বাংলা ভাষা আন্দোলনে সকলের সংশ্লিষ্টতা থাকলেও মূলত এই আন্দোলনকে বেগবান করেছিল ছাত্র-ছাত্রীরা। তারাই আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছিল। ছাত্রদের ঐক্যের শক্তি ছিল ইস্পাতের মতো। আর এটা একদিনে ঘটেনি। ছাত্রছাত্রীরাই এই মেলবন্ধন ঘটিয়েছে। শুধু ঢাকা নয়, চট্টগ্রামসহ পূর্ব-বাংলার বিভিন্নস্থানে ছাত্রদের বিক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে।
আন্দোলনে সক্রিয় বা সংশ্লিষ্ট পুরান ঢাকার তরুণদের মধ্যে একুশে সময়পর্বের উল্লেখযোগ্য গোলাম মর্তুজা বা ফজলুল হক এবং নারিন্দার হালিম ও আশরাফের মতো একাধিক কর্মী। তারা সবাই প্রগতিশীল ঘরানার। একুশের আন্দোলনে ইতিবাচক ভূমিকার ফলে তরুণদের নিজ নিজ মহল্লায় কাজ করা সহজ হয়ে ওঠে। বুড়িগঙ্গার তীরে মিটফোর্ড মেডিকেলের ছাত্রছাত্রীরা তখন সংক্ষিপ্ত কোর্সে ডিগ্রি শিক্ষার সুবিধাসহ নানা দাবিতে ধর্মঘট পালন করছে। তা সত্ত্বেও সেখানকার নেতৃবৃন্দ একুশের ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত।
যেমন মাহবুব, মুজিবর, জাফর প্রমুখ ছাত্রনেতার পাশাপাশি একইভাবে সক্রিয় নার্গিস, বীথি, ফাতেমা চৌধুরী প্রমুখ বাম ঘরানার ছাত্রীরা। এর মধ্যে ইডেন কলেজ ও কামরুন্নেছা গার্লস স্কুলের জ্যেষ্ঠ ছাত্রীদের নেতৃত্ব বিশেষভাবে সক্রিয় ছিল। তাই একুশের প্রতিবাদী যাত্রায় ছাত্রীদের ভূমিকা কোনো অংশেই কম গুরুত্বের নয়। ঢাকার উত্তর-দক্ষিণে মতাদর্শগত সেতুবন্ধ একুশে উপলক্ষ্যে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। উপেক্ষা করার উপায় নেই ফজলুল হক হল, ঢাকা হল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, মিটফোর্ড স্কুল ও জগন্নাথ কলেজের একাধিক ছাত্রবাস বা শিক্ষায়তনের প্রগতিবাদী ছাত্রছাত্রীদের ঐক্য। ছাত্র-জনতার রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়।