করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে আগামী ১৪ নভেম্বরের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া যায় কি না তা ভাবছে সরকার। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির কথায় এমন আভাস পাওয়া গেলেও কখন থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি খুলে দেওয়া যাবে তা এখনও অনিশ্চিত।
শিক্ষা বিষয়ক প্রতিবেদকদের একাংশের সংগঠন ‘বাংলাদেশ এডুকেশন রিপোর্টার্স ফোরাম’-এর অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের জরিপের ফল নিয়ে আজ বুধবার (১১ নভেম্বর) এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি একথা জানান। বিডিনিউজ
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমরা এ মাসের ১৪ তারিখ (১৪ নভেম্বর) পর্যন্ত (শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) বন্ধ রেখেছি। ১৫ তারিখ থেকে খুলবে কি না, নাকি এই ছুটিটি আরও বাড়বে, নাকি কোনো কোনো ক্লাসের জন্য আমরা সীমিত আকারে শুরু করতে পারব-এই সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে এখনও কাজ করছি। ১৪ তারিখের আগে চেষ্টা করব আপনাদেরকে (গণমাধ্যম) জানিয়ে দিতে কারণ ১৪ তারিখের আগে তো আমাদেরকে একটা সিদ্ধান্ত দিতেই হবে। কাল বা পরশুর মধ্যে আমাদের একটা সিদ্ধান্ত জানাতেই হবে।”
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ার পর গত ১৭ মার্চ থেকে বাংলাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। কওমি মাদ্রাসা বাদে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগামী ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা আছে। মহামারীর কারণে এবার বার্ষিক পরীক্ষাও হচ্ছে না।
আগামী বছরের এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে সীমিত পরিসরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হতে পারে বলে আগেই আভাস দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।
দীপু মনি বলেন, “সংকটের মধ্যেও আমরা পড়াশোনাকে চালিয়ে নিতে পেরেছি, চালিয়ে যাচ্ছি, অবশ্যই এটি আমাদের কোনো আদর্শ পরিস্থিতি নয়। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তার মধ্যে আমরা চেষ্টা করছি। এই চেষ্টাটি চালিয়ে যেতে হবে, এটিকে আরও কত ভালো করা যায়, কারণ করোনা কতদিনে যাবে, কতদিনে সত্যিকার অর্থে আমরা আসলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে পুরোপুরি খুলে দিতে পারব, সেই বিষয়গুলো কিন্তু এখনও বেশি অনিশ্চিত। সামনেই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা আছে, সেগুলো নিয়েও আমরা বিভিন্নভাবে ভাবছি, যে তাদেরকে কী করে তাদের পরীক্ষার আগে তাদের সিলেবাস কি করে পুরোপুরি শেষ করতে পারে, এসব নানান জিনিস আমরা ভাবছি।”
করোনাভাইরাস মহামারী মধ্যে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে চট্টগ্রামের ৪৯৬ জন, ঢাকার ৩৯৫ জন, বরিশালের ২০ জন, খুলনার ২৬ জন, ময়মনসিংহের ২৯ জন, রাজশাহীর ৮৫ জন, রংপুরের ৬৭ এবং সিলেট বিভাগের আট জন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নির্ধারিত প্রশ্ন করে উত্তর সংগ্রহ করে বাংলাদেশ এডুকেশন রিপোর্টার্স ফোরাম।
এরপর গণসাক্ষরতা অভিযান তাদের সেই তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে বলে অনুষ্ঠানে জানোনো হয়।
সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাধ্যমিকে ৪২ শতাংশ এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ৫৮ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রমে নিয়মিত অংশ নিচ্ছে। আর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক মিলে নিয়মিত অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে ৬৩ শতাংশ।
ভিডিও মাধ্যমে শিক্ষা নিয়েছে ৬১ শতাংশ। ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে শিক্ষা নিচ্ছে ৩৫ শতাংশ। অন্য মাধ্যমে (ইমেইল, হোয়াটসআ্যাপ, ভাইবার ইত্যাদি গ্রুপে) শিক্ষা নিচ্ছে ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী।
জরিপের তথ্যানুযায়ী, ইন্টারনেট ব্যয় ৫০১ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর। আর ইন্টারনেট ব্যয় ৭০ টাকা থেকে পাঁচশ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে ১০ শতাংশ শিক্ষার্থীর।
জরিপে অংশ নেওয়া ৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন আছে বলে জানিয়েছে। আর শিক্ষকরা ৬৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। জরিপে অংশ নেওয়া বিভাগীয় শহরের ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর বাড়িতে টেলিভিশন আছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী এবং আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মোস্তফা মল্লিক ও সাধারণ সম্পাদক এস এম আব্বাস সভায় বক্তব্য দেন।