বাংলাদেশে শিল্প সংস্কৃতি চর্চার যে সুকুমার জগৎ তার অন্যতম রূপকার শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। বাংলাদেশের চিত্রশিল্পে বিরলদৃষ্ট অবদান রেখেছেন তিনি। প্রগতিশীল সংস্কৃতি চর্চায় সদা সক্রিয় কাইয়ুম চৌধুরী যুক্ত ছিলেন সাংবাদিকতা ও প্রকাশনা শিল্পের সাথে। বাংলাদেশে বইয়ের প্রচ্ছদে পালাবদলের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনন্য। আজ শিল্পীর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী।
কাইয়ুম চৌধুরীর জন্ম ১৯৩২ সালের ৯ মার্চ ফেনীতে। বাবা আবদুল কুদ্দুস চৌধুরী ছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা। চাকরিতে বাবার বদলির সুবাদে শৈশবে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরেছেন তিনি। ছবি আঁকার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের কাছ থেকে। আমৃত্যু সেই প্রেরণা লালন করেছেন, তার বিপুল প্রকাশ ঘটিয়েছেন প্রাণের তাগিদে। ১৯৫৪ সালে কাইয়ুম চৌধুরী গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অব আর্টস থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন। চারুকলা ইনস্টিটিউটের পথিকৃৎ শিল্পীদের অন্যতম ছিলেন তিনি। তাঁর ছবি আঁকার বিশাল জগতে সদাই জাগ্রত ছিল বাংলাদেশ। ছবি আঁকতেন তেল রং, জল রং, পেন্সিল এবং কালি ও কলমে। বইয়ের প্রচ্ছদ, অলংকরণ, দৈনিক পত্রিকার ব্যানার হেডিং, মাস্টার হেড সহ বিভিন্ন সাময়িকীর অলংকরণে তাঁর ভূমিকা অনন্য। অবজারভার, প্রথম আলো, সচিত্র সন্ধানী, সন্ধানী প্রকাশনী প্রভৃতির সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় চারুকারু শিল্পী সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
১৯৬০ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ২৯ বার শিল্পকলা একাডেমি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন কাইয়ুম চৌধুরী। ১৯৭৫ সালে ন্যাশনাল বুক সেন্টার আয়োজিত প্রচ্ছদ প্রদর্শনীতে পেয়েছেন স্বর্ণপদক। এছাড়াও তিনি সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, সুফিয়া কামাল পদক, আলতাফ মাহমুদ পদক সহ বিভিন্ন পুরস্কার ও পদক পেয়েছেন। ছিলেন ধ্রুপদী গানের একনিষ্ঠ ভক্ত। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত একাত্ম ছিলেন শিল্পের সাথে। ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসবে বক্তব্য রাখার এক পর্যায়ে হঠাৎ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী।