বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি আয়োজিত গৌতম বুদ্ধের ত্রি–স্মৃতি বিজড়িত বুদ্ধ পূর্ণিমা ও গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপদেষ্টা প্রফেসর ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার) বলেছেন, গুণীজনরা হচ্ছেন দেশ ও সমাজের অগ্রণী প্রদর্শক। আর শিক্ষার্থীরা হচ্ছেন সে পথের পথিক। উভয়ের সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি আজ যে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো তা সত্যিই অনুকরণীয়।
তিনি বলেন, শিক্ষা মানুষকে বিনয় করে। সকলের মধ্যে শিক্ষার ছোঁয়া পড়লে সমগ্র বাংলাদেশ পরিবর্তন হতে বেশি সময় লাগবে না। প্রকৃত শিক্ষা যে অর্জন করেছে সে কখনো অহংকারী হবে না। সে কখনো দাম্ভিক হবে না। একজন ছাত্র যদি শিক্ষক ও পরিবারের মধ্যে থেকে সঠিক শিক্ষা পায় সে ছাত্র কখনো দম্ভ দেখাবেনা সে বিনয়ী হবে। শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য করা যাবে না। শিক্ষা হচ্ছে প্রকৃত মানুষ হওয়ার প্রধান মাধ্যম। আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি হতে হবে আনন্দ মুখর। তিনি গতকাল শুক্রবার নগরীর কাজির দেউড়িস্থ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন উপলক্ষে বৈকালিক ভৈষজ্য সংঘদান, ধর্মসভা, গুণীজন সংবর্ধনা, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টিবৃন্দ ও কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ছিলেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন। শিক্ষা উপদেষ্টা প্রফেসর ড. সি আর আবরার বলেন, মহামতি গৌতম বুদ্ধ সুস্পষ্টভাবে জ্ঞান আহরণ ও মূল্যবোধ সৃষ্টির প্রতি গুরুত্বারোপ করেছিলেন। সেই আড়াই হাজার বছর আগে প্রচারিত গৌতম বুদ্ধের বাণী আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিফলন ঘটাতে পারলে প্রত্যেকের বাস্তবজীবন সফল ও সুন্দর হবে। তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি হতে হবে আনন্দ মুখর। যেখানে মানবিক মূল্যবোধ ধারণ করে সমাজে একজন ভালো মানুষ হওয়ার পথে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে। প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষা কখনো ভালো মানুষ সৃষ্টি করতে পারেনা।
তিন পর্বের অনুষ্ঠানে প্রথমে ধর্মীয় অনুষ্ঠান, দ্বিতীয় পর্বে গুণীজন ও বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়াম্যানসহ ট্রাস্টিদের সংবর্ধনা, তৃতীয় পর্বে কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা।
শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশ বেতার–টিভি শিল্পীরা। অনুষ্ঠানে আশির্বাণী প্রদান করেন বাংলাদেশী বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ ধর্মীয়গুরু ড. জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির। সভাপতিত্ব করেন উপসংঘরাজ শাসনভাস্কর শাসনপ্রিয় মহাস্থবির, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির চেয়ারম্যান অজিত রঞ্জন বড়ুয়া ও বৌদ্ধ সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান লায়ন আদর্শ কুমার বড়ুয়া।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, সকল ধর্ম ও গোত্রের ভেদাভেদ ভুলে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে সমাজ ও দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে। আমি চাই আমাদের কারো মধ্যে হানাহানি থাকবেনা বৈষম্য থাকবেনা সেভাবেই এই দেশকে আমরা সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় গড়ে তুলবো। তিনি বলেন এই শহরটা আমাদের সকলের এটিকে সুন্দর ও পরিচ্ছন্নতা রাখার দায়িত্ব নিজ উদ্যোগে পালন করতে হবে। বক্তব্য দেন, উপসংঘরাজ প্রিয়দর্শী মহাস্থবির, উপসংঘরাজ ধর্মদর্শী মহাস্থবির।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ গুণীদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। সংবর্ধনাপ্রাপ্তরা হলেন, ভাষাসংগ্রামী প্রতিভা মুৎসুদ্দী, ছড়াকার সুকুমার বড়ুয়া, সাহিত্যিক সুব্রত বড়ুয়া, গবেষক–অধ্যাপক বাদল বরণ বড়ুয়া, প্রফেসর ড. সুকোমল বড়ুয়া ও স্বপন কুমার চৌধুরী। সংবর্ধিত অতিথিরা হলেন, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান ভবেশ চাকমা, ডা. অজয় প্রকাশ চাকমা, মং হলা চিং, সুশীল চন্দ্র বড়ুয়া, রাজীব কান্তি বড়ুয়া, রুবেল বড়ুয়া ও অধ্যাপক ববি বড়ুয়া।
তিলোকাবংশ মহাস্থবির, ড. সৌমেন বড়ুয়া ও রুমিলা বড়ুয়ার সঞ্চালনায় গুণীজনদের পক্ষ থেকে অনুভূতি প্রকাশ করেন–বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. সুকোমল বড়ুয়া, স্বপন বড়ুয়া চৌধুরী। তিন পর্বের অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির যুগ্ম মহাসচিব অরুণ কুমার বড়ুয়া দেবু, বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রিটন কুমার বড়ুয়া ও উদযাপন পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী ইঞ্জিনিয়ার অসীম কুমার বড়ুয়া। বক্তব্য দেন, বসুমিত্র মহাস্থবির, প্রজ্ঞানন্দ মহাস্থবির, শাসনানন্দ মহাস্থবির, পরমানন্দ মহাস্থবির, শীলভদ্র মহাস্থবির, প্রজ্ঞাজ্যোতি মহাস্থবির, ড. ধর্মকীর্তি মহাস্থবির, শাসনশ্রী মহাস্থবির. ডবনয়পাল মহাস’বির, উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রোটারিয়ান সপু বড়ুয়া। বেতার–টিভি শিল্পী তাপস বড়ুয়ার পরিচালনায় উদ্বোধন সংগীত পরিবেশন করেন সহশিল্পী বৃন্দ। পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন সত্যপ্রিয় বড়ুয়া। বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বাংলাদেশের বৌদ্ধ সমিতির বার্ষিক প্রকাশনা সংগঠনের প্রকাশনা সম্পাদক অধ্যক্ষ প্রফেসর তুষার কান্তি বড়ুয়ার সম্পাদনায় ‘বিশ্বমৈত্রী’ প্রকাশিত হয়।
অনুষ্ঠানে লায়ন আদর্শ কুমার বড়ুয়া ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ববি বড়ুয়া শিক্ষা উপদেষ্টা প্রফেসর ড. চৌধুরী রফিকুল আবরারের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি অ্যান্ড বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাবৃত্তির চেক বিতরণ করা হয়।
