শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সুসম্পর্ক ফিরিয়ে আনতে হবে

শিক্ষা উপদেষ্টার আশাবাদ

| সোমবার , ২৬ আগস্ট, ২০২৪ at ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের জন্য বল প্রয়োগ করা যাবে না বলে জানিয়েছেন। গত রোববার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা জানান। উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদে যারা দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের কারও বিরুদ্ধে ন্যায়সংগত অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নতুন করে পদায়ন ও নিয়োগের কার্যক্রম চলছে। জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করে অস্থিরতা সৃষ্টি করলে, প্রশাসন ভেঙে পড়তে পারে। শিক্ষক, কর্মকর্তাকর্মচারীদের বেতনভাতা পেতে অসুবিধা হবে।’ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তাকর্মচারীদের নিয়মবিধি অনুযায়ী পদায়ন ও বদল করা হয়। তাদের বলপূর্বক পদত্যাগের সুযোগ নেই।’

একটি সফল অভ্যুত্থানের পর সুশৃঙ্খল সমাজে ফিরে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষকশিক্ষার্থীদের যে ধরনের সম্পর্ক আশা করা হয়, সেটি ফিরিয়ে আনতে হবে এবং কাউকে ব্যক্তিগতভাবে অপমানিত করা যাবে না।’ এ সময় শিক্ষাঙ্গনে ভদ্রতা রক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

বর্তমান সময়ের কিছু ঘটনা আমাদের খুব ব্যথিত করে তুলেছে। অনেকের চোখের সামনে এসব ঘটলেও কেন যেন মেনে নিতে কষ্ট হয়। আমরা জানি, শিক্ষকরা জাতি গড়ার কারিগর। যে কেউ শিক্ষকদের একটু আলাদা শ্রদ্ধামিশ্রিত চোখে দেখেন। একসময় প্রাইভেট শিক্ষক, টোলের পণ্ডিত থেকে শুরু করে স্কুলকলেজবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকযেই হোন কেন তাঁদের দেখলে, তাঁদের কথা শুনলে মনের মধ্যে একটা সম্মানবোধ কাজ করত। কিন্তু মনে হয় সেই অবস্থা ধীরে ধীরে লোপ পেতে শুরু করেছে। আজ আশপাশে হচ্ছেটা কী? বড় বড় শিক্ষালয়ের শিক্ষক, অধ্যক্ষযাদের দেখলে আগে শিক্ষার্থীসহ সবাই রাস্তা থেকেই সরে দাঁড়াত। অথচ আজ তাঁদের দিকে আঙুল তুলছেএমন ভাষায় কথা বলছে; যা মুখে উচ্চারণ করাই যায় না। তাহলে শিক্ষার্থীরাই খারাপ হয়ে গেল, নাকি শিক্ষকপণ্ডিতরা আজ তাঁদের আদর্শ থেকে বিচ্যুতএমন প্রশ্ন অনেকের কাছে ঘুরেফিরে আসছে।

পণ্ডিতজনরা বলেন, মানুষের জীবনে পিতামাতার পরই শিক্ষকের অবস্থান। তবুও একজন শিক্ষক আমাদের কাছে পিতামাতার সমতুল্য। ছাত্রশিক্ষকের পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সম্পর্ক হাজার বছর ধরে চলে আসছে। শুধু শিক্ষা কিংবা জ্ঞানার্জন নয়, একজন ছাত্রের দুর্দিনে ছায়ার মতো পাশে দাঁড়ান একজন শিক্ষক। আমাদের সংস্কৃতিতে শিক্ষকছাত্রের মধ্যে রয়েছে এক আশ্চর্য সেতুবন্ধন। যে বন্ধন কেবল পারস্পরিক স্নেহ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর বিশ্বাসের ওপর গড়ে ওঠে। ছাত্রশিক্ষকের সম্পর্ক এক অদ্ভূতরকম শক্ত গাঁথুনির।

আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, গণআন্দোলনে ক্ষমতা বদলের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ইস্যুতে বিক্ষোভ হচ্ছে। বঞ্চিত ছিলেন যাঁরা, তাঁরা সেই বঞ্চনার অবসান চাইছেন। আবার কেউ কেউ ভোল পাল্টে সুযোগ নিতে চাইছেন। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের জন্য যেভাবে বল প্রয়োগ করা হয়েছে এবং হচ্ছে, তা কোনোক্রমেই প্রত্যাশিত নয়। অবস্থাটা এমন রূপ ধারণ করেছে যে শিক্ষা উপদেষ্টাকে এসব বিষয়ে নির্দেশনা জারি করতে হয়েছে। এমনিতেই শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক অস্থিরতা চলছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কোথাও শৃঙ্খলা খুঁজে পাওয়া সহজ নয়। শিক্ষা পরিণত হয়েছে বাণিজ্যে। কোচিংনির্ভর শিক্ষা থেকে উত্তরণের জন্য মানুষের বড় প্রত্যাশা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে। এর মধ্যে শিক্ষকদের এই জোরপূর্বক পদত্যাগ বা অপমানসূচক কর্মকাণ্ড কোনো ক্রমেই কল্যাণ বয়ে আনবে না। শিক্ষাক্ষেত্রকে বাঁচাতে হবে। শিক্ষাঙ্গন যদি দ্রুত সচল না হয়, তাহলে তা কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে না। সময় নিয়ে শিক্ষাব্যবস্থারও আমূল পরিবর্তন করতে হবে। তবে শিক্ষাঙ্গনকে শিক্ষক রাজনীতির থাবা থেকে মুক্ত করা খুবই জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলের লেবাসে শিক্ষকেরা যে রাজনীতি করছেন, তা কোনো বিবেচনায়ই প্রতিষ্ঠানের জন্য সুফল বয়ে আনেনি। বরং লেজুড়বৃত্তিতে পাকা হতে পারলে খুলে গেছে উন্নতির পথ। মনে রাখতে হবে, ‘পদাসীন কর্মকর্তাদের পদত্যাগে বাধ্য করালেই শিক্ষাক্ষেত্রের ভয়াবহ সংকট কাটবে না। সংকটের শিকড় অনেক গভীরে। বর্তমানে যে অস্থিরতা চলছে, তা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে বের করতে হবে, নইলে যেকোনো সময়ে সেই অবস্থাই ফিরে আসবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে