১. নবজাতক শিশু ও প্রথম দুমাস (০–২) বয়সেঃ
শিশু ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রায় ১০–১৯ ঘন্টা ঘুমিয়ে কাটায় (গড়ে ১৩–১৪.৫ ঘন্টা), যা প্রিম্যাচিওর বেবিতে আরো বেশি পরিমাণের হয়। ফিডারে ফর্মুলাতে অভ্যস্ত শিশুর ঘুমের সময়কাল শুধুমাত্র মাতৃদুগ্ধের ওপর নির্ভরশীল শিশুর তুলনায় দীর্ঘ। প্রথমোক্ত শ্রেণি যেখানে এক নাগাড়ে ২– ৫ ঘন্টা ঘুমোয়, সেখানে বুকের দুধে শিশু এক নাগাড়ে ঘুমোতে থাকে ১–৩ ঘন্টা অবধি। মধ্যে থাকে ১–২ ঘন্টার জাগরণ পর্ব।
১ম সপ্তাহে রাত্রি–দিন কালিন ঘুমোনোর কোন শিডিউল গড়ে ওঠে না। পরের দিকে রাত্রিকালিন ৮.৫ ঘন্টা ও দিনে ৫.৭৫ ঘন্টার মতো ঘুমের পরিমাণ বজায় থাকে।
ইনফ্যান্ট শিশুর জন্য নিরাপদ ঘুম বহাল রাখতে যে কতিপয় নির্দেশনা জারী আছে যেগুলো হলো:
৪শিশুকে তার রাত্রিকালিন, বা দিবানিদ্রার সময় পিঠের ওপর শোয়ানো
৪শক্ত মাট্রেসযুক্ত বিছানার ব্যবহার। নরম তুলতুলে নয়, তাতে শিশু হঠাৎ মুখের দিকে উল্টে শ্বাসরোধ পরিস্থিতিতে পড়তে পারে চারদিকে সুরক্ষাযুক্ত নিরাপদ শিশু শয্যার ব্যবহার।
৪বালিশ বা তুলতুলে তোষক যে না থাকে
৪শিশুর মুখ ও মাথা যেন অনাবৃত বা খোলা থাকে, তা সুনিশ্চিত করা। ঘুমকালিন সময়ে যেন ব্ল্যাংকেট বা অন্যান্য কাপড়ে চোপড়ে নাকমুখ ঢাকা না পড়ে, সে বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন।
৪এ বয়সে শিশুর অনিদ্রা নিয়ে মা ও অভিভাবকেরা যেসব সমস্যার কথা জানান, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা ঘুম নিয়ে মায়ের চাওয়া ও শিশুর ঘুমচক্র স্থাপনের প্রক্রিয়াজনিত ভুলবুঝাবুঝির কারণে ঘটে। তবে শিশুর শূলবেদনা, জি.ই রিফ্লাক্স, কিংবা ফর্মুলা খাবারে অ্যালার্জির কারণে এ বয়সের শিশুর ঘুমে সমস্যা তৈরি হতে পারে।
২. ইনফ্যান্ট (২–১২ মাস) শিশুর বিশেষত:
৪–১২ মাস বয়সী একেক শিশুতে ঘুমপরিমাণে বেশ প্রভেদ থাকে। তবে গড়ে এ বয়সের শিশু ১২–১৬ ঘন্টা অবধি ঘুমিয়ে কাটায়। শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের পরিপক্বতার ওপর নির্ভর করে প্রথম ১২ সপ্তাহ বয়স ঘিরে শিশুর ঘুমের চরিত্র নির্মিত হতে থাকে। ৬ সপ্তাহ থেকে ৩ মাস বয়সে শিশু তার এক নাগাড়ে ঘুমের পরিমাণ ঠিক করে নেয়। ঘুমানো অবস্থায় কোন কোন শিশুকে মাথা ঝাঁকানো বা শরীর দোলানোর মতো দৈহিক সঞ্চালনা করতে দেখা যায়।
৩. টোডলারস (১–২ বছর):
শিশুর দিবানিদ্রাসহ দৈনিক ঘুমের পরিমান ১১–১৪ ঘন্টার মতো। ১৮ মাস বয়সে এসে ২ বারের দিবানিদ্রা ১ বারে নেমে আসে। এসময় শিশুর বুদ্ধির বিকাশ, সামাজিকতা ও কথাবলা–ভাষাজ্ঞান অর্জন, তার ঘুমচক্রকে প্রভাবিত করে। রাত্রিকালিন ঘুমে ভয় জাগতে শুরু করে। এ সময় তাকে নির্দিষ্ট সময়ে শোয়াতে নিয়ে যাওয়ার রুটিন গড়ে তোলা উচিৎ। এ বয়সের ঘুম অভ্যেসের সাথে পরবর্তীতে শিশুর অনিদ্রারোগ উৎপত্তির সম্পর্ক আছে।
৪. প্রিস্কুল বয়সে (৩–৫ বছর):
দিবানিদ্রাসহ দৈনিক ঘুমের পরিমাণ ১০–১৩ ঘন্টা। ৪ বছর বয়সের ২৬ শতাংশ শিশু ও ৫ বছর বয়সে মাত্র ১৫ শতাংশ শিশু দিবানিদ্রাতে যায়। এ বয়সে ঘুম সমস্যা ক্রোনিক সমস্যায় পরিণত হয়। এ সব সমস্যার মধ্যে রয়েছে: নিদ্রিত অবস্থায় ভ্রমণ, ঘুম আতংক প্রভৃতি।
৫. মধ্য শৈশবে (৬–১২ বছর):
দৈনিক মোট ঘুম ৯–১২ ঘন্টা। বিদ্যালয়ের পরিবেশ ও আচরণজনিত সমস্যা ঘুমকে প্রভাবিত করে। মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক্স পর্দা যেমন টেলিভিশন, কম্পিউটার, ভিডিওগেমস, ইন্টারনেট আসক্তি ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়। বিদ্যালয় চলাকালিন ও ছুটিকালিন সময়ে ঘুমোতে যাওয়া এবং শয্যত্যাগ অভ্যেসের মধ্যে বড়রকমের তফাত অনিয়মিত ঘুম শিডিউল গড়ে তোলে ও নানা ঘুম সমস্যার জন্ম দেয়। ঘুম আতংক, কম ঘুম, ঘুমে শ্বাস–প্রশ্বাস বন্ধ হওয়ার মতো জটিলতা এসব সমস্যার মধ্যে প্রধান।
লেখক : প্রফেসর ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ,
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।