বেশ কিছুদিন আগে আমার গ্রামেবাড়ি গিয়েছিলাম। সেখানে আমার ভাইয়ের এক ছেলে আর আমার ছোট ছেলে একসাথেই পড়ে। ভাইয়ের ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম তোমাদের ক্লাস হচ্ছে নাকি! সে বলল করোনা দুর্যোগ আসার পর থেকে সাত মাস বিদ্যালয়ে কোন ক্লাস হচ্ছে না। শিক্ষক ও তাদের পড়াশোনার ব্যাপারে কোনো খোঁজখবর নিচ্ছে না, কিন্তু এদিকে শহরের বাচ্চাদের নিয়মিত অনলাইনে ক্লাস চলছে, পরীক্ষাও সময়মতো নিয়ে নেয়া হচ্ছে। যেখানে শহরের বাচ্চাদের সময়মত সিলেবাস শেষ হয়ে যাচ্ছে আর এদিকে গ্রামের বাচ্চাদের পড়াশোনার কোনো বালাই নেই। যদিওবা গ্রামে অনলাইনে ক্লাস শুরু হয় তাহলে হয়তো গুটিকয়েক বাচ্চা ক্লাস করতে পারবে। কারণ গ্রামে অনেকের ঘরে এনড্রয়েড মোবাইল নেই, যেখানে তারা দারিদ্র্যের সাথে যুদ্ধ করে খেয়েপড়ে বেঁচে আছে সেখানে দামি মোবাইল কোথায় থেকে কিনবে! আর ইন্টারনেটেরও একটা আলাদা খরচ আছে!
এই করোনা দুর্যোগের কারণে বিশেষ করে গ্রামের বাচ্চাদের পড়াশোনার বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে, তারা শহরের বাচ্চাদের থেকে অনেক অনেক বেশি পিছিয়ে পড়ে আছে। এমন অবস্থায় তাদের পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়ার আশংকা বেড়ে গেছে এবং যে সমস্ত মেয়েরা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম, নবম শ্রেণিতে পড়ে তাদের বাল্যবিবাহ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক গুণ বেড়ে গেছে তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কাছে অনুরোধ থাকবে অন্ততপক্ষে প্রতিদিন দশজন দশজন বাচ্চাকে নিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিদ্যালয় ক্লাস করানো যেতে পারে। নয়তো শিক্ষকরা তাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে তাদের বাড়িতে গিয়ে পড়াশোনার ব্যাপারে তদারকি করতে পারে, না হলে গ্রামের বাচ্চাদের পড়াশোনার বিশাল একটা ধস নামবে। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। বাংলাদেশে শহরের তুলনায় গ্রামের সংখ্যা বেশি। গ্রামের বাচ্চারা যদি পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ে তাহলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো ভেঙে পড়বে। তাই এখনই শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোন একটা ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।