শিশুদের মানসিক সমস্যা কেন হয়, প্রতিকার কী

ডা. হাসান জাহিদ ও শারমিন সুলতানা | রবিবার , ১৭ মার্চ, ২০২৪ at ৪:৫১ পূর্বাহ্ণ

আজ ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী। দেশে এই দিনটিকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করা হয়। অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল পরিবারও এ দিনটিকে উদযাপনের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আর তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের সিডিসি এবং পেডিয়াট্রিক ডিপার্টমেন্ট শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে কাজ করছে। আজকের এই যান্ত্রিক যুগে শিশুদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যেমন : অতিরিক্ত ডিভাইস নির্ভরশীলতা, অমনোযোগিতা, অস্থিরতা, পড়াশোনায় অনীহা ইত্যাদি। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ না নেয়া এবং মানসিক রোগ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় এইসব সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমরা জানবো শিশুদের মানসিক সমস্যা কি? কেন হয়? এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে।

আপনার শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে আপনি কি সচেতন : অনেক সময় দেখা যায় আমরা যারা পরিবারের বড়রা আছি, আমরা আমাদের পরিবারের ছোটদের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারটা খেয়াল করি না। তারা তাদের কোনো মানসিক সমস্যার কথা বললে আমরা তার কথা গুরুত্ব সহকারে দেখি না। আর যদি অন্য কেউ আমাদের এ ব্যাপারে বলে আমদের মনে তখন বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন আসে, ওতো ছোট। ওর আবার মানসিক সমস্যা কি? ছোট বাচ্চাদের আবার মানসিক সমস্যা হয় নাকি? কই আমরা যখন ছোট ছিলাম আমাদের তো কখনো কোন মানসিক সমস্যা হয়নি?

আপনি জানেন কি? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অর্ধেকের বেশি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ১৪ বছরের আগে শুরু হয়। পৃথিবীর ২০ শতাংশ শিশু ও কিশোরকিশোরীর মানসিক অসুস্থতা আছে। এ দেশে পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের ১৮.৩৫ শতাংশ মানসিক রোগে আক্রান্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ২০০৯ থেকে জানা যায় , মেয়ে শিশুর ১৭.৪৭ শতাংশের তুলনায় ছেলে শিশুদের মধ্যে ১৯.২১ শতাংশের মানসিক রোগের প্রকোপ বেশি এবং শহর ও গ্রামের তথ্যও আলাদাভাবে দেয়া হয়েছে। তাতে জানা যায়, শহরের ১৪.৩১ শতংশের চেয়ে গ্রামের ১৭.৫০ শতাংশ শিশু মানসিক রোগে আক্রান্ত হয় । জরিপে আরো জানা যায়, দেশের ৩.৮১ শতাংশ শিশু মানসিক প্রতিবন্ধী । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ হিসাব মতে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ ভাগই কোনো না কোনো ধরনের প্রতিবন্ধী।এইসব প্রতিবন্ধীদের মধ্যে কেউ শারীরিক প্রতিবন্ধী, কেউ মানসিক, কেউ স্নায়ু বিকাশ জনিত প্রতিবন্ধী, আবার কেউ বহুবিধ প্রতিবন্ধী। এদের মধ্যে যারা স্নায়ু বিকাশ জনিত প্রতিবন্ধী, তাদের শারীরিক সমস্যা তেমন থাকে না। তাদের অনেকে দেখতে স্বাভাবিক শিশুদের মতো। সাধারণত মাতৃগর্ভে থাকাকালীন স্নায়ুর বিকাশে সমস্যা হলে তা ১৮ মাস বয়স থেকে ৩ বছরের মধ্যে এর প্রতিবন্ধিতার লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে।

এবার জেনে নেয়া যাক শিশুদের মানুষিক স্বাস্থ ও মানসিক রোগ সম্পর্কে কিছু কথা।

শিশুদের মানসিক রোগ : বর্তমানে অর্ধিকাংশ পরিবারে মাবাবা দুজনই কর্মরত। বাড়িতে দাদুদিদা থাকলেও, বাচ্চা বড় হচ্ছে কাজের দিদি বা মাসির কাছে। প্রয়োজন মতো মাবাবাকে না পাওয়ার জন্য একা একা নিজের মতো বড় হয়। এর থেকে তাদের নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে ঘরকুনো স্বভাব, রাগ ও বদমেজাজের মতো আচরণ দেখা দেয়। এই সমস্যা অধিকাংশ মায়েরাই উপেক্ষা করে যান। তারা ভাবেন বয়সের সঙ্গে সব পরিবর্তন হয়ে যাবে। কিন্তু, তা নয়। বাচ্চার মধ্যে এমন পরিবর্তন দেখলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। কারণ, এর থেকে পরে মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

অনেকসময় শৈশবকালেই বহু শিশুর মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে ভীষণ বিচলিত এবং ভীত হয়ে পড়েন। তবে এক্ষেত্রে ভয় না পেয়ে বাচ্চার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিত। কেননা মানসিক সমস্যা অনেক সময় শারীরিক সমস্যার চেয়েও বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর যদি সঠিক চিকিৎসা করা হয়, তবে বাচ্চারা সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। আজ আমরা শিশুদের কিধরনের মানসিক রোগ হতে পারে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিব এবং নিজেরা সচেতন হবো এবং অন্যকে সচেতন করব।

শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক আছে কি না তা বোঝার উপায় : স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মেজাজি হওয়া, মাঝে মধ্যেই মাথা ও পেট ব্যথার অভিযোগ, ঘুমে ব্যঘাত ও দুঃস্বপ্ন দেখা , স্কুল থেকে দূরে থাকা, সামাজিকতায় লজ্জা পাওয়া, ছোট খাটো বিষয়ে রাগ করা ও ভয় পাওয়া।

কিশোর ও তরুণদের মানসিক অস্থিরতার লক্ষণ হলো : আগের অনেক পছন্দের বিষয়ের উপর থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, বন্ধুদের সঙ্গে মারামারি, খেলাধুলার অতি আগ্রহ বা অনাগ্রহ, গেইমিং বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি আসক্ত হওয়া, মানসিক অস্থিরতা বাড়লে নিজের ক্ষতি হয় এমন কাজ করা যেমন :ধূমপান, নেশাজাতীয় দ্রব্যের প্রতি আকর্ষণ ও সবশেষে আত্মহত্যার মতো আবেগমাখা সিদ্ধান্ত।

কেন শিশুদের মানসিক সমস্যা দেখা দেয় : বিভিন্ন কারণে শিশুদের মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে । যেমন: জেনেটিকালি,স্কুলে বুলিং এর শিকার হলে , শিক্ষকদের কাছে বকা খেলে, বাবা মায়ের সঙ্গে সন্তানদের আবেগগত দূরত্ব, টঙিক প্যারেন্টিং, সন্তানকে অতিরিক্ত শাসন করা বা অতিরিক্ত আদর করা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ যেমনবাবা মায়ের ডিভোর্স বা নিয়মিত ঝগড়া হয় এমন পরিবেশে শিশুরা বেড়ে উঠলে এবং কোনো শারীরিক রোগ বা বড় কোনো দুর্ঘটনার কারণেও শিশুদের মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

শিশুদের কী কী ধরনের মানসিক সমস্যা হতে পারে : সাধারণত অল্পবয়সী বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন এডিএইচডি, অটিজম, অপজিশনাল ডেফিয়েন ডিজঅর্ডার (ওডিডি) , কনডাক্ট ডিজঅর্ডার, ডিসলেঙিয়া, ক্লেপটোম্যানিয়া, ইত্যাদি। তবে এগুলোর মধ্যে এএসডি এবং এডিএইচডি রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং বাবা মাকে এএসডি এবং এডিএইচডি তে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন ও বিচলিত হতে দেখা যায়। যদি সঠিক সময়ে সঠিক রোগটি নির্ধারণ করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তবে অনেককাংশেই এই রোগের কুফল থেকে আপনার শিশুকে রক্ষা করা সম্ভব।

এডিএইচডি : সুস্থস্বাভাবিক শিশু খানিকটা চঞ্চল হবেই। তবে অতিচঞ্চল শিশুর সমস্যাকে বলা হয় অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার (এডিএইচডি)। এটি শিশুর এক ধরনের স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যা। বাবামা কিংবা স্কুলের শিক্ষক সবচেয়ে আগে এ সমস্যা চিহ্নিত করতে পারেন। সাধারণত তিনচার বছর বয়সে শিশুর এই লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। স্বাভাবিক চঞ্চল শিশুকেও অনেকে অতিচঞ্চল মনে করেন। কিন্তু চঞ্চলতা মানেই এডিএইচডি নয়। শিশুমাত্রই কিছুটা দুষ্টুমি করবে, বড়দের মতো মনোযোগ ও ধৈর্য তাদের মধ্যে আশা করা ঠিক নয়। যখন চঞ্চলতার কারণে শিশু নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয় (পড়ে যাওয়া, আঘাত পাওয়া ইত্যাদি), অন্যের ক্ষতির কারণ হয়, প্রায়ই এমন আচরণ করে (জিনিসপত্র ভাঙা, অযথা ছোটাছুটি, অন্যের কাজে বাধা দেয়া ইত্যাদি) কিংবা শিশুর সামাজিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় (যেমন চঞ্চলতার কারণে কেউ তার সঙ্গে মেশে না, খেলে না এবং তাকে এড়িয়ে চলে), তখন সমস্যাটিকে অতিচঞ্চলতা বলা যাবে।

যা দেখে বোঝা যায় শিশুটি অতিচঞ্চল: কোনো বিষয়ের প্রতি বেশিক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা, সারাক্ষণ ছোটাছুটি করা, চিন্তাভাবনা না করে হঠাৎ কিছু করে ফেলা। স্থির হয়ে বসে থাকতে না পারা, বইকলম প্রায়ই হারিয়ে ফেলা, লাফিয়ে উঁচুতে উঠে যাওয়া, প্রশ্ন শোনার আগে জবাব দেয়া, পড়ালেখা এমনকি খেলাধুলায় মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা, বড়দের কাজে বা কথার মধ্যে বাধা দেয়া এবং একসঙ্গে অনেক কিছু করার চেষ্টা করা, তবে কোনোটাই শেষ করতে না পারা ইত্যাদি। অতিচঞ্চলতার এই লক্ষণগুলো যদি ৭ বছরের কমবয়সী শিশুর মধ্যে কমপক্ষে ৬ মাস ধরে দেখা যায় এবং এ কারণে যদি তার পড়ালেখা বাধাগ্রস্ত হতে থাকে, তখন সেটিকে এডিএইচডি বলা হয়।

করণীয়: অতিচঞ্চল বৈশিষ্ট্য থাকলে শিশুটির জন্য একজন মনোরোগ চিকিৎসকের বা সাইকোলজিস্টের পরামর্শ জরুরি। শিশুর জন্য একটি রুটিন তৈরি করুন। বাড়ির সবাই সঠিক নিয়ম মেনে চলুন। যেমন : নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম, খাওয়া ও খেলাধুলা ইত্যাদি। শিশুকে কোনো নির্দেশ দিলে সেটি তাকে বুঝিয়ে বলবেন। রূঢ় আচরণ করবেন না। শিশুর ভালো কাজের প্রশংসা করুন, কখনো তাকে পুরস্কৃত করুন। শিশুর খাদ্যতালিকায় কৃত্রিম রং ও মিষ্টির পরিমাণ কমিয়ে তাজা ফলমূল যুক্ত করুন।এ রোগে আক্রান্ত শিশুদের মাঝে অস্থিরতা দেখা যায় এবং মনোযোগের ঘাটতি দেখা দেয় । তারা কোনো কাজই পুরোপুরি মনোযোগ দিয়ে করতে পারে না এবং কাজকর্ম অসম্পূর্ণ করে রাখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও এই সমস্যার ফলে শিশুদের মধ্যে সাময়িক স্মৃতিভ্রম বা শর্ট টার্ম মেমোরি লস দেখা দিতে পারে।

অটিজম : অটিজম একটি নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার বা স্নায়ুবিকাশ জনিত সমস্যা। এই সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এতে তাদের কথা বলতে অথবা কিছু বুঝতে, নতুন জিনিস শিখতে এবং স্বাভাবিক ভাবে চলতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। খুবই চিন্তার বিষয় যে এখন পর্যন্ত অটিজমের একক কোনো কারণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। ফলে কোনো বিশেষ ধরনের চিকিৎসায় অটিজম নিরাময়যোগ্যএটি কেউই এখনো পর্যন্ত দাবি করতে পারছে না। তবে আশার বিষয় হচ্ছে, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও থেরাপির মাধ্যমে অটিস্টিক শিশুরা অনেকটা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। অটিজম কখনোই ভালো হয়ে যায় না। তবে এ ধরনের মানুষ বিশেষ প্রতিভার অধিকারী হয়ে থাকে। এ কারণে অন্য সমস্যাগুলোর ব্যাপারে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হলে পৃথিবীকে দেওয়ার মতো অনেক দক্ষতাই তাদের আছে।

শিশুদের মানসিক রোগের লক্ষণ কী কী : শিশুদের মানসিক রোগ হয়েছে কিনা তা বোঝার জন্য অনেকগুলো লক্ষণ আছে। যেমনবাবামায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে, অতিরিক্ত রেগে যাওয়া এবং ভাঙচুর করা, বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে পারে না, পড়ালেখায় আগ্রহ থাকে না, ঠিকমতো ঘুম ও খাওয়াদাওয়া করে না, শিশু সমবয়সী বাচ্চাদের থেকে ভিন্ন এবং অস্বাভাবিক আচরণ করে থাকে, সবকিছুতে অতিরিক্ত চঞ্চলতা, রাগ, জেদ এবং অবাধ্য আচরণ করে, অকারণে হাসে, অকারণে কাঁদে, অনেকসময় অতিরিক্ত রেগে গিয়ে নিজেকে কিংবা অন্যকে আঘাত করে বসে, বাচ্চা সারাক্ষণ বিষণ্নতা বা অবসাদে ভোগে, অন্যের প্রতি প্রতিশোধমূলক এবং উগ্র আচরণ করে থাকে, সারাক্ষণ অন্যমনস্ক থাকে, অস্থিরতা, ভুলে যাওয়া এবং উদ্ভ্রান্তের মতো আচরণ করে, অগ্রহণযোগ্য, দৃষ্টিকটু এবং নেতিবাচক আচরণ করে থাকে, বাচ্চা রুটিন অনুযায়ী কাজ করতে পছন্দ করে না, অনেকবেশি আবেগপ্রবণ হয় এবং নিজের আবেগঅনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, শিশু অনেক দেরিতে কথা বলা শেখে এবং বিভিন্ন কাজকর্মে অপটু হয়ে থাকে, অতিরিক্ত দুষ্টামি করে এবং বিরক্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, বাচ্চার বুদ্ধিমত্তা কম হয় , ডাকলে সাড়া দেয় না, অনেকসময় বাইরের কাউকে কিংবা অন্য কোনো মানুষের উপস্থিতি সহ্য করতে পারে না।

এইসব সমস্যার সম্মুখীন হলে করণীয় কী : আপনার সন্তানের মধ্যে এই সব মানসিক রোগ দেখা দিলে ঘাবড়ে যাবেন না। কেননা বর্তমানে শিশুদের মানসিক সমস্যার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। সেক্ষেত্রে আধুনিক এবং কার্যকরী চিকিৎসার মাধ্যমে আপনার বাচ্চা সুস্থ স্বাভাবিক এবং সুন্দর জীবন যাপন করতে পারবে। তাইতো আপনার ছোট্ট সোনামণির মাঝে অস্বাভাবিক আচরণ দেখলে, দেরি না করে এসব বিষয়ে অভিজ্ঞ একজন সাইকিয়াট্রিক ডাক্তার বা সাইকোলজিস্টের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। অথবা আপনি যদি বুঝতে না পারেন আপনার বাচ্চা আদৌ স্বাভাবিক কিনা আথবা সে কোনো ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত কিনা সে ক্ষেত্রে আপনি কোনো অভিজ্ঞ ডাক্তার বা সাইকোলজিস্টের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এবং একটা সাইকোলজিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট করিয়ে নিতে পারেন এটা জানার জন্য যে, আপনার শিশুটি আদৌ কোন মানসিক বা স্নায়ু বিকাশ জনিতো রোগে আক্রান্ত হয়েছে কিনা? এ ফলে আপনি আপনার শিশুর সঠিক রোগ নির্ণয় করতে সক্ষম হবেন এবং ডাক্তার বা সাইকোলজিস্টের পরামর্শে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবেন।

সাইকোলজিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট কি আদৌ গুরুত্বপূর্ণ : এখনো আমাদের সমাজে সাইকোলজিস্ট বা সাইকোলজিক্যাল ব্যাপার গুলো নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক ভুল ধারনা আছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যেটা দেখা যায় বাবা মা যখন একটা বাচ্চার কথা না বলা, অমনোযোগিতা, অতিচঞ্চলতা, ডাকলে রেসপন্স না করা ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসেন ডাক্তার শিশুটির সমস্যা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য একজন সাইকোলজিস্ট এর কাছে রেফার করেন একটা সাইকোলজিক্যাল অ্যাসেসমেন্টের জন্য। তখন বাবামায়েরা বেশিভাগ ক্ষেত্রে এটা ইগনোর করতে চান এই কথা চিন্তা করে যে মানুষ যদি শুনে আমার বাচ্চাকে পাগল বলবে। তাদের মনে এই ভয় কাজ করে যেউনি যদি আমরা বাচ্চার অটিজম হয়েছে বলে, বা ছেলে বাচ্চারা দেরিতে কথা বলে কিছু দিন গেলেই ঠিক হয়ে যাবে অথবা ওতো শুধু কথা বলতে পারে না, স্পিচ থেরাপি দিলেই ঠিক হয়ে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। একটা জিনিস কি, কোন চিকিৎসা গ্রহণ করবেন সেটাতো পরের বিষয়। আগেতো সঠিক রোগ নির্ণয় হওয়া জরুরি। যেমন ধরেনআপনার জ্বর হয়েছে, এজন্য আপনি নাপা খেতে থাকলেন, তবুও আপনার জ্বর গেল না। তখন ডাক্তার আপনাকে টেস্ট দিল এবং দেখা গেল আপনার টাইফয়েড হয়েছে । এখান থেকেই বোঝা যায় সঠিক সময়ে সঠিক রোগ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসা না হওয়ায় আপনার জ্বর ভালো হয়নি। তাই আপনার শিশুর সঠিক রোগ নির্ণয় এবং সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণের জন্য সাইকোলজিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে বাবা মায়েদের প্রতি একটা রিকোয়েস্ট থাকবে যে, আপনারা সমাজের কথা চিন্তা না করে আপনাদের বাচ্চার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করুন। কেননা আজকে আপনার একটা সিদ্ধান্ত আপনার বাচ্চার সঠিক রোগ নির্ণয় করতে এবং তাকে ভবিষ্যতে এইসব রোগের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দূরে রাখতে সাহায্য সহযোগিতা করবে।

লেখক : ডা. হাসান জাহিদ (কনসালটেন্ট, পিডিয়াট্রিক মেডিসিন এনআইসিইউ এবং সিডিসি, অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল)

শারমিন সুলতানা (সাইকোলজিস্ট এবং সাইকোথেরাপিস্ট, সিডিসি, অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল)

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের ৩০ উপজেলা ও পৌরসভা পেয়েছে ৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা
পরবর্তী নিবন্ধঅধিগ্রহণের ১১৪ কোটি টাকা ছাড়, প্রকল্পে আসবে গতি