শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুতই খুলে দেওয়া হবে : শিক্ষামন্ত্রী

শাবি উপাচার্যকে দুঃখ প্রকাশ করতে বললেন

| শনিবার , ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

ওমিক্রনের চাপ পেরিয়ে দেশে সংক্রমণের হার ধীরে ধীরে কমে আসতে শুরু করায় শিগগিরই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। গতকাল শুক্রবার সকালে সিলেট সার্কিট হাউস মিলনায়তনে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, খুব দ্রুতই সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। খবর বিডিনিউজের।
মহামারীর কারণে দেড়বছর বন্ধ থাকার পর গতবছরের সেপ্টেম্বরে সব স্কুল-কলেজ খুলে দিয়েছিল সরকার। পরে ধাপে ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও খুলেছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপটে এ বছরের শুরু থেকে সংক্রমণ ফের বাড়তে থাকে দ্রুত। এই প্রেক্ষাপটে গত ২১ জানুয়ারি ফের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা আসে। শিক্ষামন্ত্রী সে সময় বলেছিলেন, শিশুদের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। শুরুতে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্কুল-কলেজ বন্ধের নির্দেশনা থাকলেও সংক্রমণ পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি না হওয়ায় শ্রেণিকক্ষে পাঠদান আর জনসমাগমে বিধিনিষেধের মেয়াদ ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এখন আবার সংক্রমণ কমে আসায় শিক্ষার্থীদের কোভিড টিকা দিয়ে দ্রুত স্কুল খুলে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন বিভিন্ন সংগঠন ও অভিভাবকরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিশুদের যে ক্ষতি হচ্ছে, সে বিষয়গুলো তুলে ধরে ইউনিসেফও একই আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করতে শুক্রবার সকালে সিলেটে পৌঁছান শিক্ষামন্ত্রী। বৈঠকের পর শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, ছাত্রছাত্রীদের ওই দাবির কথা তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে পৌঁছে দেবেন। এদিন বিকাল ৩টা থেকে সিলেট সার্কিট হাউজে শিক্ষার্থীদের ১১ প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের পর সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, উপাচার্যকে অপসারণে তাদের একটি দাবি ছিল। সে ব্যাপারে আমরা আগেও তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, আজকেও। তারা তাদের যে বক্তব্য, তাদের যে চাওয়াগুলো এবং কেন তারা সেটি চায়, সেই বক্তব্য আমাদের কাছে তুলে ধরেছে। আমরা অত্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে তাদের সেই বক্তব্যগুলো শুনেছি। আমরা তাদের যে বক্তব্য, সেই বক্তব্য মহামান্য আচার্যের কাছে আমরা সেগুলো তাকে অবহিত করব। আচার্যই একজন উপাচার্যকে নিয়োগ দেন কিংবা অপসারণ করেন, অতএব আমরা আচার্যকে অবহিত করব। বাকি সিদ্ধান্ত মহামান্য আচার্য গ্রহণ করবেন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘ভালো ও ফলপ্রসূ’ আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরাও তাদের কথাগুলো বুঝতে চেষ্টা করেছি। তাদের যে দাবি-দাওয়াগুলো আছে, মূলত সেই দাবি-দাওয়াগুলোর সবগুলোই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের, বিশেষ করে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো- সেগুলোর শিক্ষার মান, শিক্ষকতার মান, আমাদের যে আবাসন সুবিধা আছে, সেগুলোর মান কী করে উন্নয়ন করা যায়। অর্থাৎ তাদের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ কী করে উন্নত করা যায়, তারা নিজেরাই চিন্তাভাবনা করে বেশ কিছু প্রস্তাব তারা দাঁড় করিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের দাবির অনেকগুলো ইতোমধ্যে পূরণ করা হয়েছে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, আমরা আশা করি যে, বাকি যে প্রস্তাবগুলো আছে, এই প্রস্তাবগুলো আমরা একেবারেই সক্রিয় বিবেচনায় নিয়ে সেগুলোকে যত দ্রুত সম্ভব, তার অধিকাংশই আমরা পূরণ করতে পারব। আমরা সেই উদ্যোগ নেব। দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর আশা প্রকাশ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা চাই যে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে একদম স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসুক।
এদিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠকে তাকে ‘দুঃখ প্রকাশ’ করতে বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। শুক্রবার রাতে উপাচার্যের কার্যালয়ে ওই বৈঠক থেকে বের হয়ে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। আর এ দিবসের আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য উপাচার্যকে বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী।
কোষাধ্যক্ষ বলেন, শিক্ষকদের সাথে আলাপকালে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, এই ঘটনা আপনার নির্দেশে ঘটুক, আর না ঘটুক, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হিসেবে এর দায় দায়িত্ব আপনার ওপর এসে পড়ে। সে জায়গায় আমি হলে আমিও দুঃখ প্রকাশ করতাম। আপনি সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করবেন। উপাচার্য সেটাই করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৮০২ নং কক্ষে নারীর রক্তাক্ত লাশ ও একজন ‘কামরুল হাসান’
পরবর্তী নিবন্ধদেশে দৈনিক শনাক্ত আরও কমে পাঁচ হাজারের ঘরে