শিক্ষার মান বাড়াতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে

| মঙ্গলবার , ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

বলার অপেক্ষা রাখে না যে করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাখাতে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। বিকল্প উপায়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকলেও, সেসব ক্ষেত্রে নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা ছিল এবং আছে। সারা দেশে করোনার টিকা প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কখন এ মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসবে, সেদিকেই সবার দৃষ্টি। করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে টিকা নেওয়ার পাশাপাশি যথাযথ স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলতে হচ্ছে। আমরা এখন মহামারি নিয়ন্ত্রণের দিনক্ষণ গুনছি। এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ যে কোনো প্রতিষ্ঠানে যে কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের বেগ পেতে হচ্ছে। বলতে গেলে করোনা পরিস্থিতির কারণে পড়ালেখা তেমন হয়নি। সময়মতো পরীক্ষা নেওয়াও যায়নি। আবার সব বিষয়ে এবং শতভাগ নম্বরেও হয়নি পরীক্ষা। পরীক্ষা হওয়া না হওয়া নিয়ে নানা রকম অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর যখন পরীক্ষা হলো, তখনো করোনা সংক্রমণের ভয় ও শঙ্কাও ছিল। এমন পরিস্থিতিতেও এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে তাক লাগানো ফল করেছে আমাদের শিক্ষার্থীরা।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষায় ৮৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে এবার। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৩ হাজার ৭২০ জন। পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর এ সংখ্যা গত দশ বছরে সর্বোচ্চ। যদিও এইচএসসির এবারের ফল বোর্ডের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সর্বোচ্চ (অটোপাসের বছর বাদ দিয়ে) বলেও মনে করছেন শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্টরা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় এবারই (২০২১ সালে) পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে রেকর্ড গড়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। সারা দেশে গড়ে ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে এবার। যদিও হিসেবে দেশের গড় পাসের হারের তুলনায় চট্টগ্রামের পাসের হার প্রায় ৬ শতাংশ কম।
ফলাফল বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পাশের হার ও জিপিএ-৫ বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে মোটা দাগে দুটি কারণ আছে। এগুলো হলো-কঠিন বিষয়ে পরীক্ষা না নেওয়া এবং সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুসরণ করা। করোনা মহামারির কারণে দেড় বছর সরাসরি ক্লাস হয়নি। এ কারণে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা হয়। পাশাপাশি বিষয় সংখ্যাও কমানো হয়। বিজ্ঞান, মানবিক আর ব্যবসায় শিক্ষা-প্রতিটি বিভাগে তিনটি করে নৈর্বাচনিক বিষয়ে ছয়টি পত্রে পরীক্ষা হয়। ফলে ইংরেজি ও বাংলার মতো আবশ্যিক বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। সাধারণত উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পাশ-ফেলের হারে বড় ভূমিকা রাখে ইংরেজি। এছাড়া আইসিটি বিষয়েও পরীক্ষা হয়নি। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এ কঠিন বিষয়গুলোয় পরীক্ষা না হওয়ায় পাশের হার যেমন বেড়েছে, তেমনই জিপিএ-৫ বেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা রেখেছে।
লক্ষ করা যাচ্ছে, ফলাফল ভালো হলেও অনেক ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত মান অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাস্তব পরিস্থিতিও কিছুটা দায়ী বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। শিক্ষার মান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসাবে কাজ করে। শিক্ষার মান বাড়াতে যা যা করণীয়, সময়মতো প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
কী ধরনের শিক্ষা অর্জন করে শিক্ষার্থীরা বের হচ্ছেন, সেটার ওপর নির্ভর করছে তাঁরা ভবিষ্যতে কী ধরনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন। এখন মানসম্মত শিক্ষা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে মানসম্মত শিক্ষার দিকেও নজর দিতে হবে।
শিক্ষাবিদরা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গাতেই প্রাইভেট শিক্ষার খরচ বেশি। কিন্তু লক্ষ্য রাখতে হবে, সেটা যেন সম্পূর্ণভাবে বাণিজ্যিক না হয়ে যায়। এটাকে (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) শুধু লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যেন কেউ না দেখে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রচলিত শিক্ষা আজকের দিনে উপযুক্ত মানুষ তৈরি করে না। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় এমন অনেক বিষয় পড়ানো হয়, যার প্রয়োজন নেই। আবার বহু বিষয় প্রয়োজন, যা পড়ানো হয় না। তাঁরা মানবসম্পদকে কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, গত ৫০ বছরে শিক্ষার বিস্তার বেড়েছে, তবে মানের আশানুরূপ উন্নয়ন হয়নি। মানের দিকে আরও নজর দিতে হবে। শিক্ষার মানের সঙ্গে শিখন পদ্ধতি, পাঠ্যক্রম, পাঠ্যবই, শিক্ষক সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের মননশীলতা জাগিয়ে তুলতে না পারলে ফলসর্বস্ব শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে মানের উন্নয়ন ঘটবে না।
তবে সনদ সর্বস্ব শিক্ষা থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলেছেন শিক্ষাবিদরা। বলেছেন, গতানুগতিক চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে এসে শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনতে হবে। সংখ্যায় নয়, শিক্ষার গুণ ও মানের দিকে নজর দিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে