শিশুকে স্বাস্থ্যবান রাখতে পুষ্টিরক্ষা কর্মসূচি

অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী | শনিবার , ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৫:৫৫ পূর্বাহ্ণ

শিশুবয়সে অপুষ্টি সংকট

শিশুবয়সে অপুষ্টিজনিত সমস্যার প্রধান কারণ দারিদ্র্যতা ও সঠিক পুষ্টিজ্ঞানের অভাব। অনূর্ধ্বপাঁচ শিশুমৃত্যুর প্রধান ঝুঁকি অপুষ্টিগ্রস্ততাযা এ বয়সের ৫৪ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী। যে শিশু ক্যালরি ঘাটতি বা আমিষের অভাবে অপুষ্টি আক্রান্ত সে তাৎক্ষণিক বা দীর্ঘমেয়াদি নানা সংকটের সম্মুখীন হয়। যেমন

তাৎক্ষণিক সমস্যা :

পানি স্বল্পতা

তাপমাত্রা কমে যাওয়া

রক্তে গ্লুকোজ মাত্রা কমে যাওয়া

নানা ধরনের সংক্রমণ, রক্তাল্পতা

চোখে ভিটামিন এর অভাবজনিত চিহ্ন

হার্ট ফেলিওর

রক্তে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিংক, কপার, ব্রোমিয়াম ও ম্যাঙানিজ প্রভৃতি খনিজ অণুপুষ্টির ঘাটতি

অন্যান্য ভিটামিনের অভাব।

দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা:

শিশু প্রতিনিয়ত বাড়ে তার শারীরিক কাঠামোর গড়নেমানসিক বিকাশে। অপুষ্টিতে ভোগা শিশুতে বেড়ে ওঠার এই গতি ব্যাহত হয়

ঘন ঘন অসুখে পড়া

লেখাপড়ায় ভালোফল হয় না

বুদ্ধিবৃদ্ধিতে পিছিয়ে থাকা, উচ্চতায় খাটো , ওজনে কম থাকা। বিশেষত: যে শিশু প্রথম দ’ুবছর অপুষ্টিতে ভোগে পরবর্তীতে সে খাটো হয়।

দুর্বল স্বাস্থ্যের কারণে আয়রোজগারের ক্ষমতা কম থাকে।

শিশুর পুষ্টিরক্ষা কর্মসূচি

দেশে অপুষ্টি আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা, এবং ভিটামিন এ, আয়রন, আয়োডিন, জিংক ইত্যাদি খাদ্যপ্রাণখনিজ পদার্থ অণুপুষ্টির অভাবজনিত সংকট প্রকট। এসব শিশু অপুষ্টি সমস্যা নিরসনে সর্বাগ্রে প্রয়োজন মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা ও গবেষণাভিত্তিক সম্বন্বিত কর্মসূচির বাস্তবায়ন।

সুস্থ মা ও সুস্থ সন্তানের জন্য :

. সকল ক্ষেত্রে :

গর্ভকালীন সময়ে মাকে আয়রনফলিক এসিড প্রদান

অন্যান্য অণুপুষ্টির যোগান

আয়োডিন যুক্ত লবণ ও ক্যালসিয়াম গ্রহণ

পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি গ্রহণ। ৩ থেকে ৫ বছর বিরতিতে গর্ভধারণ

ঘরে ধূমপান না করা, ও বায়ুদূষণ রোধ।

. বিশেষ পরিস্থিতিতে :

মায়ের খাদ্যতালিকায় প্রয়োজনীয় ক্যালরি ও আমিষ সরবরাহ

প্রতি ৩/৪ মাস পর পর শিশুকে কৃমিনাশক ওষুধ সেবন

ম্যালেরিয়া প্রতিরোধক কর্মসূচি ।

নবজাতক শিশু :

. সকল ক্ষেত্রে :

জন্মের পর পর দ্রুত সম্ভব (নিদেনপক্ষে এক ঘণ্টার মধ্যে) মাতৃদুগ্ধ পান

. বিশেষ ক্ষেত্রে :

নবজাতক বয়সে ভিটামিন এ ।

শিশু বয়সে :

. সকল ক্ষেত্রে :

০৬ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো এবং ন্যূনতম ০২ বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ চালিয়ে যাওয়া

শিশুর ২৮০তম দিবস থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি পরিপূরক খাবার যেমনখিঁচুড়ি, কাপচামচে খাওয়ানো

শিশুর সাথে খেলাধুলা, মানসিক বিকাশ সাধন

ডায়রিয়াকালীন ও ডায়রিয়া পরবর্তী সময়ে শিশুকে দৈনিক ১০২০ মি:গ্রাম করে ২ সপ্তাহের জন্য জিংক

ভিটামিন

আয়োডিনযুক্ত লবণ

শিশুকে হাতধোয়ার অভ্যেস ও পরিচ্ছন্ন জীবনযাপনে উৎসাহ দান

মারাত্মক অপুষ্টির জরুরি চিকিৎসা

শিশুকে সময়মতো ও নিয়মিত টিকাদান

শিশুর স্বাস্থ্যকার্ড ব্যবহার, প্রতিমাসে শিশুর ওজন নেওয়া।

. বিশেষ ক্ষেত্রে :পোকামাকড় প্রতিরোধী মশারির ব্যবহার।

লেখক : সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপজিটিভ পেরেন্টেটিং কেন গুরুত্বপূর্ণ
পরবর্তী নিবন্ধঅ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে