শিল্পী ও ভাস্কর হামিদুজ্জামানের ইন্তেকাল

| সোমবার , ২১ জুলাই, ২০২৫ at ১০:৪৭ পূর্বাহ্ণ

প্রথিতযশা শিল্পী ও ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান আর নেই। গতকাল সকাল ১০টা ৭ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহেরাজেউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে হামিদুজ্জামান খান ২০০৬ সালে একুশে পদক লাভ করেন। ২০২২ সালে বাংলা একাডেমি ফেলো নির্বাচিত হন। প্রখ্যাত এই শিল্পীর একক প্রদর্শনী হয়েছে ৪৭টি। হামিদুজ্জামান খানের সহধর্মিণী ও চিত্রশিল্পী আইভি জামান জানান, গত ১৭ জুলাই তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখান থেকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার পর আজ সকালে তিনি মারা যান। খবর বাসসের।

সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য গতকাল রোববার বিকেল আড়াইটার দিকে হামিদুজ্জামান খানের মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে আনা হয়। এরপর আসরের নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

বিকেল পৌনে ৪টায় যখন এই শিল্পীর মরদেহ চারুকলা প্রাঙ্গণে আনা হয়, চারদিকে তখন অশ্রুজলে বেদনাবিধূর পরিবেশ। কেউ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান, আবার কেউবা নীরব দাঁড়িয়ে থাকেন মরদেহের পাশে। আড্ডাআলাপেও হামিদুজ্জামান খানের বর্ণাঢ্য শিল্পী জীবনের নানা প্রসঙ্গ উঠে আসে। রাতে হামিদুজ্জামান খানের মরদেহ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদির সহশ্রামে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই শায়িত হবেন তিনি।

হামিদুজ্জামান খান ১৯৪৬ সালের ১৬ মার্চ কিশোরগঞ্জের সহশ্রাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশ কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটস (বর্তমান চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৭০ সালে চারুকলায় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। হামিদুজ্জামান খানের স্মারক ভাস্কর্যগুলো তাকে বাঙালির হৃদয়ে চিরদিন অমর করে রাখবে। আশুগঞ্জ সার কারখানায় ‘জাগ্রত বাংলা’, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সংশপ্তক’ এবং ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে ‘বিজয় কেতন’ তার বিখ্যাত কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। ভাস্কর্যের পাশাপাশি তিনি জলরং, তেলরং, অ্যাক্রিলিক এবং স্কেচ মাধ্যমে সমান দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তার ভাস্কর্যে পাখির বিষয়টি ছিল অত্যন্ত প্রিয়। ঢাকার বুকে ব্রোঞ্জ ও ইস্পাতের তৈরি বেশ কিছু পাখির ভাস্কর্য শিল্প জগতে তার স্বাতন্ত্র্যের সাক্ষ্য বহন করে। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্মের মধ্যে রয়েছে মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকে ‘ইউনিটি’, বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ‘ফ্রিডম’, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্বাধীনতা চিরন্তন’ এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশনে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিউ মার্কেট মোড়ে
পরবর্তী নিবন্ধশহীদ কল্যাণ সেল করছে এনসিপি