শিক্ষককে পিটিয়ে বদলি করার হুমকি অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে

সরকারি মহসিন কলেজ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ

এবার পরীক্ষার হলে এক ছাত্রকে দেখে দেখে লিখতে নিষেধ করায় ছাত্রলীগ নেতার কাছে লাঞ্ছিত হয়েছেন সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের এক শিক্ষক। পিটিয়ে ওই শিক্ষককে বদলি করে দেয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের আহবায়ক কাজী নাঈমের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী শিক্ষক কলেজটির হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক। গত ৯ ফেব্রুয়ারি ডিগ্রি প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় এ ঘটনা ঘটে। যদিও বিষয়টি জানাজানি হয়েছে গতকাল (১৩ ফেব্রুয়ারি)

অভিযোগ পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কামরুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, এ ধরনের অভিযোগ পাওয়ার পরবর্তী কর্মদিবসেই (রোববার) ওদের আমরা ডাকি। তারা অন্যায় হয়েছে বলে সবার সামনে স্বীকার করেছে। সরি বলে ক্ষমা চেয়েছে। ওই শিক্ষকও সবার সামনে তাকে মাফ করে দিয়ে বক্তব্য রেখেছেন। এখানেই বিষয়টি শেষ হওয়ার কথা জানিয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ। তবে দায়িত্ব পালনের সময় শিক্ষককে এমন হুমকির পর কেবল ‘সরি’ বলে ঘটনাটির সমাধানে ক্ষোভ রয়ে গেছে শিক্ষকদের মাঝে। মানতে না পারায় কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক রোববারের বৈঠকেই পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজ অধ্যক্ষ দাবি করেন, তিনি (শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক) পদত্যাগ করবেন বলেছেন। তবে আমরা সেটি গ্রহণ করিনি। তার বিরুদ্ধে এর আগেও কলেজের একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগ রয়েছে বলে শিক্ষকরা জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ডিগ্রি প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় সরকারি কমার্স কলেজের কেন্দ্র ছিল হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে। ৯ ফেব্রুয়ারির পরীক্ষায় এক ছাত্র অপর এক শিক্ষার্র্থীর কাছ থেকে দেখে দেখে লিখছিল। হলে দায়িত্বরত শিক্ষকের (হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক) নজরে আসলে তিনি ওই ছাত্রকে সতর্ক করেন। এরপরও ওই ছাত্র কর্নপাত করছিলেন না। বারবার নিষেধ করার এক পর্যায়ে ওই ছাত্র খাতা জমা দিয়ে হল থেকে বের হয়ে যান। কিছুক্ষণ পর কলেজ ছাত্রলীগের আহবায়ক কাজী নাঈমসহ বেশ কয়জনকে নিয়ে হাজির হয় ওই ছাত্র। এসময় ওই ছাত্রকে লিখতে না দেয়ার বিষয়ে দায়িত্বরত শিক্ষকের কাছে জানতে চান কাজী নাঈম। এভাবে পরীক্ষার হলে দেখে লেখার সুযোগ নেই বলে জবাব দেন দায়িত্বরত শিক্ষক।

ঘটনার বিবরণ দিয়ে ভূক্তভোগী শিক্ষক বলেন, এরপর নাঈম আমাকে বলে, ‘আপনি লিখতে দেবেন কিনা?’ আমি বলি, ‘পারবো না’। এরপর নাঈম বলে, ‘আপনাকে মেরে কলেজ থেকে ট্রান্সফার করবো’। এসময় আরও কিছু অশালীন কথা বলে সে চলে যায়। এমনকি এই ঘটনায় আমাদের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক সুবির স্যার নাঈমের কাছ থেকে ঘটনার কারণ জানতে চাইলে সে পাল্টা প্রশ্ন করে বলে, ‘আপনি কে? আপনাকে কেন কৈফিয়ত দিতে যাবো?’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে কাজী নাঈমের মোবাইলে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেন নি। তবে গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যে কাজী নাঈম হুমকিদানের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘স্যার ছাত্রদের পরীক্ষার খাতা নিয়ে নেওয়ায় তারা প্রিন্সিপাল বরাবর অভিযোগ করেছে। আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না।’

এদিকে, ঘটনার পর শিক্ষক পরিষদের পক্ষ থেকে কলেজ অধ্যক্ষকে অভিযোগ দেয়া হয়। রোববার নাঈমকে ডেকে পাঠান অধ্যক্ষ। অধ্যক্ষের মধ্যস্থতায় সবার সামনে ‘সরি’ বলে কাজী নাঈম চলে যান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপদযাত্রা ও পদলেহন করে আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় দেয়া যাবে না : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধমো. সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত