মনোবিজ্ঞান হলো মন তথা আচরণের বিজ্ঞান। আচরণের মাধ্যমেই মানুষ তার মনের প্রকাশ ঘটায়। শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের একটি শাখায় শিশুর আচরণ নিয়ে আলোচনা করা হয়। আর শিক্ষকতা পেশায় শিশু মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান ও শিশুর আচরণ জানা জরুরি। বর্তমান সময়ে আমরা আধুনিক হচ্ছি, আর নগর সভ্যতার যান্ত্রিকতার যুগে আমরা ভোগবাদী জীবন বিলাস চর্চা করছি। আবার জীবনের তাগিদে অনেক মায়েরাই চাকরিজীবী। আর শিশু পালিত হয় অনেক সময় কোনো সাহায্যকারীর কাছে, দিনের বেশিরভাগ সময় কাটায় শুধু মোবাইল, ট্যাপ, ল্যাপটপের ভিতর। পড়াশুনা আর স্কুলের চারগণ্ডি ছাড়া অন্য কোথাও বিনোদনের তেমন কোনো সুযোগ থাকে না বেশিরভাগ শিশুরই। যার ফলে বর্তমান সময়ের শিশুরা খোলামাঠে খেলাধূলা করা, সমবয়সীদের সাথে মেশা, বইপড়া, কৈশোরের দুরন্তপনার সুযোগ এগুলো থেকে বঞ্চিত। এর ফলে শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, বুদ্ধির বিকাশ ও ভাষা আর কথা শেখা ও হয় বিলম্বিত, কারণ শিশুর শব্দভাণ্ডার বাড়ে না। এভাবে শিশুর সামাজিকীকরণ ও হয় বাধাগ্রস্ত। ফলশ্রুতিতে শিশু হয় মানসিক অবসাদগ্রস্ত, ও অতিমাত্রায় আত্মকেন্দ্রিক। কিন্তু আজকের শিশুই আগামী দিনের ভবিষ্যত। শিশুরা যদি এভাবে গণ্ডির ভিতর আর শিক্ষার নামে শুধু মোবাইল ল্যাপটপেই সময় কাটায়, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে হতে হবে অন্ধ, হতে হবে সুখ দুঃখের অনুভূতি বর্জিত কৃত্রিম রোবট। তাই বাবা মায়ের উচিত হবে শিশুকে অন্তত কিছু সময় দেওয়া, শিশুদের সাথে খেলা করা, বন্ধুর মত মেশা এবং শিশু যাতে সপ্তাহের নিদিষ্ট কোন দিনে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে সময় কাটাতে পারে সে সুযোগ আর পরিবেশ সৃষ্টি করা। এই চর্চায় পরিবারে যেমন বাবা– মা, বিদ্যালয়ে ও তেমন শিক্ষকের ভূমিকা রয়েছে। শিক্ষকদের উচিত শিশুদের সাথে সবসময় ইতিবাচক আচরণ করা, শিশুর ঝোঁক আর মানসিকতা বুঝে শিক্ষা দেওয়া। শিশুর কোমল মনে আঘাত বা ভয় পেতে পারে, এমন আচরণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ এমন আচরণ শিশুর মনে স্থায়ী দাগ কাটে এবং বিদ্যালয়ের প্রতি ভীতি আর বিদ্যালয় বিমুখ করে তোলে। শিক্ষকদের উচিত শিশু মনের কোমল মনোবৃত্তিকে প্রাধান্য দিয়ে, শিশুর সামাজিকীকরণে সহায়তা করা। তবেই শিশুর মানসিকতার উন্নয়ন ঘটবে, শিশু সৃজনশীল, আত্মপ্রত্যয়ী এবং অনন্য মানুষ হয়ে গড়ে উঠবে।