শিব চতুর্দশীতে সীতাকুণ্ড ও মহেশখালীতে পুণ্যার্থীদের ভিড়

সীতাকুণ্ডের মেলায় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ

সীতাকুণ্ড ও মহেশখালী প্রতিনিধি | রবিবার , ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৭:৪৩ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথধাম ও মহেশখালীর আদিনাথ মন্দিরে গতকাল থেকে শিবচতুর্দশী পূজা ও মেলা শুরু হয়েছে। গতকাল মেলার শিবরাত্রীতে বিপুল সংখ্যক সনাতনী তীর্থযাত্রীর ঢল নামে চন্দ্রনাথধাম ও আদিনাথের মেলায়। তবে চন্দ্রনাথে ৩ হাজার দোকান ও আড়াইশ পুরোহিতের কাছ থেকে কোটি টাকার বেশি চাঁদা আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

চন্দ্রনাথধাম : সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জানান, পূর্ণ্য স্নানের মধ্যে দিয়ে চলছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম তীর্থস্থান সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথধামের ঐতিহ্যবাহী শিব চতুর্দর্শী মেলা। গতকাল মেলার শিবরাত্রীতে বিপুল সংখ্যক সনাতনী তীর্থযাত্রীর ঢল নামে এবং লোকে লোকারণ্যে হয়ে পড়ে সীতাকুণ্ডের মন্দির সড়ক হয়ে

চন্দ্রনাথ ধামের পাদদেশ। গতকাল শিবচতুর্দশী তিথি সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডে শুরু হয়েছে। আজ রোববার বিকাল ৪টা ৮ মিনিট পর্যন্ত থাকবে তিথি। গতকাল সকাল থেকে তীর্থযাত্রীরা ব্যসকুণ্ডে স্নান শেষে চন্দ্রনাথ মন্দিরের দিকে যাত্রা শুরু করেন। চন্দ্রনাথ মন্দিরে উঠতে অন্তত ৪০জন তীর্থযাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন।

তবে এ মেলাকে ঘিরে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। মেলায় আগত ৩ হাজার দোকান ও ব্যাসকুণ্ডের পাড়ে পূজাশ্রাদ্ধতর্পন করতে আসা ২৫০ পুরোহিতের কাছ থেকে জোর পূর্বক কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায়ের তথ্য মিলেছে। ভুক্তভোগীরা কমিটিকে টাকা দিতে হচ্ছে বলে জানালেও এভাবে টাকা আদায়ের কথা অস্বীকার করেছে মেলা ও তীর্থ কমিটির নেতৃবৃন্দ।

গতকাল মেলায় আগত তীর্থযাত্রী, দোকানী, পুরোহিত এবং সনাতনী বিভিন্ন ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবারের মেলাকে ঘিরে একটি মহল ব্যাপক চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়েছে। মেলায় আগত প্রতিটি দোকান থেকে সর্বনিম্ন ৫ হাজার থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। চাঁদাবাজির

হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না ব্যাসকুণ্ডের পাড়ে পূজা করতে আসা পুরোহিতরাও। প্রত্যেক পুরোহিতকে মেলায় তিন দিনের জন্য আড়াই হাত জায়গায় বসার অনুমতি দিয়ে আদায় করা হচ্ছে ২ হাজার টাকা করে। এভাবে ৩ হাজার দোকান ও আড়াইশ পুরোহিতের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে কোটি টাকারও বেশি। এছাড়া মেলার বিভিন্ন স্থানে তীর্থ যাত্রীদের জিম্মি করে ব্যাগ, স্বর্ণালংকার প্রভৃতি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে বলেও জানা গেছে।

ফরিদগঞ্জ থেকে আসা ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা শোভা রানী ও রামগতি থেকে আসা বৃদ্ধা মায়া রানী সূত্রধর বলেন, এখানে এসে পথে পথে শুধু হয়রানির শিকার হলাম। সবখানেই অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আমরা দিশেহারা। অন্যদিকে তীর্থযাত্রী মায়া রানী জানান, মেলায় এসে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন তিনি। এক যুবক হঠাৎ করে তার ব্যাগ টান দিয়ে জঙ্গলের দিকে চলে যায়।

এদিকে কেন এভাবে সর্বত্র অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে তা অনুসন্ধান করতে গিয়ে দোকানীদের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। চন্দ্রনাথ ধামের মোহন্ত আস্তানার পাশে বসা টাঙ্গাইলের ব্যবসায়ী দেব দুলাল জানান, মেলার তিন দিনের জন্য ছোট একটি দোকান করতে তাকে ১৫ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে।

মেলা কমিটির নাম দিয়ে কতিপয় যুবক জোরপূর্বক টাকা দিতে বাধ্য করেন। টাকা না দিলে দোকানের মালামালও তারা লুট করে। এভাবে অতিরিক্ত টাকা দিতে হওয়ায় তারাও ক্রেতাদের কাছে অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি করেন। ব্যাসকুণ্ডের পাড়ে বসা পুরোহিত নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে আসা বিনয় ভূষণ

চক্রবর্তী ও চাঁদপুরের কচুয়া থেকে আসা শুভ চক্রবর্তী জানান, কমিটির নামে তাদের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। ফলে তাদেরও ভক্তদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে হচ্ছে। এখানে অন্তত আড়াইশ পুরোহিত এভাবে চাঁদা দিচ্ছেন বলে জানান তারা।

এদিকে মেলা থেকে অর্ধ কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় হলেও এসবের দায় নিতে রাজি নয় মেলা ও স্রাইন কমিটি। মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা বলেন, আমরা কোনো টাকা তুলি না। দোকানপাট বা অন্যান্য ইজারার টাকা তোলে স্রাইন (তীর্থ কমিটি)। তারা আমাদের মেলার খরচের জন্য মাত্র আড়াই লাখ টাকা দেন। আমাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মিথ্যা।

তীর্থ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট চন্দন দাস বলেন, পুরোহিতদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আমি গতবছরও প্রতিবাদ করেছি। কেন পুরোহিতরা পুজা করতে এসে চাঁদা দেবে? কিন্তু তবুও একটি মহল জোর করে চাঁদা আদায় করছে।

এদিকে দুপুরের দিকে চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ মেলাঙ্গন পরিদর্শনে আসেন। এ সময় স্থানীয় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে চাঁদাবাজির কারণে তীর্থযাত্রীরা হয়রানির শিকার হলে বদনাম আমাদেরও। তাই এসব বন্ধ করব আমরা। তিনি সীতাকুণ্ড থানার ওসিকে এসব চাঁদাবাজি বন্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।

আদিনাথ : মহেশখালী প্রতিনিধি জানান, মহেশখালীর ঐতিহ্যবাহী আদিনাথ মন্দিরে শিবচতুর্দশী পূজা ও মেলা শুরু হয়েছে। আদিনাথ মন্দিরে শিবদর্শন করার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাড়াও ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমারসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজারো তীর্থযাত্রীর সমাগম ঘটেছে। গতকাল স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ মন্দির পরিদর্শন করেন।

গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা থেকে শুরু হয়েছে শিবদর্শন। প্রচন্ড ভিড় এড়াতে শত শত পুণ্যার্থী দুপুর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে শিব লগ্নের জন্য।

এদিকে শিবচতুর্দশী পূজা ও আদিনাথ মেলাকে কেন্দ্র করে অত্যাধিক পূজারীর যাতায়াতের কারণে যাত্রীরা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে নৌ পারাপারে। যাত্রীদের অভিযোগ কঙবাজার ছয় নম্বর ঘাট থেকে মহেশখালী যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ স্পিডবোট নেই। ফলে ঘাটে শত শত যাত্রীকে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, উপজেলা প্রতিটি ইউনিয়নের চৌকিদার, আনসার সদস্যরা দূরদূরান্ত থেকে আসা তীর্থযাত্রীদের সেবা দেওয়ার জন্য পূঁজা ও মেলায় স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২১ ফেব্রুয়ারি যান চলাচলে সিএমপির নির্দেশনা
পরবর্তী নিবন্ধকবি ও কবিতার আনন্দ