আজ জাতি হিসেবে আমরা সত্যিই গভীর লজ্জায় নিমজ্জিত। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও আমরা ন্যায়, ন্যায্যতা ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। শিক্ষা একটি জাতির মেরুদণ্ড, অথচ সেই মেরুদণ্ডকে আজ ভেঙে দিচ্ছে আমলাতন্ত্র, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক স্বার্থের দৌরাত্ম্য। আমরা সমাজে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলি, মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেই, ভালো মানুষ তৈরির আহ্বান জানাই–কিন্তু যারা এই ভালো মানুষ গড়ে দেন, সেই শিক্ষক সমাজের প্রতি আজ আমাদের উদাসীনতা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। শিক্ষকদের অবমূল্যায়ন, অবহেলা ও অমানবিক আচরণ কেবল অন্যায় নয়– এটি জাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা।
আজ শিক্ষকরা রাস্তায় দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন, অথচ এ সময়ই তাদের ক্লাসে থাকার কথা ছিল। সামনে বার্ষিক পরীক্ষা, অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা– শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নেওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। কিন্তু রাষ্ট্রের উদাসীনতা ও অমানবিক সিদ্ধান্তের কারণে সেই শিক্ষক সমাজ আজ রাস্তায়, দাবিতে মুখর। এটা কেবল শিক্ষকদের লড়াই নয়– এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের লড়াই, এটি ন্যায়ের লড়াই।
যেখানে একদিনের কাঁচাবাজারেই পাঁচশো টাকা যথেষ্ট নয়, সেখানে শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া মাত্র ২০০০ টাকা বাড়ানোকে ‘উদারতা’ বলা এক নির্মম পরিহাস। একজন দিনমজুর আজ এক হাজার টাকা মজুরি পান, অথচ যিনি সেই শ্রমিকের সন্তানকে মানুষ বানাতে সারাজীবন কাজ করেন, তিনি ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত! এ কেমন রাষ্ট্রনীতি, এ কেমন ন্যায়বোধ?
রাষ্ট্রের বিবেক থাকলে শিক্ষকদের আজ রাস্তায় নামতে হতো না। এখনই সময়, তাদের ন্যায্য দাবি ও সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার। কারণ শিক্ষক অপমানিত হলে জাতি ধ্বংস হয়, সভ্যতা থেমে যায়, আগামী প্রজন্ম অন্ধকারে হারিয়ে যায়। শিক্ষা ব্যবস্থাকে রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে, শিক্ষক সমাজকে তার ন্যায্য মর্যাদায় ফিরিয়ে আনাই হোক আমাদের জাতীয় অঙ্গীকার।










