শিক্ষার্থীদের ইংরেজি শিক্ষায়ও মনোযোগী হতে হবে

বাবুল কান্তি দাশ | সোমবার , ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

ভাষা শিক্ষা আঞ্চলিকতা থেকে আন্তর্জাতিকতায় উত্তরণের পথ। অন্ততঃ দুইটি ভাষা সবারই আয়ত্ত করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয়। তিনটি হলে সবচেয়ে ভালো। এর একটি মাতৃভাষা, একটি আন্তর্জাতিক ভাষা যেটি হলো ইংরেজি আর তৃতীয়টি হলো অঞ্চল ভিত্তিক আঞ্চলিক ভাষা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মাতৃভাষার সাথে সাথে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা। যেভাষার মাধ্যমে পারস্পরিক ভাব আদানপ্রদান করা যায়, যার মাধ্যমে পৃথিবীর বহু লোকের মধ্যে ভাব আদানপ্রদান করে সঙ্গতিশীল তাৎপর্য্যে তাদিগকে বিনায়িত করতে পারা যায়, ভাব ও বোধের সন্দীপনী নিষ্ঠা ও সম্বর্দ্ধনার দ্যুতি নিয়ে, বান্ধবতার পরিপ্রেক্ষায়। মাতৃভাষা নিজ পরিবেশের সঙ্গে শিষ্ট সঙ্গতি রেখে চলা যেতে পারে, ইংরেজি পৃথিবীর অনেকের সাথে সখ্যসন্দীপনী তাৎপর্যে চর্যাবিধায়নার ভিতরদিয়ে বান্ধবতায় নিবিষ্ট করতে পারা যায়। তাই প্রত্যেক শিক্ষার্থীর দুটো ভাষায় অন্তত দক্ষ ও যোগ্য হয়ে উঠা দরকার। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা হলেও ইংরেজি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। বলা যায় ইংরেজি আমাদের দ্বিতীয় ভাষা। আজকের দিনে ক্যারিয়ার যুদ্ধে এগিয়ে যেতে চাইলে অন্যান্য ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র ক্যারিয়ার গঠন নয়, দেশে হউক আর বাইরে হউক ইংরেজি ভাষা জানা এবং শেখা থাকলে করা বলা চলায় নিজেকে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য ও স্মার্ট করে তোলা যায়। ইংরেজি বিশ্ব প্রসিদ্ধ এমন একটি ভাষা, যা রপ্ত করে খুব সহজেই পরিচিতঅপরিচিত যে কারো সাথে যোগাযোগের নেটওয়ার্ক তৈরি করা যায় এবং জ্ঞানের পরিধি সহজেই বাড়ানো যায়। যা আমাদের বাস্তবজীবনে একটি মানসম্মত জীবনযাত্রা তৈরি করতে বহুমুখী ভূমিকা রাখে।

আজ একবিংশ শতাব্দীতে এসে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে যখন প্রত্যাশিত মানের ইংরেজি ভাষাজ্ঞান না পাই তখন মনটা ব্যথিত হয়। ইংরেজি ভাষার দক্ষতা নির্ভর করে শোনা, বলা, পড়া ও লেখায়। প্রাথমিক বা মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ইংরেজির ভিত অত্যন্ত দুর্বল। জাতীয় পর্যায়ের এক জরিপে দেখা যায়, প্রাথমিকে পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ইংরেজি বিষয়ের পঠনপাঠন আশানুরূপ নয়। শুধু যে প্রাথমিকে তা নয়, মাধ্যমিকেও এর অবস্থা নাজুক। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় দেখা যায় বেশির ভাগ পরীক্ষার্থী ফেল করে ইংরেজিতে। দেশের ইংরেজি বিষয়ের এই তথৈবচ অবস্থা দেখে শিক্ষাবিদরাও হতাশা ব্যক্ত করেছেন। প্রকৃতপক্ষে একটি শিক্ষাজীবন শেষে (একাডেমিক ইয়ার) শিক্ষার্থীরা যখন ইংরেজিতে দুর্বল থেকে যায়, তখন তা হয় দেশের জন্য বোঝাস্বরূপ। বর্তমান যুগ জ্ঞানবিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। এখানে ইংরেজি ভাষাজ্ঞান প্রয়োগ করেই আমাদের বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে হয়। বিদেশে কর্মসংস্থান (ইংরেজি জ্ঞান ভালো হলে এটি দক্ষতা হিসেবে ভাবা হয়), গবেষণা, ব্যবসাবাণিজ্য, উচ্চশিক্ষা প্রতিটি সেক্টরে রয়েছে ইংরেজির গুরুত্ব। দেশের বাইরে যেকোনো কাজে আমাদের প্রয়োজন হয়ে উঠে ইংরেজি ভাষা। ইংরেজি ভাষায় আমাদের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে আমরা যতবেশি উন্নত ও সমৃদ্ধ হবো ততবেশি প্রয়োজনীয় কাজ অনায়াসে নিষ্পন্ন করতে সক্ষম হবো। ইংরেজি ভাষায় দুর্বলতা প্রতি পদে পদে আমাদের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে। ইংরেজি পত্রিকা পড়া, ইংরেজি খবর শোনা ইংরেজি ভাষা রপ্তকরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে নিঃসন্দেহে। কিন্তু আমরা আমাদের সন্তান বা শিক্ষার্থীদের মাঝে সেই অভ্যাসটা গড়ে দিতে পারেনি। ক্ষেত্রমতে ইংরেজি খবর শোনা এবং পত্রিকা পড়াকে তাচ্ছিল্য করাসহ বিরূপ মন্তব্য করে থাকি। যার প্রেক্ষিতে সন্তান বা শিক্ষার্থী ইংরেজি শিক্ষায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ইংরেজি ভাষায় সাবলীলতা অর্জনের জন্য পরিবেশও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিজ পরিবার, বিদ্যালয় বা চারপাশের মানুষজনের সঙ্গে ইংরেজিতে বেশি করে কথা বলার আগ্রহ থেকে ইংরেজি ভাষা প্রয়োগের একটি পরিবেশ তৈরি হতে পারে। শ্রেণিকক্ষেও শিক্ষককে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। এছাড়া ইংরেজি ভাষার প্রসারে সরকারের উদ্যোগে বয়স উপযোগী বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া যেতে পারে। বৈশ্বিক যোগাযোগের ভাষা হিসেবে ইংরেজির গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ইংরেজি শেখা কেবল একটি বিদেশি ভাষা শেখা নয়, বরং জাতীয় অগ্রগতির চাবিকাঠি। শিক্ষা, কর্মসংস্থান, প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইংরেজি দক্ষতা আজ অপরিহার্য। আমরা যদি নিয়মিত ইংরেজি ভাষা চর্চা করি এবং শিক্ষার্থীদের মগজে তা সেঁটে দিতে পারি তাহলে তারা অনায়াসে ইংরেজি ভাষা রপ্ত করতে সক্ষম হবে। এগিয়ে নিতে পারবে নিজেকে, দেশকে বিশ্বদরবারে সুমহান মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়ে উঠবে।

লেখক: প্রাবন্ধিক, শিক্ষক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশীতের দিনে
পরবর্তী নিবন্ধদক্ষ পেশীজীবীদের জন্য সৌদি আরবে নতুন সম্ভাবনা