শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসা সেবা

প্রফেসর এ. এন. এম. ইউসুফ চৌধুরী | বৃহস্পতিবার , ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

মানুষ সৃষ্টির সেরা আশরাফুল মাখলুকাত। মহান আল্লাহ অত্যন্ত দয়া ও করুণা দিয়ে মানুষকে তার শ্রেষ্ঠত্ব অটুট রাখার জন্য ভাষাজ্ঞান ও কলমের দ্বারা শিখন, পঠন ও লিখন কার্য্য সম্পাদনের সক্ষমতা দান করেন। শিক্ষাজাতির মেরুদণ্ড। মেরুদণ্ড ছাড়া যেমন কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না অনুরূপ ভাবে শিক্ষা ছাড়া কোনো আদম সন্তান পরিপূর্ণরূপে গড়ে উঠতে পারে না। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত ও অগ্রসর। শিক্ষা কার্যক্রমকে সচল ও অর্থবহ করে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষালয় তথা, স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাণ হচ্ছে শিক্ষার্থীবৃন্দ। এই কচিমনের শিক্ষার্থীদের জ্ঞান চক্ষু উন্মোচিত করার ক্ষেত্রে যারা অগ্রণী ভুমিকা পালন করে থাকেন তারা হচ্ছেন পিতৃ ও মাতৃতুল্য শিক্ষক শিক্ষিকাবৃন্দ। বাংলাদেশে প্রাক প্রাথমিক তথা কেজি, প্রাথমিক, নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক(সম্মান) ও মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ রয়েছে শহর থেকে মফস্বলে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক শিক্ষা মন্ত্রণালয় জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ডও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুুরী কমিশন কর্তৃক প্রণীত সিলেবাস অনুসরণ করে পাঠদান করে থাকে। বাংলাদেশ বিশ্বের অতীব ঘনবসতিপূর্ণ জনসংখ্যা অধ্যুষিত একটি দেশ। এখানে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ধারন ক্ষমতার বেশি শিক্ষার্থী। এ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা তাদের দৈনন্দিন পাঠ শেষ করে স্ব স্ব বাসস্থানে ফিরে যায়। দেশে হাতে গোনা কিছু আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং আমাদের ক্যাডেট কলেজগুলো আবাসিক বিধায় শিক্ষার্থীদের কল্যাণে চিকিৎসক নিয়োজিত আছে। এ ছাড়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীদের আধিক্য হেতু সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোর মধ্যে শিক্ষকদের সমমর্যাদায় চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয় এবং দিবা নৈশ শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা সেবা পেয়ে থাকে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে বাংলাদেশের সরকারী কলেজ ও সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে সরকারিভাবে চিকিৎসক নিয়োগের সংস্কৃতি গড়ে উঠেনি। সাধারণত বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার সময় একজন নাম মাত্র খণ্ডকালীন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়, বাস্তবে তাকে পাওয়া যায় না। আমার সরকারি কলেজে শিক্ষকতার চার দশক অভিজ্ঞতার আলোকে সদাশয় সরকারকে বিশেষ করে জননেত্রী, দেশনেত্রী, মানবতাবাদী, জনদরদী, উন্নয়নের কাণ্ডারী, সংস্কারক, বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন বাংলাদেশের সরকারি স্কুল ও কলেজের লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সেবার ব্যাপারে কমপক্ষে প্রতিটি সরকারি স্কুল ও সরকারি কলেজে একজন করে বি.সি.এস স্বাস্থ্য ক্যাডারের চিকিৎসক নিয়োগের ব্যবস্থা করে অমর হয়ে থাকবেন। আমাদের বিভাগীয় শহরের কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ হাজার থেকে ৪০ হাজার পর্যন্ত রয়েছে। শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ১০০শত থেকে ২৫০শত জন, কিন্তু একজন বি.সি.এস স্বাস্থ্য ক্যাডারের চিকিৎসক প্রতিটি সরকারি স্কুল ও সরকারি কলেজে নিয়োগ দানের মাধ্যমে জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সেবার ব্যাপারে আপনার মহানুভবতার কার্যকর পদক্ষেপ জাতি প্রত্যাশা করছে। উল্লেখ্য বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন ইতিমধ্যে শুধু মাত্র স্বাস্থ্য ক্যাডারের জন্য ৪২ তম বি.সি.এস(বিশেষ) পরীক্ষার মাধ্যমে ৩২ হাজার প্রার্থী থেকে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে থেকে ৪০০০(চার হাজার) চিকিৎসককে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে এবং ১৯১৯ জন চিকিৎসককে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও পদস্বল্পতার জন্য সুপারিশ করেনি। তৎমধ্যে থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের চাহিদার প্রেক্ষিতে আরও ৫০০ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছেন। পদস্বল্পতার জন্য সুপারিশকৃত হয়নি এমন প্রায় ১৪০০ জন যোগ্য ও মেধাবী চিকিৎসকদের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি কলেজে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরূপ পদায়ন করে নবীন চিকিৎসকদের দেশ সেবার সুযোগদানে অবদান রাখবেন। এতে শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর একটি অংশ চিকিৎসা সেবার আওতায় আসবে এবং রোগমুক্ত স্বাস্থ্যবান জাতি হিসেবে বিকশিত হবার সুযোগ পাবে।
লেখক: ট্রেজারার, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভোরের সূর্যের আলোর মতো আজাদী
পরবর্তী নিবন্ধঠেকানো যেতে পারে হঠাৎ মৃত্যু