‘শিক্ষা আনে চেতনা, চেতনা আনে বিপ্লব আর বিপ্লব আনে মুক্তি’–এই কথারই প্রতিফলন ঘটেছে ৭১–এর মুক্তিযুদ্ধে। স্বৈরাচারী পাকিস্তানি শাসকের শোষণনীতি আঘাত করল শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর অন্তরে। এরা শঙ্ক্ষিত! কী করে জুলুম নীতির কবল থেকে মা, মাটি ও মাতৃভূমিকে রক্ষা করা যায়। শিক্ষিত জনগণই উপলদ্ধি করতে পারে দেশের ভালো–মন্দ। নিজের মান–সম্ভ্রম বিপন্ন–এটা বোঝার পরেই অধিকার প্রতিষ্ঠার অনুভূতিটাই ১৯৭১–এ বিপ্লবে রূপ নেয়। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিকামী বাঙালি দামাল ছেলেরা গঠন করল মুক্তিবাহিনী। এই বাহিনীই সেদিন দুর্বার গতিতে সারা দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাক হানাদার বাহিনীর ওপর।
বাঙালি বীরের জাতি। এরা গর্জে উঠলে দমিয়ে রাখা যায় না। বুঝে গেল পাক শাসকরা। পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে পিছু হঠতে বাধ্য হলো।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিপ্লবের ধারা বেগবান হলো। বিপ্লবের মাধ্যমে অর্জিত হলো স্বাধীনতা। দুঃখজনক হলেও সত্য বাঙালি জাতি আজও স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল পায়নি। শুধু বদল হয়েছে পতাকার। পায়নি অর্থনৈতিক মুক্তি। দুঃখ লাগে যখন দেখি নিরন্ন মানুষ দুই বেলা পেট ভরে খেতে পারছেন না। চারদিকে দুর্নীতির কালো ছায়া। মানুষ পাচ্ছে না তার জন্মগত অধিকার।
দুই মুঠো ভাতের জন্য পরিশ্রম করছে শিশু শ্রমিক; যার যাওয়ার কথা ছিল স্কুলে। এসব যখন দেখি ভুলে যাই মুক্তিযুদ্ধের কথা। মনে হয় এভাবে বলি, এবারের সংগ্রাম মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম। স্বাধীনতার ৫১ বছর পার হয়ে গেলেও বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তি হয়নি। তাই মাঝে মাঝে মনে হয়, অধিকার আদায় ও মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য আর একটি যুদ্ধ প্রয়োজন।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জনের দিন। আত্মত্যাগের মাধ্যমে যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তা হচ্ছে রাজনৈতিক স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তখনই সাফল্যে উদ্ভাসিত হবে, যখন রাজনৈতিক স্বাধীনতার সাথে সামাজিক শৃঙ্খলা, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক মুক্তি পাবে ১৬ কোটি মানুষ। একমুঠো ভাতের জন্য শুনব না আর কারো আর্তনাদ। দেখব না সন্তানহারা কোনো মায়ের আহাজারি।
একটি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অত্যাচারী পাকিস্তানি শাসক শ্রেণিকে পরাজিত করে আমরা পেয়েছিলাম লাল–সবুজের পতাকা ও স্বাধীনতা। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সূর্য সন্তানদের প্রতি রইল লাখো সালাম।