নগরীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের মিছিল থেকে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও চট্টগ্রাম সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবনে হামলা চালানো হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মো. মহিউদ্দিন বাচ্চুর কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। আন্দোলনকারীরা নগরীতে কয়েকটি পুলিশ বঙ এবং ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরাও ভেঙে ফেলেছে।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর নিউ মার্কেটে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষ করে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় পথে পথে এসব হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে বলে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। বহদ্দারহাট এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীর সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় ৩ জন গুলিবিদ্ধ এবং পুলিশসহ ১০/১২ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ মো. শহীদ নামে একজন পথচারী গত রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। চান্দগাঁও থানার ওসি জাহিদুল কবীর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ৮টায় আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় পার্কভিউ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ১০টায় তিনি মারা যান।
ওসি বলেন, নিহত শহীদের ভাই পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি বহদ্দারহাট বাজার করতে এসেছিলেন। রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে চকবাজার যাচ্ছিলেন।
গতকাল সন্ধ্যায় নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল পৌঁছলে সেখান থেকে একটি অংশ শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের চশমা হিলের বাসায় হামলা চালায়। প্রথমে তারা বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে বাড়ির দোতলার জানালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে হামলাকারীরা গেট ভেঙে নিচে রাখা দুটি গাড়িও ভাঙচুর করে। তাৎক্ষণিকভাবে অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানা যায়নি। চট্টগ্রামের সাবেক জননন্দিত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নানা স্মৃতি রয়েছে ওই বাড়িতে। এ সময় বাসায় থাকা মন্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
শিক্ষামন্ত্রীর মা হাসিনা মহিউদ্দিন আজাদীকে বলেন, সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটের দিকে আন্দোলনকারীরা বাড়ির গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে পার্কিংয়ে থাকা দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে। সেখানে থাকা প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী ফলক ভেঙে ফেলা হয়। কিন্তু সিঁড়ির গেট বন্ধ থাকায় তারা উঠতে পারেনি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা কেন হামলা করবে? তাদের হাতে আমরা অস্ত্র নয়, কলম দিয়েছি। তিনি বলেন, ছাত্রদের মাথায় অস্ত্র রেখে যারা সন্ত্রাস করছে তারাই এই হামলা করেছে।
সিএমপির উপ–কমিশনার (উত্তর) মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে আমাদের টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
শিক্ষামন্ত্রীর বাসভবনের পর সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবনেও হামলা চালানো হয়েছে। ঘটনার সময় মেয়র বাসভবনে অবস্থান করছিলেন। গতকাল সন্ধ্যায় বহদ্দারবাড়ির মেয়রের বাসভবনে এ হামলা চালানো হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল বহদ্দারহাট পৌঁছলে সেখান থেকে একটি অংশ মেয়রের বাসভবনের দিকে অগ্রসর হয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
সিটি মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী মো. মোস্তফা কামাল চৌধুরী দুলাল আজাদীকে বলেন, দলবদ্ধভাবে এসে তারা মেয়র মহোদয়ের বাসার মেইন গেট দিয়ে প্রবেশ করতে চেয়েছে। এ সময় মেইন গেটে ভাঙচুর করে। তিনি জানান, ঘটনার সময় মেয়র বাসায় ছিলেন। এ সময় মেয়রের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা ফায়ার করলে ওরা পালিয়ে যায়।
এদিকে মেয়রের বাসায় হামলার সংবাদ পেয়ে চান্দগাঁও থানা পুলিশ হামলাকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, এ সময় পুলিশ হামলাকারীদের সরিয়ে দিতে মাইকিং করলেও তারা সরে না গিয়ে পুলিশের ওপর ইট–পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করলে তারা পিছু হটে। সরকারদলীয় নেতাকর্মীরাও সে সময় ঘটনাস্থলে অবস্থান নেন। এ সময় পুলিশসহ ১০/১২ জন আহত হয়।
এর আগে আন্দোলনকারীরা ওয়াসা এলাকায় স্থানীয় সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর অফিসে আগুন দেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিক্ষোভ শেষে মিছিল নিয়ে তারা টাইগারপাস, লালখান বাজার হয়ে জিইসি মোড়ের দিকে যাচ্ছিলেন। লালখান বাজার আমীন সেন্টার অতিক্রম করে ওয়াসার মোড় যাওয়ার পথে সড়কের বামে পেট্রোল পাম্পের পাশে চট্টগ্রাম–১০ আসনের সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর কার্যালয়ে হামলা শুরু করেন মিছিলকারীরা। এ সময় তারা ওই কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। অফিসটি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি প্রধান নির্বাচনী ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। বর্তমানে তিনি সেখানে মাঝে মাঝে নেতাকর্মীদের নিয়ে বসেন। ঘটনার প্রায় এক ঘণ্টা পর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুকে নিয়ে সেখানে যান। এ সময় তারা ক্ষতিগ্রস্ত কার্যালয় ঘুরে দেখেন।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল থেকে নগরীর টাইগারপাসে পুলিশ বঙে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বিকাল ৫টার কিছু সময় পর নিউ মার্কেট থেকে মিছিল নিয়ে টাইগারপাসের দিকে অগ্রসর হন আন্দোলনকারীরা। টাইগারপাস মোড়ে পৌঁছে মিছিল থেকে একটি অংশ গিয়ে সেখানকার পুলিশ বঙ ভাঙচুর করে। তবে ওই সময় সেখানে কোনো পুলিশ সদস্য ছিলেন না। পরে তারা মিছিল নিয়ে ওয়াসার দিকে অগ্রসর হন। যেতে যেতে ফ্লাইওভারের দেয়ালে, পিলারে, দোকানের সাটারে লাল–কালো রঙে নানা স্লোগান লিখে দেন। এরপর মিছিলটি জিইসির দিকে যেতে থাকে। এ সময় একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িও ভাঙচুর করা হয়।