‘গুরু মারা বিদ্যা’ প্রয়োগকারী বহু মামলার আসামি আকবর ওরফে ঢাকাইয়া আকবরকে লক্ষ্মীপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এক সময় সে ছিল চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের সহযোগী। একপর্যায়ে গুরু সাজ্জাদকে থোড়াই কেয়ার করে চাঁদা না দেয়ায় তার বাড়িতেই তাণ্ডব চালায় আকবর। শুধু তাই নয় সাজ্জাদের এক আত্মীয়কে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সাড়া না পেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুৎসিত রটনা ছড়ায় সে। পাশাপাশি সাজ্জাদের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজিতো আছেই। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ বায়েজিদ এলাকার বাসিন্দারা শেষ পর্যন্ত পুলিশের শরণাপন্ন হয়। বায়েজিদ থানার ওসি ফেরদৌস জাহানের নেতৃত্বে একটি টিম ফাঁদ পেতে গত মঙ্গলবার রাতে তাকে লক্ষীপুর থেকে গ্রেপ্তার করে।
ওসি মো. ফেরদৌস জাহান আজাদীকে বলেন, আকবর গত জুলাই মাসে লক্ষ্মীপুরে বাসা ভাড়া নেয়। মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে লক্ষ্মীপুরের শাকচর ইউনিয়নের জনৈক রাব্বির বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে বিল্ডিংয়ের ছাদে অবস্থিত প্লাস্টিকের পানির ট্যাংকের ভেতর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সময় আকবরের থেকে একটি রিভলবার ও একটি দেশীয় এলজি (আগ্নেয়াস্ত্র) উদ্ধার করা হয়। তাকে অনেকদিন ধরেই গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছিলাম। এর আগেও তাকে তিনবার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। সর্বশেষ ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর আকবর দীর্ঘ দু’বছর কারাবাস করে জামিনে বেরিয়ে আসে। মুক্ত হয়ে সে আবার আগের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য রাখার অপরাধে বায়েজিদ থানায় ৭টি, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, হাটহাজারী থানায় একটি সহ মোট ১০টি মামলা আছে।
পুলিশের তথ্যানুযায়ী বায়েজিদ বোস্তামী থানার চালিতাতলী পূর্ব মসজিদ জব্বার সওদাগর বাড়ির মোহাম্মদ মঞ্জুরের ছেলে আলী আকবর ওরফে ঢাকাইয়া আকবর। শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সহচর ছিল আকবর। নিজেও নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। মূলত সারোয়ার ওরফে বাবলা ও নুরুন নবী ওরফে ম্যাঙনের হাত ধরে অপরাধ জগতে প্রবেশ করে আকবর। সারোয়ার–ম্যাঙন নিজেরা বাহিনী তৈরি করে চাঁদাবাজি শুরু করলে সাজ্জাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। এই সুযোগে সাজ্জাদের কাছাকাছি চলে আসে আকবর।
ব্যবসায়ী, প্রবাসী ও ভবন মালিকদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে বিদেশে থাকা সাজ্জাদের কাছে পাঠাত আকবর। এরপর সাজ্জাদ ফোনে চাঁদা দাবি করতেন। টাকা না দিলে সহযোগীদের নিয়ে গুলি চালিয়ে ও পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে আতঙ্ক তৈরি করত আকবর।
২০০০ সালের চাঞ্চল্যকর এইট মার্ডার মামলার আসামি সাজ্জাদ দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে থেকে আকবরের মাধ্যমেই নগরীর চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। তার তোলা চাঁদার একটি অংশ বিদেশে পৌঁছে যেত সাজ্জাদের কাছে। পরে দেখা যায়, সাজ্জাদের ওপরই গুরুমারা বিদ্যার প্রয়োগ করে আকবর। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আকবরই বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন থেকে মোবাইল ফোনে চাঁদাবাজি করতো। এবং চাঁদা না দিলে, সে–ই হত্যার হুমকি দিতো।
পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাজ্জাদের দেশে ফেরার আশা ক্ষীণ দেখে আকবর সাজ্জাদের আসন দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠে। সাজ্জাদের বাড়িতে গিয়ে সম্প্রতি আকবর ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেওয়ায় পরে দলবল নিয়ে এসে সাজ্জাদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও গান পাউডার ছিটিয়ে আগুন দেয়। এ সময় ঘরে থাকা দেড় লাখ টাকা, এক লাখ ভারতীয় রুপি, সাড়ে সাত লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার ও দুটি দামি মোবাইল ফোন নিয়ে যায় তারা। এ সময় ওসমান আলীর স্ত্রী আনোয়ারা বেগম তাদের বাধা দিলে তাকেও মারধর করা হয়। এসব অভিযোগে বায়েজিদ বোস্তামি থানায় আকবরসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন সাজ্জাদের বড় ভাই ওসমান আলী। থানার ওসি ফেরদৌস জাহান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে চাঁদার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে হয়তো সাজ্জাদ ও আকবরের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। তাই গুরুর বাড়িতে আগুন দিয়েছে আকবর।