শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে চবি শিক্ষকের পদত্যাগ

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৪ অক্টোবর, ২০২৪ at ৮:০৩ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পদত্যাগ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রন্টু দাশ। নিয়ম না মেনে নিয়োগ পাওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে জোড়া খুনের অন্যতম আসামি বলে রন্টু দাশের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। চবি ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ছিলেন তিনি। শিক্ষার্থীরা এই শিক্ষককে প্রায় দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে অব্যাহতি নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে একপর্যায়ে ওই শিক্ষক একটি কাগজে নিজের পদত্যাগপত্র লিখে সই করেন বলে জানা যায়। গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে ইতিহাস বিভাগে এই ঘটনা ঘটে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি এসে শিক্ষার্থীদের ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

উপাচার্য বরাবর পদত্যাগের পত্রে এই শিক্ষক লিখেন, ‘আমি স্বেচ্ছায় ইতিহাস বিভাগের শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগ করছি। এই বিষয়ে আপনাকে (উপাচার্য) অবগত করছি।’ রন্টু দাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী প্রক্টরের দায়িত্বেও ছিলেন। এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা আলাদা কোনো পদ নয়। এটি পেশা। এখান থেকে কেউ পদত্যাগ করেন না। কোনো শিক্ষক যদি এই পেশায় থাকতে না চান, তাহলে রেজিস্ট্রারকে চিঠি দিয়ে অব্যাহতি চান। এই ব্যাপারে জানতে চেয়ে রন্টু দাশের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাড়া পাওয়া যায়নি।

এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলী বলেন, রন্টু দাশ ছাত্রলীগের পদে ছিলেন। যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক প্রভাবে শিক্ষক হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র হত্যার ঘটনায়ও সরাসরি জড়িত ছিলেন। আবার পুলিশের করা একটি মামলায় জেলও খেটেছেন। আমরা রন্টু দাশের অব্যহতি চাই।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিবির ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষে দুই শিবির কর্মী নিহত হন। এরা হলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. মুজাহিদুল ইসলাম মুজাহিদ ও ইংরেজি চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মাসুদ বিন হাবিব। নিহত শিবির কর্মী মো. মুজাহিদুল ইসলাম মুজাহিদের বাবা মো. হুমায়ন কবির মিন্টু বাদী হয়ে চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসমিন আরার আদালতে ছাত্রলীগের ৪২ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। এ মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন ইতিহাস বিভাগের এই শিক্ষক রন্টু দাশ। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে এ বিষয়ে তদন্ত করে ২০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য হাটহাজারী থানার তৎকালীন ওসিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর আর অগ্রগতি হয়নি।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ইতিহাস বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে গ্রেডিং পদ্ধতিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের এসএসসি বা সমমান ও এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষার উভয়টিতে ন্যূনতম জিপিএ.০ পয়েন্ট এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে পৃথকভাবে ৩.৫ থাকতে হবে। কিন্তু এই পদে আবেদন করে বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসে যোগ্যতা শিথিল করে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনিয়মে শিক্ষক হয়েছিলেন ছাত্রলীগের সহসভাপতি রন্টু দাশ। যিনি এইচএসসিতে পেয়েছিলেন ২.৯। বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি এর প্রতিবাদ করলেও বিভাগের প্রভাবশালী এক শিক্ষকের চাপে আবেদনপত্রটি গৃহীত হয়।

এই ব্যাপারে চবি প্রক্টর প্রফেসর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, আমি ইতিহাস বিভাগে আসার আগেই ওই শিক্ষক একটা পদত্যাগপত্র লিখেছেন এবং সেখানে স্বাক্ষরও করেছেন। পদত্যাগ জোরপূর্বক বা কেউ চাইলেই হয় না। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম এবং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হবে। প্রক্টর বলেন, একপর্যায়ে আমি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। আমরা শিক্ষকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। ভবিষ্যতে এসব ক্ষেত্রে নিরাপত্তার প্রয়োজন হলে প্রক্টরিয়াল বডি শিক্ষকদের পাশে থাকবে।

অব্যাহতির দাবিতে আন্দোলন : এ নিয়ে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে রন্টু দাশের অব্যাহতির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। সমাবেশ থেকে বেশকিছু দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো, ২৪’র গণহত্যাসহ ক্যাম্পাসে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের তদন্ত কমিটি গঠন করে চাকুরিচ্যুত করতে হবে, নিয়োগের নীতিমালা শিথিল করে অথবা নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে যাদেরকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তদন্ত কমিটি গঠন করে তাদের নিয়োগ বাতিল করে চাকরিচ্যুত করতে হবে। অব্যাহতির দাবি করা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে চবির দুই ছাত্র হত্যায় সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন বলেও তারা অভিযোগ করেন। এছাড়া রন্টু দাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার শর্ত পূরণ না করেই স্নাতকে সিজিপিএ ২.৯৪ নিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদান করেন। এ ছাড়া ২০১১ সালে অস্ত্র আইনে পুলিশের করা এক মামলায় গ্রেপ্তার হন বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আব্দুল বাতেন
পরবর্তী নিবন্ধএইচএসসির ফল পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে সচিবালয়ে ঢুকে বিক্ষোভ