প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মুখে সবকিছুর মতো স্থবির ছিল চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনও। এ অবস্থায় প্রায় নয় মাস বন্ধ ছিল সংস্কৃতির সূতিকাগার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, চট্টগ্রাম। সীমিত পরিসরে হলেও গতকাল থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে শিল্পকলা একাডেমির দুটি মিলনায়তন। বিকেল থেকে তাই শিল্পকলা একাডেমি এলাকা জুড়ে নেমে আসে আনন্দের ফল্গুধারা। প্রাণের উচ্ছ্বাস তৈরি হয় সমগ্র একাডেমি জুড়ে। সবমিলিয়ে শিল্পী ও দর্শকদের কোলাহলে ছুটির দিনের সন্ধ্যাটা মুখরিত ছিল শিল্পের আলোয়। গতকাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সম্মিলিত আবৃত্তি জোট, চট্টগ্রামের আয়োজনে গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় কথামালা ও আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘পিতার গৌরবগাঁথা’ অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘদিন পরে অনুষ্ঠিত এ আয়োজন দর্শক শ্রোতাদের মাঝে ভিন্ন এক ভালোলাগার সৃষ্টি করে।
চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাট্য ব্যক্তিত্ব সাইফুল আলম বাবু আজাদীকে বলেন, নীতিমালা মেনে সীমিত পরিসরে এখন থেকে খোলা থাকবে শিল্পকলার মিলনায়তনগুলো। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো চাইলে প্রতি সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত নীতিমালা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার কারণে গতকাল শিল্পকলা একাডেমির মূল গেইট বন্ধ রেখে শুধুমাত্র পকেট গেইট খোলা রাখা হয়। গেইটের সামনে একাডেমির দুই নিরাপত্তা প্রহরী ভেতরে প্রবেশের আগে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি পরীক্ষা করে দেখছিলেন। অনুষ্ঠানে আসা শিল্পী ও দর্শক শ্রোতা ব্যতীত অন্য কারো ভেতরে প্রবেশের সুযোগ হয়নি। একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে তাই জমেনি আড্ডা। কিন্তু তাতে কি আর প্রাণস্পন্দন থেমে থাকে?
একাডেমির সামনে রাস্তার দুই পাশে তাই জমে উঠে আড্ডা। ছোট ছোট জটলার সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছিল। সম্মিলিত আবৃত্তি জোট, চট্টগ্রামের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন আবৃত্তি সংগঠনের কর্মীদের দেখে মনে হচ্ছিল, করোনার আগ্রাসন থেকে মুক্তির স্বাদ দারুণভাবে উপভোগ করছিলেন তারা। শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ তাদের অনেক দিনের চেনা, এখানে কত শত আয়োজনে অংশ নিয়েছে তারা, তবু কাল তাদের দেখে মনে হচ্ছিল, যেন প্রথম বারের মতো এসেছেন। কেউ তুলছেন সেলফি, কেউ কেউ উন্মুক্ত মঞ্চে উঠে নস্টালজিক হয়ে পড়ছিলেন। নাটকের কোন সংলাপ বলছিলেন অভিনয়ের ভঙ্গিতে কেউ আবার। আর মোবাইল ফোনে ধারণ করছিলেন সে দৃশ্য সংগঠনের অন্য কেউ। ভার্চ্যুয়াল জগত ছেড়ে মিলনায়তনের অনুষ্ঠান যে অনেক বেশি উপভোগ্য, সেটাই যেন প্রমাণ করেছে কাল অনুষ্ঠান উপলক্ষে আগত শিল্পী শ্রোতা দর্শকদের উপস্থিতি। খুব দ্রুতই শিল্পকলা একাডেমিতে ফের প্রাণের উচ্ছ্বাস ফিরে আসবে বলেই মনে করছেন সবাই।
প্রসঙ্গত: চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে দুটি মিলনায়তন আছে। এর মধ্যে বড়টির আসন সংখ্যা ২৪০ টি। সেখানে দূরত্ব বজায় রেখে ৮০টি আসন রাখা হয়েছিল। এছাড়া ছোট মিলনায়তনের আসন সংখ্যা ১১০টি। সেখানে ৫০টি আসনে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি শিল্পকলা একাডেমিতে আগত দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে একাডেমির বিভিন্ন স্থানে ব্যানার ও পোস্টার লাগানো হয়েছে।