‘শায়েস্তা খানের আমল’ থেকে ফেরার সিদ্ধান্ত

সাগরিকা রোডের টিউব লাইট ফ্যাক্টরি সর্বনিম্ন দরদাতাকে ভাড়া

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৭ জানুয়ারি, ২০২১ at ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ

চৌদ্দ কোটি টাকার জায়গা ভবনসহ মাসিক মাত্র ৬০ হাজার টাকায় ভাড়া দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) এই কর্মকাণ্ডকে ‘শায়েস্তা খানের আমল’ হিসেবে আখ্যায়িত করে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, বারো হাজার বর্গফুটের বেশি আয়তনের পাকা অবকাঠামো মাত্র ৬০ হাজার টাকা ভাড়া দেয়ার নজির চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক সময়ে নেই। বন্ধ থাকা টিউব লাইট ফ্যাক্টরির অবকাঠামো ‘পছন্দের ব্যক্তি’র জন্য এই টাকায় ভাড়া দেয়া হয়েছে। আয়বর্ধনের নামে টেন্ডার আহ্বান করে সর্বোচ্চ দরদাতাকে ভাড়া না দিয়ে অর্ধেকের কমে সর্বনিম্ন দরদাতাকে প্রদান করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশও করা হয়েছে উপেক্ষা। বিষয়টি নিয়ে দুদকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করা হয়েছে। নানামুখী অভিযোগের প্রেক্ষিতে টেন্ডার বাতিল করে দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আয় বাড়ানোর জন্য ২০১৯ সালে চসিক তাদের মালিকানাধীন সাগরিকা রোডে টিউব লাইট ফ্যাক্টরির অবকাঠামো ভাড়া দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এখানে ১৭ কাঠা ভূমির উপর একটি পাকা অবকাঠামো রয়েছে। ১৮১ ফুট দীর্ঘ এবং ৬৭ ফুট প্রস্থের ১২ হাজার ১২৭ বর্গফুট আয়তনের জায়গাটি ভাড়া দেয়ার জন্য ২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারি দরপত্র আহ্বান করা হয়। পাঁচ বছর পর নবায়নসহ পঁচিশ বছরের জন্য জায়গা এবং ভবন ভাড়া প্রদানের উক্ত টেন্ডারে সাতটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এর মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠানের দরপত্র প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাবে শুরুতে বাতিল হয়ে যায়। বাকি তিনটি প্রতিষ্ঠানের দরপত্র গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে জামশেদ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান মাসিক ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা ভাড়া দেয়ার প্রস্তাব করে। কাজী ইলেকট্রনিঙ ১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ভাড়া দেয়ার প্রস্তাব করে দ্বিতীয় এবং এস এস কর্পোরেশন এন্ড সিন্ডিকেট মাসিক ৬০ হাজার টাকা ভাড়া প্রদানের প্রস্তাব করে তৃতীয় বা সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরও দীর্ঘদিন সর্বোচ্চ দরদাতা বরাবরে ভবনসহ জায়গাটি ভাড়ার কার্যাদেশ না দিয়ে নানাভাবে ঘোরাঘুরি করা হয়। পঞ্চাশ লাখ টাকা জামানত হিসেবে আটকে থাকাসহ বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ এনে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান জামশেদ এন্টারপ্রাইজ উচ্চ আদালতে রিট করে। আদালত থেকে এক মাসের মধ্যে আবেদনকারীর বিষয়টি সুরাহা করার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু আদালতের এই নির্দেশনার কয়েক দিনের মাথায় ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান এস এস কর্পোরেশন এন্ড সিন্ডিকেটকে মাসিক মাত্র ৬০ হাজার টাকা ভাড়ায় ভবনসহ ১৭ কাঠা জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়।
বিষয়টি জানাজানি হলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। চসিকের সাবেক মেয়র, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাসহ নানাজনের কাছে ধর্না দিয়েও কোনো সদুত্তর পাননি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জামশেদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ জামশেদ খান। তিনি তথ্য আইনে আবেদন করেও বিষয়টি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েও কেন টেন্ডার পেলেন না কিংবা আয়বর্ধনের নামে করা কাজে সুনিশ্চিত আয় কেন হাতছাড়া করা হচ্ছে তা জানতে নানাভাবে চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
মোহাম্মদ জামশেদ খান বলেন, নানাভাবে চেষ্টা করেছি। কিন্তু কারো কাছ থেকে সদুত্তর পাইনি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আমাকে শুধু জামানতের পঞ্চাশ লাখ টাকা তুলে নেয়ার জন্য পরামর্শ দিতেন। তিনি পরবর্তীতে দুদকসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেন, সিটি কর্পোরেশনের সংঘবদ্ধ একটি চক্র নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে কৌশলে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে জায়গাটি প্রদান করেছে।
এ বিষয়ে চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের সাথেও দেখা করেন সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। কিন্তু এ বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
আজাদীর পক্ষ থেকে গতকাল একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তারা বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজী হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এস্টেট শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, কোনো কারণ ছাড়াই ভবনটি ২৫ বছরের জন্য ভাড়া দেয়া হয়েছে। পুরো বিষয়টি অনিয়মে ভরা।
এ ব্যাপারে চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, টিউব লাইট ফ্যাক্টরি ভাড়া দেয়ার নামে অনিয়ম হয়েছে। প্রথমত, মাত্র ৬০ হাজার টাকার জন্য এত বড় একটি জায়গা ভাড়া দেয়ার মতো দেউলিয়া প্রতিষ্ঠান সিটি কর্পোরেশন নয়। আয়বর্ধক প্রকল্পের নামে তুঘলকি একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের বহু মালামাল গুদামের অভাবে সংরক্ষণ করতে কষ্ট হচ্ছে। কোটি কোটি টাকার গাড়ি উন্মুক্ত আকাশের নিচে পড়ে থাকে। এটিকে গাড়ির গ্যারেজ হিসেবে ব্যবহার করলেও সিটি কর্পোরেশন লাভবান হবে। তাছাড়া ১ লাখ ৪২ হাজার টাকার প্রস্তাব থাকার পরও কেন ৬০ হাজার টাকায় এত বড় জায়গাটি ভবনসহ ভাড়া দেয়া হলো তা রহস্যজনক।
তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখেছি। দুদকসহ বিভিন্ন সংস্থায় এই ব্যাপারে অভিযোগ করা হয়েছে। আমরা উক্ত টেন্ডার বাতিল করার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জায়গাটি নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতিন পৌরসভায় মেয়র আওয়ামী লীগের
পরবর্তী নিবন্ধপৌর ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে : ইসি সচিব