শিশুখাদ্যে ভেজাল রোধে প্রয়োজন তদারকি সেলের নিয়মিত অভিযান

| রবিবার , ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

সামপ্রতিক সময়ে শিশুখাদ্যে ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ দ্রব্য বিক্রির কারণে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। নগরী ও এর আশপাশ ঘিরে গড়ে উঠেছে অনুমোদনহীন শিশু খাদ্যের ভেজাল কারখানা। যেখানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে শিশু খাদ্য। আসল আর নকলের গায়ে একই লেভেল। সেজন্য চেনাও কঠিন হয়ে পড়েছে। আসল পণ্যের পাশাপাশি নকল এসব ভেজাল খাদ্য ছড়িয়ে পড়ছে বাজারে। এতে খুবই দুশ্চিন্তায় এবং শিশুদের পছন্দের খাবার কিনতে গিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন অভিভাবকরা।

গত ১ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ‘চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠানটি শিশুখাদ্য তৈরি করে বাজারে দেয়। এর মধ্যে রয়েছে আকর্ষণীয় মোড়কে ঢাকা চকলেট, জেলি, ক্রিম বিস্কুট, নুডলস, চিপস, ক্র্যাকার্সসহ আরও অনেক কিছু। ‘রয়েল’, ‘হিফস’ ও ‘উইনার’ ব্র্যান্ড নাম দিয়ে এসব কিছু বাজারে ছাড়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির নাম হিফস এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রি। নগরীর পাথরঘাটায় এর কারখানা। সেই কারখানায় অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ম্যাজিস্ট্রেটসহ অন্য কর্মকর্তারা বিস্মিত হয়ে যান। চরম নোংরা পরিবেশে সেখানে শিশুখাদ্যগুলো তৈরি করা হচ্ছিল। শুধু তাই নয়, আকর্ষণীয় মোড়কে ঢাকা চকলেট, জেলি, ক্রিম বিস্কুট, নুডলস, চিপস, ক্র্যাকার্সসহ সব খাদ্যপণ্যেই ব্যবহার করা হচ্ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ রিএজেন্ট।’

শিশুর স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার। এই পুষ্টিসমৃদ্ধ ও গুণগত মানসম্পন্ন খাবার শিশুর শরীরকে পোক্ত করে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, বর্তমানে এই শিশুখাদ্যে প্রচুর ভেজাল চলছে। ফলে গুণগত মানসম্পন্ন খাবার পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সন্দেহাতীতভাবে খাদ্যে ভেজাল একটি জাতীয় সমস্যা, জাতীয় বিপর্যয় যা আমাদের সবাইকে বিশেষ করে নীতিনির্ধারকদেরকে সর্বাগ্রে সত্যিকারভাবে অনুধাবন করতে হবে। সুস্থ থাকার জন্য ভেজালমুক্ত খাবারের বিকল্প নেই। কিছু অসৎ ব্যবসায়ীরা ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষার্থে সমাজকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। ভেজাল খাদ্য জাতিকে ঠেলে দিচ্ছে পঙ্গুত্বের দিকে। দেশ ও জাতির সত্যিকার অর্থে উন্নতি চাইলে অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং ভেজাল মুক্ত খাবার নিশ্চিত করতে হবে।

তাঁরা বলেন, ভেজালে বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে সোচ্চার হতে হবে। জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালিত করতে হলে ভেজালমুক্ত খাদ্যের কোন বিকল্প নেই। তাই ভেজালের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রতিষ্ঠিত সিন্ডিকেটকে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ভেঙে দিতে হবে। আঞ্চলিক পর্যায়ে আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ ও তার ব্যবহার সহজলভ্য করতে হবে যাতে করে কৃষক থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা, আড়ৎদার সবাই সহজে ও কম খরচে সে সুবিধা নিতে পারে। খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বাজারজাতকরণ প্রভৃতি কাজে যারা সরাসরি জড়িত তাদেরকে বিশেষট্রেনিং এর মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। তাদেরকে সর্বোচ্চ সচেতন করে তুলতে হবে। পাশাপাশি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন মোবাইল কোর্ট থাকবে যাতে যে কোন সময় বিনা নোটিশে বাজারের খাদ্যপণ্য পরীক্ষা করে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়। কোনো পণ্য উৎপাদনের সময় গুণগত মান সঠিক থাকলেও সরবরাহের আগে তাতে ভেজাল মেশানো হয় কিনা, তাও খতিয়ে দেখা দরকার। কোনো পণ্য সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না হলে তাতেও পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হতে পারে। তাই এসব বিষয়েও কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে।

অন্যদিকে, শিশুখাদ্যের দাম বেড়ে চলেছে সীমাহীন। ফলে শিশুদের চাহিদা পূরণে হিমশিম খেতে হচ্ছে অভিভাবকদের। অনেকে বাধ্য হয়ে শিশুর জন্য পুষ্টিকর খাবার কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। এতে পর্যাপ্ত খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সন্তানেরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে, যা বলাই বাহুল্য। পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর মাতৃদুগ্ধের পাশাপাশি বিভিন্ন রকম পুষ্টিকর খাবারও খাওয়াতে হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অসাধু ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিকভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। শিশুখাদ্যের বাজার হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা অস্বাভাবিকভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে ক্রেতাকে হয়রানি করছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা দরকার। নিত্যপণ্যের অব্যাহত দাম বৃদ্ধিতে খেটে খাওয়া মানুষের উদ্বিগ্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক।

তাই শিশুখাদ্যে ভেজাল রোধে ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে মাঠে থাকতে হবে বিশেষ তদারকি সেলকে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের বিশেষ তদারকি সেল যদি নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রাখে, তাহলে কিছুটা হলেও শিশুখাদ্যে ভেজাল রোধ সম্ভব হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে