শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের দেহরক্ষী এএসআই সন্তু শীলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুল কবীরকে কনুই দিয়ে ধাক্কা মেরে আহত করার অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে তাকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে নগর পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এ অভিযোগের তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ কমিশনার আসিফ মহিউদ্দীনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় এ আদেশ দিয়েছেন বলে উপ পুলিশ কমিশনার (সদর) মো. আব্দুল ওয়ারীশ জানিয়েছেন। এএসআই সন্তু শীল সিএমপির বিশেষ শাখায় কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০১৮ সাল থেকে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের দেহরক্ষী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। জানতে চাইলে সিএমপির উপ কমিশনার (সদর) মো. আব্দুল ওয়ারীশ বলেন, প্রশাসনিক কারণে এএসআই সন্তু শীলকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগ তদন্তে এক সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কাউন্টার টেরোরিম ইউনিয়নের এডিসি আসিফ মহিউদ্দীন জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করে যত দ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন দাখিল করবেন। তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে জানা যায় গত ২০ এপ্রিল পাথরঘাটায় একটি অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন উপমন্ত্রী নওফেল। উপমন্ত্রীকে বহনকারী গাড়ির সামনে ছিল প্রটোকলের গাড়ি, এর আগে ছিল ওসি জাহিদুল কবীরের গাড়ি। পাথরঘাটা নজু মিয়া লেইনের মুখে গাড়ি থামার পর হেঁটে অনুষ্ঠানস্থলে যাচ্ছিলেন নওফেল। পেছনে ছিলেন দেহরক্ষী সন্তু। নওফেলের পাশে ছিলেন ওসি। হঠাৎ এএসআই সন্তু পেছন থেকে এগিয়ে বাম হাতের কনুই দিয়ে ওসিকে ধাক্কা দিয়ে নওফেলের পাশে চলে যান বলে অভিযোগে জানা যায়। ধাক্কা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওসি জাহিদুল দাঁড়িয়ে যান। তিনি উপমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ বিষয়ে অভিযোগ করলে ওসি জাহিদুল ও এএসআই সন্তুর মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। তখন নওফেল ওসিকে মঞ্চে যেতে বলেন। উপমন্ত্রী মঞ্চে ওঠার পর ওসি জাহিদুল সেখানে গিয়ে তাকে বিষয়টি খুলে বলেন। কনুইয়ের ধাক্কায় আঘাত পাওয়া হাতটিও তাকে দেখান ওসি। উপমন্ত্রী এ সময় ওসিকে এ বিষয়ে সিএমপি কমিশনারের কাছে অভিযোগ দিতে বলেন।
অনুষ্ঠান শেষে ওসি জাহিদুল কবীর চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন। এরপর থানায় গিয়ে এএসআই সন্তু শীলের বিরুদ্ধে অনলাইনে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে নথিভুক্ত হওয়া জিডিতে দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে এএসআই সন্তু শীলের ধাক্কায় আহত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন ওসি।
এরপর ওসি জাহিদুল কবীর সিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে গিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের কপি দেওয়া হয় সিএমপির বিশেষ শাখা ও প্রশাসনিক শাখার দুই উপ–কমিশনারকেও।
জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার ওসি জাহিদুল কবীর আজাদীকে বলেন, এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। আমি উপমন্ত্রী স্যারকে অবহিত করে কমিশনার স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। অভিযোগের অনুলিপি ডিসি হেডকোয়ার্টার এবং ডিসি সিটিএসবি স্যারকেও দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত ২০১৮ সালের নির্বাচনে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পাবার পর থেকেই এএসআই সন্তু শীল তার দেহরক্ষী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১৬ মে তার বিরুদ্ধে বাকলিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন তৎকালীন ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন। মাদক আইনের ছয়টি মামলার পরোয়ানাভুক্ত এক আসামিকে গ্রেপ্তার করায় তার পক্ষ নিয়ে ওসি নেজামের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলে জিডিতে উল্লেখ করেন ওসি নেজাম। ২০১৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের হাজারী লেইনে সোনা ব্যবসায়ী দোলন বিশ্বাস তার কাছ থেকে ১০২ ভরি সোনা ছিনতাইয়ের অভিযোগ এনে নগরীর কোতোয়ালী থানায় মামলা করেন। মামলা তদন্তের সময় বাদী এএসআই সন্তু শীলকে শনাক্ত করার পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল।