেখক : প্রফেসর ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।