শিক্ষকদের অবসর হোক সুখময়

চম্পা চক্রবর্তী | সোমবার , ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৮:৪৪ পূর্বাহ্ণ

দেশের শিক্ষকতা পেশার একটা বিশাল অংশজুড়ে আছে এমপিওভুক্ত শিক্ষক। শুরুটা আনন্দের হলেও অবসর হয় বিষাদময়। অনেক ছাত্র লেখাপড়া শেষ করে উৎসাহ নিয়ে অনেক আশা নিয়ে জীবনে প্রথম চাকরি করতে আসে এই শিক্ষকতা। পরিশেষে এ পেশায় সমান্য সম্মান ছাড়া আর কিছু আশা করা যায় না। নিজের জীবনের শখ আহ্লাদ বাদ দিয়েও পরিবারকে কিছুই দেবার থাকে না। আগে ছিল এমপিও বেতন অনিয়ম। এখন সেটা কিছুটা লাঘব হলেও ভোগান্তি শেষ হয় না অবসরে গিয়ে। জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে ভীষণ কষ্টে। একজন শিক্ষকের সারা জীবনের সঞ্চয় সামান্য প্রাপ্যটুকু পেতে ৫/৬ বছর লেগে যায়। অনেক শিক্ষক এই টাকা চোখে দেখার আগে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। কেউ একবারও ভাবে না সারাজীবন এত পরিশ্রম করে মানুষ তৈরির কারিগর যিনি, তিনি জীবনে বিন্দুমাত্র লোভ না করে নিঃস্বার্থভাবে শিক্ষা দিতে গিয়ে নীরবে জীবনের শেষ প্রান্তে চলে এসেছে। উনার এখন সামান্য ঔষধ কেনার খরচ চালাতেও কষ্ট হয়। পেনশন তো নেই। অবসর ভাতাটাও যদি অবসরের পর পর পাওয়া যায় তাহলে সেই শিক্ষক কিছুটা শান্তি পেত। এসব ভোগান্তির কথা শোনে অনেক মেধাবী ছাত্র শিক্ষকতা পেশায় আসতে চায় না। কেউ বলার নেই নীরবে সান্ত্বনা দেবার মতোও কেউ নেই।

অনেক সময় এই সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষকেরা আন্দোলন করলেও শিক্ষা অধিদপ্তর সেটা মেনে নেয় না। পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় এই এমপিও ভুক্ত স্কুলগুলোর শিক্ষকেরা ছাত্রদের জন্য অনেক পরিশ্রম করে। দুর্বল ছাত্রদের বেশি কেয়ার নিয়ে পরীক্ষায় পাশ করতে সাহায্য করে। অনেক ছাত্রের পরিবার মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত মা বাবা লেখাপড়ায় সন্তানকে সাহায্য করতে পারে না। তখন সেই ছাত্রকে শিক্ষক বিনাবেতন পড়ান। অথচ সেই শিক্ষকের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তবুও বিনা স্বার্থে জ্ঞান দান একমাত্র শিক্ষকেরা করে যান। দেখা যায় পরের সন্তান মানুষ করতে গিয়ে নিজের সন্তান মানুষ করা হয় না। এসব কষ্টের কথা কোনোদিন মুখ খুলে কাউকে বলতেও যাবে না। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রতি সরকারের একটু নজর দেবার জন্য অনুরোধ সব শিক্ষকের পক্ষ থেকে। একটু বিবেচনা না করলে এই মহান পেশাটাতে এ প্রজন্ম আর কেউ এগিয়ে আসবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআর কত প্রাণ গেলে সড়কে আমরা সচেতন হবো
পরবর্তী নিবন্ধশিরায় শিরায় আজাদী : রাঙা শৈশব