চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে ভুগছেন হাজারো মানুষ। ভূ–গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গ্রামের অধিকাংশ নলকূপই এখন অকেজো। বাধ্য হয়ে অনেকে অনিরাপদ পানি ব্যবহার করছেন, যা থেকে বাড়ছে পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কয়েক বছর আগেও যেসব নলকূপ থেকে পানি উঠতো, এখন সেগুলো শুকিয়ে গেছে। বিশেষ করে গত দুই বছর ধরে পানির সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সমস্যা সমাধানে যাদের সামর্থ্য আছে, তারা বাড়িতে গভীর নলকূপ (সাবমার্জেবল টিউবওয়েল) বসাচ্ছেন। কেউ কেউ পুরোনো নলকূপ আরও গভীরে স্থাপন করে চেষ্টা করছেন। কিন্তু অধিকাংশ দরিদ্র পরিবার বাধ্য হচ্ছেন প্রতিবেশীদের বাড়ি থেকে কলস নিয়ে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে।
শিকলবাহার বখতিয়ার পাড়া, হাজীপাড়া, আমেনা রহমান এলাকা, মিজ্জি গুষ্টি, মইশউড়া, তাতিয়া পুকুরপাড়া, ইব্রাহিম মাঝির পুকুর পাড়, সৈয়দ মাঝির বাড়ি, নোয়াপাড়া, পুলিশ ফাঁড়ি এলাকা ও মাষ্টারহাট গ্রামের চিত্র একই। পাঁচ–ছয় বছর আগের ৪০০–৪৫০ ফুট গভীর নলকূপগুলো এখন শুকিয়ে গেছে। পানি মিলছে একমাত্র ১০০০ ফুটের ওপর গভীরতায় স্থাপিত নলকূপগুলোতে।
মাস্টারহাট এলাকার নাসিমা বেগম, ইকবাল হোসেন ও জমিলা খাতুন বলেন, ‘এক কলস পানি আনতে আধা মাইল হেঁটে আসতে হয়। সারাদিন পানি আনা–নেওয়ার কাজেই পার হয়ে যায়।’ ইব্রাহিম মাঝির পুকুর পাড়ার ইকবাল হোসেন বলেন, দিনের বেলা পানি আনলেও রাতে খুব কষ্ট হয়। রাতে মশার ভিড়, আবার অনেক দূর হাঁটতে হয়।’ স্থানীয় কৃষক ওসমান গনি বলেন, ‘শিকলবাহা জুড়েই পানির জন্য হাহাকার চলছে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত আরও গভীর নলকূপ বসানো।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ও ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে কিছু গভীর নলকূপ বসানো হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। বিশেষ করে ১০০০ ফুট গভীর নলকূপ বসাতে লাখ টাকার ওপরে খরচ হওয়ায় দরিদ্র পরিবারগুলো এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এ বিষয়ে কর্ণফুলী উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী নাজিম উদ্দীন রাসেল বলেন, ‘ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সংকট তৈরি হয়েছে। শিকলবাহা এলাকায় আরও গভীর নলকূপ বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত পর্যাপ্ত সংখ্যক গভীর নলকূপ বসিয়ে শিকলবাহা ইউনিয়নের পানি সংকট দূর করতে হবে। অন্যথায় সামনে বর্ষা–পরবর্তী সময়ে এই সংকট আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।