প্রগতিশীল বাম ধারার বুদ্ধিজীবী, স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক, শিক্ষক যতীন সরকার আর নেই। গতকাল বুধবার বিকাল পৌনে ৩টায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয় বলে সিপিবির ময়মনসিংহ জেলা কমিটির সভাপতি এমদাদুল হক মিল্লাত জানান।
৮৯ বছর বয়সী যতীন সরকার দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। এর মধ্যে গত জুন মাসে পড়ে গিয়ে উরুর হাড়ে আঘাত পান। পরে তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিছুদিন আগে ময়মনসিংহে নেওয়ার পর সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।
অধ্যাপক যতীন সরকারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বাকবিশিস)। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর স্বাক্ষরিত প্রেস বিবৃতিতে বলেন, খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকার বাংলাদেশে শিক্ষা বিস্তারে অনবদ্য অবদান রেখেছেন। তিনি বাংলাদেশ কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বাকবিশিস) এর একজন প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা ছিলেন। বাকবিশিস নেতৃবৃন্দ প্রয়াত অধ্যাপক যতীন সরকারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
যতীন সরকার দুই মেয়াদে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ উদীচীর ময়মনসিংহ কার্যালয়ে নেওয়া হবে। পরে কফিন নিয়ে যাওয়া হবে তার নেত্রকোণার বাড়িতে।
১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার চন্দ্রপাড়া গ্রামে যতীন সরকারের জন্ম। ১৯৬৪ সালে বাংলার প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন ময়মনসিংহ শহরের নাসিরাবাদ কলেজে। ১৯৬৭ সালে কানন আইচের সঙ্গে যতীন সরকারের সংসার জীবনের শুরু হয়। এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে তাদের। যতীন সরকারের জীবনের বেশিরভাগ সময় ময়মনসিংহে কেটেছে। ঊনিশশ ষাটের দশক থেকে ময়মনসিংহ শহরে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন তিনি। পরে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৮৫ সালে তার প্রথম বই ‘সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা’ যখন প্রকাশিত হয়, বয়স তখন পঞ্চাশ পেরিয়েছে। ২০০৫ সালে প্রকাশিত ‘পাকিস্তানের জন্ম মৃতু–দর্শন’ যতীন সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত। ১৯৮৫ সালে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয় তার ‘বাংলাদেশী কাবি গান’। ‘বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য’, ‘সংস্কৃতির সংগ্রাম’, ‘মানবমন, মানবধর্ম ও সমাজবিপ্লব’, ‘দ্বিজাতিতত্ত্ব, নিয়তিবাদ ও বিজ্ঞান–চেতনা’, ‘সংস্কৃতি ও বুদ্ধিজীবী সমাচার’, ‘সাহিত্য নিয়ে নানাকথা’ তার প্রকাশিত আড়াই ডজন বইয়ের অন্যতম। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয় তার সর্বশেষ বই ‘প্রত্যয় প্রতিজ্ঞা প্রতিভা’। ২০০৮ সালে তিনি গবেষণা ও প্রবন্ধের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান। ২০১০ সালে সরকার তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। এছাড়া ড. এনামুল হক স্বর্ণপদক, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার, মনিরুদ্দীন ইউসুফ সাহিত্য পুরস্কারসহ নানা সম্মাননায় তিনি ভূষিত হয়েছেন বিভিন্ন সময়ে।