বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল ইতিহাস রচনা করে এসেছে মাত্র কদিন হলো। সে আনন্দের রেশ কাটতে না কাটতে আরো একটি মিশন শুরু হচ্ছে বাংলার নারী ফুটবলারদের। আজ থেকে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় শুরু হচ্ছে সাফ অনূর্ধ্ব–২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ। স্বাগতিক বাংলাদেশের সঙ্গে টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটান। তিন প্রতিপক্ষই বাংলাদেশকে সমীহ করছে। আর এই টুর্নামেন্টকে ভবিষ্যতের খেলোয়াড় গড়ে তোলার সুযোগ হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশের কোচ পিটার বাটলার। আগেই দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলে নিজেদের একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করে ফেলেছে বাংলাদেশ। টানা দুটি সাফ শিরোপা জিতেছে লাল–সবুজের প্রতিনিধিরা। এছাড়া বয়সভিত্তিক সাফের প্রতিটি টুর্নামেন্টেই শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে তারা। তাই নিজেদের মাঠে এবারের সাফ অনূর্ধ্ব–২০ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে ফেবারিট হিসেবেই মাঠে নামছে বাংলাদেশ। তার উপর এবারের আসরে নেই ভারত। তাই বাংলাদেশের জন্য পথটা অনেকটাই পরিষ্কার হিসেবে ধরে নেওয়া হচ্ছে। প্রথম দিনেই মাঠে নামছে চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়া চারটি দলই। যেখানে বিকেল তিনটায় প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে শ্রীলংকা এবং স্বাগতিক বাংলাদেশ। সন্ধ্যা সাত টায় দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে নেপাল এবং ভুটান।
গতকাল রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে চার দলের কোচ ও অধিনায়কদের নিয়ে আয়োজিত হয় আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন। সেখানে সবাইই বাংলাদেশ দলকে শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে মনে করছেন। ভুটানের কোচ থানকা মায়া ঘালি সম্মেলনের শুরুতেই বাংলাদেশকে এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়ার জন্য শুভেচ্ছা জানান। ঢাকায় আসা ভুটান দলে থাকা প্রতিটি খেলোয়াড়ই দেশের নারী ফুটবল লিগে অংশ নিচ্ছেন। দলটির অধিনায়ক শেদু তেশরিং বলেন বাংলাদেশের মারিয়া মান্ডার সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার। সে খুবই গতিশীল খেলোয়াড়। আমরা এখানে নিজেদের খেলা খেলতে এসেছি এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চাই। কোচ থানকা মায়াও বলেন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যদের সঙ্গে খেলতে আমাদের পরিবারের মতোই মনে হয়। বাংলাদেশ শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। তাদের বিপক্ষে খেলা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলেই মনে করছি।
লঙ্কান কোচ শ্রীনাথা কুমারা সরাসরিই স্বীকার করেন টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট বাংলাদেশ। কোচ কুমারা বলেন সত্যি বলতে, বাংলাদেশের বিপক্ষে আমরা আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে পারব না। আমাদের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই অনূর্ধ্ব–১৮ বয়সের। আমরা এখানে মূলত অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এসেছি। নেপাল এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে দুর্দান্ত লড়াই করে টাইব্রেকারে হেরে মূল পর্বে খেলতে পারেনি। তারা সিনিয়র দলের কাউকে অনূর্ধ্ব–২০ দলে রাখেনি। কোচ প্রসাদ গুরুং বলেন এই দলের সবাই জুনিয়র। এখান থেকে তারা জাতীয় দলে খেলার মতো প্রস্তুতি নিয়ে যাবে। তিনিও বলেন বাংলাদেশ পরিষ্কার ফেভারিট। তবে আমরাও শিরোপার জন্য লড়ব। আমাদের প্রস্তুতি ভালো হয়েছে। এবার ম্যাচগুলো ঘাসের মাঠে হবে যা আগের কমলাপুরের কৃত্রিম টার্ফ থেকে আলাদা।
বাংলাদেশ দলের কোচ পিটার বাটলার এই টুর্নামেন্টে ভবিষ্যতের খেলোয়াড় গড়ার সুযোগ দেখছেন। সমপ্রতি এশিয়ান কাপের মূল পর্ব নিশ্চিত করা দলের অনেকেই রয়েছেন এই স্কোয়াডে। বাটলার বলেন সত্যি বলতে প্রস্তুতিটা কিছুটা ব্যস্ততাময় ছিল। একসঙ্গে তিনটি প্রোগ্রাম চালাতে হচ্ছে। অনূর্ধ্ব–১৭, অনূর্ধ্ব–২০ এবং সিনিয়র জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে একটি মিশ্রণ গঠন করেছি। মিয়ানমার থেকে ফেরার পর আমরা মূলত খেলোয়াড়দের পা মাটিতে রাখার এবং বিনয়ী থাকার বিষয়ে কাজ করেছি। শৃঙ্খলা ও মনোযোগ ধরে রাখা এই টুর্নামেন্টের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার বলেন, আমাদের প্রস্তুতিও ভালো হয়েছে। যদিও সময় খুব বেশি পাইনি। কারণ আমরা মিয়ানমারে এশিয়ান কাপ বাছাই খেলতে গিয়েছিলাম। তারপরও সকলে একসঙ্গে অনুশীলন করেছি। ইনশাআল্লাহ আমরা ভালো করব।