শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই নাট্যচর্চা করে অনন্য থিয়েটার

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১১ জানুয়ারি, ২০২২ at ৮:৩৩ পূর্বাহ্ণ

অনন্য থিয়েটার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৮ সালের ২ জানুয়ারি। ২৯ বংশাল রোড, পাথর ঘাটা, কোতোয়ালী, চট্টগ্রাম এই ঠিকানায় মূলত এটি প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘শিশু কিশোর নাট্য গোষ্ঠি’ নামে। শিশু কিশোররা যখন কৈশোর উত্তীর্ণ হয়ে যায় তখন সময়ের প্রয়োজনে এর নামকরণ হল অনন্য থিয়েটার। সূচনা লগ্ন থেকে অনন্য থিয়েটারের সভাপতি এডভোকেট সঞ্জীবন চৌধুরীর উৎসাহ উদ্দিপনা এবং নাট্যগুরু সমীরণ চৌধুরীর প্রশিক্ষণে দলের কর্মীরা দলনেতা সুচরিত চৌধুরীর নেতৃত্বে নাটক মঞ্চায়নসহ নানারকম সামাজিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এখন অবধি যারা এ সংগঠনের সাথে জড়িয়ে রয়েছেন তারা হলেন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনয় শিল্পী, নাট্যকার, নাট্য নির্দেশক সুশোভন চৌধুরী। নাট্যজন দীলিপ রুদ্র, তিলক চক্রবর্তী, মিঠু দাশ, অরূপ গাঙ্গুলী, ডলি দাশ প্রমুখ। নেপথ্য সহকারী হিসাবে আছেন দীপন রায় চৌধুরী, সুস্মিতা চৌধুরী, সুবর্ণা চৌধুরী, প্‌্রকৃত দাশ, দেবব্রত বণিক, শ্রেয়সী স্‌্েরাতস্বীনি, বিজয় মজুমদার, সদস্য শোয়াইবুর রহমান সাজিদ, জিয়াউর রহমান শৈশব, শ্রেয়াণ চৌধুরী, ঋষাণ চৌধুরীসহ দলের নিয়মিত সদস্য ১৫ জন, অনিয়মিত সদস্য ১৮ জন।
অনন্য থিয়েটার এ পর্যন্ত মোট ৩৬টি নাটকের ৯৮৭টি মঞ্চায়ন সম্পন্ন করেছে। তাদের উল্লেখযোগ্য মঞ্চ নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে আবার নন্দিনী, মহাকাল, জন্মভূমি, হাউজ টু নো লেট, চাই হৃদয় চাই, ভূত ও ভবিষ্যৎ এবং বিশ্বরূপের সন্ধানে। পথ নাটকের মধ্যে উলেল্লখযোগ্য হল বিবিসাব, বিজয়ী বাঙালি, বাংলাদেশের ঢোল, নেই মানুষের দেশে, বীরকন্যা, ফেরারী নিশান ও চোর-চোর। অনন্য থিয়েটারের নতুন মঞ্চ নাটক সাহিত্যিক অধ্যাপক চৌধুরী জহুরুল হকের ‘চিঠি’ এবং সুচরিত চৌধুরী রচিত মহাভারতের কাহিনী নিয়ে নাটক ‘দ্রোণাচার্য’। এছাড়া পথ নাটক হিসাবে সর্বশেষ সংযোজন সুচরিত চৌধুরী রচিত, সুশোভন চৌধুরী নির্দেশিত ‘গুজবে গজব’।
অনন্য থিয়েটার নাটক নিয়ে অনেক পরীক্ষা নিরিক্ষার ভিতর দিয়ে তাদের যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। মহাভারতের কাহিনী নিয়ে ‘মহাকাল’ মঞ্চায়িত হয় ১৯৯০ সনে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রক্ত করবী নাটকের সমান্তরাল ‘আবার নন্দিনী’ মঞ্চে আসে ২০০১ সনে। ১৯৯২ সনে ‘বিজয়ী বাঙালি’ নাটকের কোরিওগ্রাফীতে কাপড়ের বহুমাত্রিক ব্যবহার, ২০১০ সনে ধারাবাহিক মঞ্চ নাটক ‘জীবন যেমন’, ২০০৫ সনে নীতিনাট্য চোর- চোর এবং একাধিক অনুনাটক ও বিভিন্ন গল্প-উপন্যাসের নাট্যরূপ প্রদর্শনের মাধ্যমে অনন্য থিয়েটার তাদের শিল্পীত চর্চা অব্যাহত রেখেছে। এছাড়াও অনন্য থিয়েটার তিনটি একক নাটক মঞ্চায়ন করে। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামশুল হকের ‘নুরুলদীনের সারাজীবন’ অবলম্বনে ‘বিদ্রোহী নুরুলদীন’, সুচরিত চৌধুরী রচিত ও নির্দেশিত ‘কেউ কথা রাখেনি’ ও ‘অন্তহীন’।
অনন্য থিয়েটার নাটকের পাশাপাশি সমাজ সচেতনতামূলক কাজেও নিবেদিত। বন্যার্ত, শীতার্ত কিংবা সুনামি আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে বার বার। ২০০৫ সালে ২৭ বছর পূর্তিতে সংগঠনটি তাদের নাট্যোৎসবের পরিবর্তে একটি অসহায় মেয়ের বিয়ে দিয়ে তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রমাণ রাখে। অনন্য থিয়েটারের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে নাট্যবিষয়ক গ্রন্থাবলী সংরক্ষনের জন্যে ‘থিয়েটার পাঠাগার প্রতিষ্ঠা, নাট্যজন সম্মাননা প্রদান, নাট্যোৎসবের আয়োজন, অভিনয় বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও ‘সারাদেশের পথ নাটক’ নামে বিভিন্ন নাট্যকারের পথ নাটক সংগ্রহ ও প্রকাশনা।
অনন্য থিয়েটার মনে করে দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই শিল্পচর্চা, শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই নাট্যচর্চা। আমাদের যা কিছু করার করতে চাই মঞ্চে, যা কিছু বলার বলতে চাই নাটকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলাইসেন্স ছাড়া কেক তৈরি, এক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধশুভেচ্ছা সফর শেষে ফিরে গেল জাপানের যুদ্ধজাহাজ