“১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের পর সবকিছু নতুনভাবে শুরু হয়; এমনকি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডও। আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে রিক্রিয়েশন ক্লাব রূপান্তরিত হয় ওয়াজিউল্লাহ্ ইন্সটিটিউট–এ। … ব্রিটিশ শাসনামলে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এনায়েত বাজার এলাকায় (বর্তমান বিআরটিসি বাস স্ট্যান্ডের উত্তর–পূর্ব দিকে) রেলওয়ে ইংরেজ কর্মচারিদের বিনোদনের জন্য এ মিলনায়তনটি নির্মাণ করে। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান ইস্টার্ন রেলওয়ে এই মিলনায়তনের সংস্কার করে। তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান রেলওয়ে এমপ্লয়িজ লিগ–এর চট্টগ্রাম শাখার সেক্রেটারি ওয়াজিউল্লাহ্’র নামানুসারে এই মিলনায়তনের নামকরণ করা হয় ওয়াজিউল্লাহ্ ইনস্টিটিউট। এই মিলনায়তনে ২০০ থেকে ২৫০ দর্শক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারতেন। চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক আন্দোলনে ওয়াজিউল্লাহ্ ইনস্টিটিউটের রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ভূমিকা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে চট্টগ্রামের যাবতীয় সুস্থ ও গণমুখী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এই হলকে ঘিরেই পরিচালিত হতো। ষাটের দশকে নজরুল হীরকজয়ন্তীর অনুষ্ঠানমালা এখানেই পরিবেশিত হয়েছিল। পাকিস্তান আমলে গণমুখী শিল্পীদের সমস্ত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো এই মিলনায়তনে। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে ওয়াজিউল্লাহ্ ইনস্টিটিউটকে পলোগ্রাউন্ড–এর পাশে নির্মিত নতুন ভবনে স্থানান্তরিত করা হলে পুরনো ওয়াজিউল্লাহ্ ইনস্টিটিউট ব্যবহারিক গুরুত্ব হারায়।” (হাজার বছরের চট্টগ্রাম, দৈনিক আজাদী ৩৫ বছর পূর্তি বিশেষ সংখ্যা, নভেম্বর, ১৯৯৫)
উপর্যুক্ত উদ্ধৃতিটি অনুধাবনের সুবিধার্থে ড. মাহবুবুল হকের (১৯৪৮–২০২৪) লেখা থেকে উদ্ধৃত করছি, “নিপুর বাবা জনাব ওয়াজিউল্লাহ্ ছিলেন একজন সাংস্কৃতিক সংগঠক। তাই চট্টগ্রামে রেলওয়ে শ্রমিক–কর্মচারীদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটির নাম তাঁর নামে নামাঙ্কিত করে রাখা হয়েছিল ওয়াজিউল্লাহ্ ইনস্টিটিউট। নিপু সম্ভবত বাবার এই গুণটি পেয়ে থাকবেন। আর সেই কারণেই ছাত্রজীবন থেকে শুরু হয়েছিল সাংস্কৃতিক দিগন্তে তাঁর পথচলা।” (নিপুর ষাট বছর পূর্ণ হয়ে গেল! – ড. মাহবুবুল হক, মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপুর ৬০তম জন্মবার্ষিকী স্মারকগ্রন্থ ‘নিপুর ষাট’, সম্পাদক আকাশ মাহমুদ, কালধারা প্রকাশনী, ডিসেম্বর ২০১২।)
বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম নিপুভাইয়ের কেতাবি নাম মোহাম্মদ মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু। জন্ম ১৯৫২ সালের ২১ মে। আর গত ২ আগস্ট ২০২৫–এ তিনি সবকিছুর উর্ধ্বে চলে গিয়েছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। পিতা মোহাম্মদ ওয়াজিউল্লাহ্্ ও মাতা শামসুন্নাহার বেগমের নয়জন পুত্র–কন্যার মধ্যে নিপুভাই ষষ্ঠতম এবং চতুর্থ পুত্র। চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী মিঠাছড়া বাজারের পশ্চিম পাশে হাটাদূরত্বে জোড়পুনি গ্রামের কাদির বক্স ভূঁইয়া বাড়ির কৃতী সন্তান শাহ আলম নিপুভাই। বাড়িটি মুক্তিযোদ্ধা বাড়ি নামেও পরিচিত। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন এই বাড়িতে।১৯৭১ সালের উত্তাল সময়ে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে মমতাজউদদীন আহমদ (১৯৩৫–২০১৯) রচনা করেন ‘এবারের সংগ্রাম’ ও ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম’ নাটক দুটি। ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ চট্টগ্রাম কলেজ সংলগ্ন প্যারেড মাঠে তাঁর রচিত ও নির্দেশিত ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম’ নাটকটি দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে উপস্থিত জনতা চট্টগ্রাম বন্দরে হানা দিয়ে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক পাঠানো ‘সোয়াত’ জাহাজ হতে অস্ত্র খালাসে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। (সূত্র: ড. ইউসুফ ইকবাল) নিপুভাইয়ের বয়স তখন মাত্র ১৮ বছর, বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন ছাত্র। তিনি ২৫ মার্চ চট্টগ্রাম শহর থেকে মীরসরাইয়ের মিঠাছড়ায় নিজ বাড়িতে যান মিঠাছড়া স্কুল মাঠে মমতাজউদদীন আহমদের নাটক দুটি মঞ্চায়নের ব্যবস্থা করতে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মীরসরাইতেই তৎকালীন স্থানীয় এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি তিনি চট্টগ্রাম শহরে চলে আসেন এবং শহরের মুক্তিযোদ্ধ গ্রুপগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে গেরিলা কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন।
চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, চট্টগ্রাম কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কেটেছে তাঁর শিক্ষাজীবন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অনার্স প্রথম ব্যাচের (১৯৭০) ছাত্র ছিলেন তিনি। এই বিভাগ থেকে তিনি মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি চাকসু’র নির্বাচিত বার্ষিকী সম্পাদক ছিলেন এবং তাঁর সম্পাদনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বার্ষিকী চতুর্থ ও পঞ্চম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র–ছাত্রীদের সংগঠন‘অতি সাম্প্রতিক আমরা’ প্রতিষ্ঠায় সম্পৃক্ত ছিলেন এবং ছিলেন এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। এই সংগঠন থেকে মুনির চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকটি মঞ্চায়নে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁরা কয়েকজন প্রতিষ্ঠা করেন চট্টগ্রামের প্রথম গ্রুপ থিয়েটার সংগঠন এবং দেশের গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনের সূচনালগ্নের সংগঠন ‘থিয়েটার–৭৩’। ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি চিটাগাং ক্লাব মিলনায়তনে জহির রায়হানের গল্প অবলম্বনে ‘ম্যাসাকার’ ও মমতাজউদদীন আহমদের ‘স্পার্টাকাস বিষয়ক জটিলতা’ নাটক দুটি মঞ্চায়নের মাধ্যমে ‘থিয়েটার–৭৩’ আত্মপ্রকাশ করে। পরবর্তীতে তিনি এই সংগঠনের সভাপতি পদ অলংকৃত করেন। ১৯৯৩ সালে সংগঠনটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এই সংগঠনের ব্যানারে তিনি ‘মঞ্চ’ নামে একটি নাট্যপত্রিকা সম্পাদনা করতেন। দেশের গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনে পত্রিকাটির ভূমিকা অপরিসীম। ‘মঞ্চে’র ছয়টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রাবস্থায় তিনি সাংবাদিকতা করতেন। ১৯৭৩ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশিত তাঁর ‘সূর্যসেনের ভিটায় ঘুঘু চরে’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি দৈনিক গণকণ্ঠ ও মাসিক জোনাকী পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন।
নিপুভাই একজন বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী। ১৯৮১ সাল থেকে আমৃত্যু তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট মেম্বার ছিলেন। ১৯৭৪–১৯৭৬ পর্যন্ত বারৈয়ারহাট কলেজ পরিচালনা পরিষদের সদস্য, একই পদে ১৯৮৫–১৯৮৮ পর্যন্ত সীতাকুণ্ড ডিগ্রি কলেজের পরিচালনা পরিষদে, ১৯৮৯–১৯৯১ পর্যন্ত মীরসরাই ডিগ্রি কলেজের পরিচালনা পরিষদে, ১৯৯৩–১৯৯৬ পর্যন্ত নিজামপুর কলেজের পরিচালনা পরিষদে সম্পৃক্ত থেকে শিক্ষাবিস্তারে অবদান রাখেন।
নিপুভাইয়ের সাংগঠনিক মানস ও নেতৃত্বদানের অভ্যাসটি গড়ে উঠে স্কুল জীবন থেকেই। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল ছাত্র সংসদের সহ–সভাপতি ছিলেন তিনি। ছিলেন ওই স্কুলেরই স্কাউট ও জুনিয়র ক্যাডেট কোরের প্লাটুন কমাণ্ডার। বাকীটা ইতিহাস। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে পরবর্তী জীবনে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। এই তালিকা করতে গেলে প্রায় অর্ধশত সংখ্যা হয়ে যাবে। গত দুই দশক তিনি সাংগঠনিকভাবে বেশি ব্যস্ত ছিলেন আন্তর্জাতিক এপেক্স ক্লাব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট, মীরসরাই এসোসিয়েশন, কালধারা পরিষদ ও চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ নিয়ে। সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের আকার ও কর্মপরিধি বৃদ্ধি করা এবং এই পরিষদের মাধ্যমে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় চট্টগ্রামে একটি বড় রকমের বইমেলা ধারাবাহিকভাবে আয়োজনে তাঁর ভূমিকা অনন্য। কালধারা পরিষদের তিনি প্রারম্ভিককাল (১৯৯১) থেকে সভাপতি। এই পরিষদের উদ্যোগে কালধারা সাহিত্য পত্রিকা ও বার্ষিক কালধারা কবিতাসন্ধ্যা সাহিত্যিক, সাহিত্যপিপাসু ও সাহিত্য সমালোচকদের মুগ্ধ করেছে। কালধারা একইসাথে পত্রিকা হিসেবে ও সংগঠন হিসেব একটি সমীহ জাগানিয়া অবস্থান তৈরী করতে পেরেছে চট্টগ্রামে ও দেশে।
শাহ আলম নিপুভাই ছিলেন একজন ফুটবল ও ক্রিকেট খেলোয়াড়। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল দল ও ক্রিকেটদলের অপরিহার্য খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রাবস্থায় পেপটিক আলসারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল তাঁকে। এই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি খেলাধুলা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। বাড়তি সময়টুকুতে নিজেকে সাংস্কৃতিক ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অত্যধিক নিয়োজিত করেন। কৈশোরোত্তীর্ণ কাল থেকে তিনি সৌখিন আলোকচিত্রশিল্পী।
সর্বকালের শ্রেষ্ঠ–বাঙালি মনীষীদের একজন অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান (১৯৩৭–২০২০) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন ১৯৬৯ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত। ২০১২ সালে প্রকাশিত স্মারকগ্রন্থ নিপুর ষাট–এ তিনি লিখেছেন, “আমার চট্টগ্রাম বাসকালে মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপুকে খুব নিকট থেকে দেখার সুযোগ আমার হয়েছিল। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনে এবং সাংগঠনিক কাজে তার মতো সক্রীয় মানুষ বেশি ছিল না। পরে ছোট কাগজের সম্পাদক রূপেও নিপু খুব সাফল্য অর্জন করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে নিপু অবিরাম পথ চলছে। তার জীবন দীর্ঘ হোক, আরো কর্মে ও সাফল্যে পূর্ণ হোক, এই কামনা।”
২০১২ সালে ড. আনিসুজ্জামানের এই প্রত্যাশা–পরবর্তী নিপুভাই আরো একযুগ একবছর কর্মে, গুণে ও সাফল্যে উজ্জীবিত ছিলেন। জীবনের চুয়াত্তরটি বছর অতিবাহিত করে তিনি পরলোকগমণ করলেন। সদালাপী, মৃদুভাষী, মিষ্টভাষী, নিরহঙ্কারী এই কর্মবীরের সমাজকে আরও অনেক কিছু দেওয়ার ছিল। বড় অসময়ে চলে গেলেন তিনি। ‘জীবন, সে তো পদ্মপাতায় শিশিরবিন্দু।’ তাঁর চাচা অধ্যাপক আহমদ কবির (১৯৪৪–২০২১) মনে করতেন, “সংগঠনের পরিকল্পনায় নিপু সবসময় নিপুণতার পরিচয় দেয়।” (প্রাগুক্ত)
মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপুভাই সর্বশেষ সৃজন–মননকর্ম সমাপ্ত করেও আনুষ্ঠানিকভাবে লেখক–পাঠকদের হাতে গ্রন্থটি তুলে দিয়ে যেতে পারলেন না। তাঁর আশৈশব–বন্ধু ও ফুফাতো ভাই সাহিত্যিক আকাশ মাহমুদকে (লে. ক. অব. ড. মাহমুদ উল আলম) নিয়ে সম্মাননাগ্রন্থের যাবতীয় কাজ সমাপন হয়েছে এই বছরের শুরুতে। জুলাইতে আনুষ্ঠানিকভাবে মোড়ক উন্মোচনের পরিকল্পনা ছিল। তিনি ভেবেছিলেন বর্ষার প্রকোপটা কমুক। ঘটা করে একটি আয়োজনের মাধ্যমে গ্রন্থটি লেখক–পাঠকের হাতে তুলে দেবেন। কোথায় কি! গ্রন্থের প্রচ্ছদের মতো কাফনের কাপড়ে মুড়িয়ে আমরাই তাঁকে মাটির ঘরে চিরনিদ্রায় শুইয়ে দিলাম।
নিপুভাই এবং আকাশ মাহমুদ আশৈশব বন্ধু এবং মামাতো–ফুফাতো ভাই। সমাজের দৃষ্টিতে বোকা ও একগুঁয়ে শাহ আলম নিপু ১৯৭৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে যখন ছাপাখানা ও প্রকাশনাশিল্পে আত্মনিয়োগ করলেন, তখন বন্ধু ও ফুফাতো ভাই আকাশ মাহমুদও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের পাঠ চুকিয়ে মামাতো ভাই–বন্ধু নিপুর সাথে জুটলেন। নিপু ভাইয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘নিবেদন’ নামটি আকাশ মাহমুদেরই দেওয়া। প্রথমে ছিল নিবেদন প্রেস। নব্বইয়ের দশকে এসে হলো নিবেদন প্রিন্টার্স, পরবর্তীতে নিবেদন লিমিটেড। ২০১২ সালে নিপুভাইকে নিয়ে স্মারকগ্রন্থ ‘নিপুর ষাট’ আকাশ মাহমুদের সম্পাদনাতেই প্রকাশিত হয়। পেশাগত কারণে নিপুভাই চট্টগ্রাম নগরীর এবং আকাশ মাহমুদ ভাই ঢাকা নগরীর বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও প্রতিমাসে অন্তত একবার তাঁদের দেখা হতো। এমনকি নিপুভাই ১ আগস্ট ঢাকায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে যাওয়া–পরবর্তী সময় থেকে ২ আগস্ট সকালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত আকাশ মাহমুদ ভাই পাশে ছিলেন।
লেখক : নাট্যকর্মী ও শিক্ষক;সম্পাদক, নাট্যমঞ্চ