সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ। স্বাক্ষর নেয়া হবে। এর ফাঁকেই সাত আট বছর বয়সী এক মেয়ে শিশু আদালত কক্ষে ঢুকে পড়েন। ম্যাজিস্ট্রেটকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমি কিছু বলতে চাই’। ম্যাজিস্ট্রেটও সায় দেন। একপর্যায়ে অনুমতি নিয়ে সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েও পড়েন এবং বলতে থাকেন, স্যার আমি ভিক্ষা করি। আমার মায়ের ক্যান্সার। আমার বাপ আমার মাকে রেখে চলে গেছে।
আপনি আমার আব্বার বিচার করে দেন। ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, আমি যে বিচার করি তা আপনাকে কে বলেছে? উত্তরে দরজার দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে শিশুটি বলেন, আমাকে একজন বলছে, আপনি বিচার করবেন। ম্যাজিস্ট্রেট অবাক চোখে তার দিকে তাকালেন। ছোট্ট এই শিশুকে তিনি কী বলবেন, কী করবেন হয়তো ভাবছিলেন। একপর্যায়ে বললেন, আপনি আপনার মাকে নিয়ে লিগ্যাল এইড অফিসে যাবেন। বিনামূল্যে সেখানে আপনার আব্বার বিচার চাইতে পারবেন। এও বললেন, লিগ্যাল এইডের স্যার আমার বন্ধু।
গতকাল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে হৃদয় বিদারক এই ঘটনা ঘটে। স্পষ্ট হয়, শিশুটি ক্যান্সার আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসা নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং বাবার বিচার পেতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। আদালতের বেঞ্চ সহকারী হারুনুর রশিদ ও আদালত কক্ষে ঘটনার সময় হাজির ছিলেন এমন কয়েকজন আইনজীবী আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তারা বলেন, শুধু লিগ্যাল এইড অফিস দেখিয়ে দেননি ম্যাজিস্ট্রেট। তাকে লিগ্যাল এইডের অফিস দেখিয়ে দিতে একজন আইনজীবীকেও বলেন। পাশাপাশি অফিস সহায়ককে দিয়ে খাসকামরা থেকে মানিব্যাগ এনে শিশুটির হাতে কিছু টাকা তুলে দেন ম্যাজিস্ট্রেট। তারা আরো বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট মনে করেছিলেন শিশুটি কোনো বিচারপ্রার্থীর সাথে আদালতে ঢুকেছে। কিন্তু কাউকে দেখা যায়নি। একাই ছিল শিশুটি। আদালত কক্ষে থাকা আইনজীবীরা ভাবলেন, হয়তো ভিক্ষা চাইতে এসেছেন তিনি।
সরিয়ে দেয়ার চেষ্টাও করা হয়। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, লার্নেড বলতে দিন। শিশুটির দিকে তাকিয়ে অভয়ও দিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় শিশু কাঠগড়ায় গিয়ে তার কথাগুলো বলতে শুরু করেন। জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের অফিস সহকারী মোহাম্মদ এরশাদুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, এখন পর্যন্ত এমন কোনো প্রার্থী আমাদের কাছে আসেনি। যদি আসেন আমরা অবশ্যই আইনি সেবা দিব।