শিশুরা অনিরাপদ; অনিশ্চয়তায় সন্তানদের জীবন

মোঃ আবু ছালেহ্‌ | শুক্রবার , ১৪ মার্চ, ২০২৫ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

চলতি পথে যখন দেখি কোন শিশু ফুল, তোয়ালে, চিরুনী বা খেলনা বিক্রি করছে, তখন শুধু ভাবি আহা কার সন্তান এই মেয়েটি বা ছেলেটি? জীবিকার প্রয়োজনে এই অনিরাপদ শহরে বাইরে বাইরে ঘুরছে। রাতে কোথাও কি মাথা গুঁজে থাকতে পারবে? কোথায় পাবে নিরাপদ আশ্রয়? পরিবারপরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা এই শিশুগুলো ঘরের বাইরে কতটা নিরাপদ? অথচ এই আমরাই যখন শৈশব কৈশোরে খেলতে বের হতাম বা বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে বেড়াতে যেতাম, তখন বাসা থেকে আব্বাআম্মা বলে দিতো যেখানেই যাও সন্ধ্যার আগে বাসায় ফিরে আসবে। বাইরের জগৎ সবসময় শিশুর জন্য নিরাপদ নয়। বলা হতো, বাসাই হলো শিশুর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। কন্তু আমাদের সামনে থেকে পর্দা সরিয়ে দিলো একটি জরিপ। জরিপটি বলছে সমাজের সবচেয়ে বড় ও নিরাপদ যে প্রতিষ্ঠান পরিবার, তা এখন আর শিশুর জন্য নিরাপদ আশ্রয় নয়। বরং পরিবারগুলো এখন শিশু নির্যাতনের কেন্দ্র।

শিশুকে অসহায় পেয়ে, হাতের কাছে পেয়ে এবং শিশুর উপর কর্তৃত্ব করা সহজ বলে আমরা বড়রা সবসময়ই শাসন করার চেষ্টা করি। ভুলে যাই শাসনের নামে শোষণ করে ফেলছি। আমরা চাই শিশুকে নিজেদের ইচ্ছাধীন করে রাখতে। জরিপ বলছে, ঘরেই শতকরা ৯৫.৮ জন শিশু নির্যাতিত হচ্ছে নানাভাবে। শিশুকে শাস্তি দেয়ার মাধ্যমে কখনো তাকে মানুষ করে তোলা সম্ভব নয়। বরং এই ব্যবস্থা শিশুর মনোজগতে এতটাই বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে যে, শিশুটি বড় হতে পারে একজন অপরাধী হিসেবে, নয়তো অমানবিক বা অসামাজিক মানুষ হিসেবে বা সমাজের নিকৃষ্ট কীট হিসেবে। এই নিপীড়ন, নির্যাতন তাকে পথভ্রষ্ট ও উচ্ছৃংখল করে তুলতে পারে। বাংলাদেশে শিশুরা এখন যেভাবে বেড়ে উঠছে, এর অধিকাংশই আমাদের কাছে অচেনা। বাড়ছে শিশু অপরাধীর সংখ্যা। বাড়ছে শিশুর মাদক গ্রহণের হার। কারণ পরিবার, সমাজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যে নির্দয় আচরণ শিশুকে শিক্ষা দেবে, শিশু সেই আচরণই তার জীবনে গ্রহণ করবে। শিশুকে রূঢ় কথা বলা, অবহেলা করা, বাজে বা অশ্লীল আচরণ করা বা কথা বলা হলো শিশুর প্রতি করা সবচেয়ে ভয়াবহ অপরাধ। সেটা শারীরিক, মানসিক বা যৌন হয়রানি হতে পারে। শিশুর প্রতি যৌন হয়রানি করা হলে এটা তার শরীর, মন এবং আত্মসম্মানকে নষ্ট করে দেয়। যে শিশু একবার যৌন হয়রানির শিকার হয়, তাকে ঠিকমতো সহায়তা বা সাহায্য দেয়া না হলে, সে বারবার আক্রান্ত হতে পারে। তার ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

সমাজে সবধরণের অপরাধ বাড়ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন লাগামছাড়া। অপরাধীদের চরিত্র ও সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে এদের একটা বড় অংশ শিশুকিশোর বা তরুণ। যে ব্যবহার পেয়ে তারা বড় হচ্ছে, ঠিক সেই ব্যবহারই তারা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিচ্ছে ও দিবে। কাজেই শিশুর সাথে সে ব্যবহারই করা উচিৎ, যা আমরা তাদের কাছে ভবিষ্যতে প্রত্যাশা করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমা
পরবর্তী নিবন্ধলজ্জিত সত্তা