পড়ালেখার পাশাপাশি সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে শিক্ষার্থীদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এছাড়া শিক্ষার বিস্তারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বিনিয়োগ ও ভর্তুকি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নগরীর শিক্ষাখাতকে ঢেলে সাজাতে সব ধরনের সহযোগিতার ঘোষণা দিয়েছেন চসিক মেয়র। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে নগরীর আন্দরকিল্লায় চট্টগ্রাম মুসলিম এডুকেশন সোসাইটি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবনির্মিত একাডেমিক ভবনের উদ্বোধন পরবর্তী আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মেয়র। এর আগে স্কুলে নবনির্মিত ছয়তলাবিশিষ্ট একাডেমিক ভবন উদ্বোধন করেন মেয়র। বিদ্যালয়ের সভাপতি এ আর এম শামীম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ, দৈনিক আজাদীর চিফ রিপোর্টার হাসান আকবর, ওমর আলী ফয়সল, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুলফিকার হায়দার চৌধুরী, সহকারী প্রধান শিক্ষক খায়রুল বাশার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বাংলাদেশের সিটি কর্পোরেশনগুলোর মধ্যে একমাত্র চসিকই শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করে থাকে। বর্তমানে ৮৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় ৬৫ হাজার শিক্ষার্থীকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করছে চসিক। এক্ষেত্রে প্রতি বছর যে ভর্তুকি দিতে হয় সেটিকে আমি ব্যয় মনে না করে বিনিয়োগ মনে করি। কারণ শিক্ষার মাধ্যমে শিশুদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে তারা ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম ও সর্বোপরি দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে। এজন্য মেয়র হিসেবে আমি শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখব। শিক্ষা এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে বিনিয়োগ করলে একটি আলোকিত সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। প্রতি মাসে চসিককে ছয় থেকে আট কোটি টাকা শিক্ষা খাতে ব্যয় করতে হয়, যা আসলে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ। এটি শুধুমাত্র ভোটের বিষয় নয় বরং ভবিষ্যতের জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ।
এসময় মেয়র শিক্ষার্থীদের পুষ্টিকর খাবারের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বলেন, অভিভাবকের পরে যারা ছাত্রছাত্রীদের সবচেয়ে বেশি সময় দেয় তারা হচ্ছেন শিক্ষক–শিক্ষিকা। কাজেই শিক্ষক–শিক্ষিকা যদি ছাত্র–ছাত্রীদেরকে সবসময় মনিটরিং করে নীতিবাক্য শুনান তাহলে দেশকে একটা ভালো জায়গায় আনতে পারব আমরা। শিক্ষার্থীরা ঠিকমত ব্রেকফাস্ট খেয়েছে কিনা এটাও মনিটরিং করতে পারেন। অনেক শিক্ষার্থী সকালে ১০টায় আসে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত স্কুলে থাকে। এই দীর্ঘ সময় তাদের পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এজন্য মিড–ডে মিল চালু করা অত্যন্ত জরুরি। ছাত্র–ছাত্রীদেরকে যদি ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট করতে হয়, ব্রেইন ওয়ার্ক করাতে হবে, এগুলোর কোনো বিকল্প নেই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, শিক্ষার্থীদের কল্যাণের জন্য এ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনের নির্মাণের উদ্দেশ্য যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে হবে। প্রায় ৫০০৯ শিক্ষার্থী এ স্কুলে পড়াশোনা করে তাদের সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি আনুষঙ্গিক কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করা, শিখানো জরুরি। এ স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক চালু করার ব্যাপারে আমার জায়গা থেকে সহযোগিতা করবো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দৈনিক আজাদীর চিফ রিপোর্টার হাসান আকবর বলেন, ছোটবেলায় চেয়েছিলাম শিক্ষক হতে, এজন্য স্কুলের কথা শুনলেই ছুটে আসি। স্কুল–কলেজের প্রতি একটা টান কাজ করে, এসব নিয়ে কথা বলতে ভালো লাগে। আমি একজন শিক্ষক পরিবারের সদস্য হিসেবে প্রত্যাশা করবো শিক্ষার মান যাতে বাড়ানো হয়। ইংরেজি শিক্ষার গুরুত্ব আলোচনা করে তিনি বলেন, ইংরেজির প্রতি শিক্ষার্থীদের বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে সেই ব্যাপারে শিক্ষকদের সুনজর দেওয়া উচিত। বিদেশে অন্য দেশের মানুষরা ইংরেজিতে পারদর্শী হওয়ায় ভালো উপার্জন করতে সক্ষম হয়, বাংলাদেশের শ্রমিকদের ইংরেজিতে কিছুটা পারদর্শী করা গেলেও রেমিট্যান্সের পরিমাণ অনেকাংশে বেড়ে যাবে।
এসময় অতিথিদের সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। আলোচনা সভা শেষে ওই স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা–২৫ এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৩১টি ইভেন্টে প্রথম স্থান অধিকারী শিক্ষার্থীরা অতিথিদের কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করে।