চট্টগ্রাম শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বরের জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ বাসস্ট্যান্ডের কারণে এই রুটের যাত্রীদের নিত্য যানজটের ভোগান্তি বছরের পর বছরও শেষ হচ্ছে না। এই গোলচত্বরের যানজটের কবলে পড়ে প্রতিদিন দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ কক্সবাজার ও বান্দরবানের কয়েক লাখ যাত্রীকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দুর্ভোগে পড়তে হয়।
কর্ণফুলী সেতু এলাকার ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শাহ আমানত সেতুর গোল চত্বর থেকে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন রুটে এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রতিটি উপজেলাসহ কক্সবাজার ও বান্দরবান রুটে অন্তত ২১ ধরনের যানবাহন চলাচল করে। শাহ আমানত সেতুর টোল প্লাজার ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, শাহ আমানত সেতু দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রতিটি উপজেলায় এবং কক্সবাজার ও বান্দরবান রুটে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ২৭ হাজারের বেশি গাড়ি চলাচল করে। এছাড়াও নগরীর ১৯টি রুটের বাস, টেম্পো, হিউম্যান হলার থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের শত শত গাড়ি চলাচল করে শাহ আমানত সেতুর এ গোলচত্বর হয়ে। গাড়ির তুলনায় সড়কের পরিধি কম হওয়ার কারণে নিত্য যানজট লেগেই থাকে। অন্যদিকে সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার অভাবে মাত্রাতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর প্রতিযোগিতা চলে এই গোলচত্বরের চারপাশে।
গত বৃহস্পতিবার শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বর এলাকায় গিয়ে ট্রাফিক পুলিশ এবং যাত্রী সাধারণের সাথে কথা হলে তারা জানান, গোল চত্বরের চতুর্পাশে সড়ক ও জনপথের খোলা জায়গা জুড়ে বছরের পর বছর প্রভাবশালীরা তাদের বাসের স্ট্যান্ড বানিয়ে রেখেছে। এই প্রভাবশালীদের বাসগুলো এই গোলচত্বর থেকে সরানোর জন্য একাধিকবার উদ্যোগ নেয়া হলেও সম্ভব হয়নি বলে জানান ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। বাস–জিপ–টেম্পো, হিউম্যান হলার, সিএনজি তাদের অঘোষিত স্ট্যান্ড বানিয়ে রেখেছে। এসব যানবাহন মালিকদের নিজস্ব কোনো জায়গা নেই তাদের গাড়ি রাখার জন্য। তারা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এ গোলচত্বরের দুইপাশে গাড়ি চলাচলের জায়গাসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার জায়গা দখল করে গাড়ি রেখে যাত্রী তুলেন এবং গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখেন। এই কারণে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বর এলাকায় দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে।
সপ্তাহের প্রতিটা দিন বিশেষ করে অফিস খোলার দিনে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত দক্ষিণ চট্টগ্রামগামী স্কুল–কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষক–শিক্ষার্থী–অফিসগামী কর্মকর্তা–কর্মচারী এবং শহরমুখী ব্যবসায়ী–সাধারণ যাত্রীদের পদচারণায় কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বর এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে আসা সকল যানবাহনের স্টপেজ হলো শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বর। সকল রুটের যানবাহন থেকে এখানে নেমে যাত্রীরা যে যার মত করে নগরীর বিভিন্ন রুটে চলে যান। আবার এই চত্বরে এসে যে যার মত রুটের গাড়িতে উঠে কর্মক্ষেত্রের গন্তব্যে যান। বলতে গেলে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বর এলাকাটি বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসীর সড়ক যোগাযোগের মহাজংশন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কয়েক হাজার যানবাহনের অবৈধ স্টপেজের কারণে সেখানে যানবাহনের কোনো শৃঙ্খলা নেই বললেই চলে। যানবাহনগুলো অবৈধভাবে চললেও অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করছে ট্রাফিক বিভাগ। গুঞ্জন রয়েছে, প্রতিটি যানবাহনের লাইন থেকে মাসিক মাসোহারা নিয়ে থাকে ট্রাফিক ও পটিয়া হাইওয়ে পুলিশ। তবে চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে সংশ্লিষ্টরা।
এসময় দেখা যায়, শাহ আমানত সেতুর গোল চত্বর থেকে সেতুর ভেতরের অংশ পর্যন্ত অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে বাস ও সিএনজিচালিত টেঙি স্ট্যান্ড। এসব অবৈধ স্ট্যান্ডের চাপে মোড় পার হতে একেকটি যানবাহনের সময় লাগছে আধঘণ্টা থেকে একঘণ্টা পর্যন্ত। সড়কের ওপর থেকে ছাড়া হয় পটিয়া–শান্তিরহাটগামী হিউম্যান হলার, বাস–মিনিবাস, নিউ মার্কেটমুখী মাহিন্দ্রা ও লেগুনা। পুরো গোল চত্বর জুড়ে অবৈধ যানের ছড়াছড়ি। গোল চত্বর থেকে সেতুর প্রবেশমুখে দাঁড়ানো রয়েছে গ্রাম সিএনজি টেঙি ও একাধিক বাস। ট্রাফিক পুলিশ সরানোর নিষ্ফল চেষ্টা করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাহ আমানত সেতুর গোল চত্বর থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, শান্তিরহাট, দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, আনোয়ারা ও বাঁশখালীর উদ্দেশ্যে প্রতিদিন ছেড়ে যায় হাজারেরও বেশি যানবাহন। এরমধ্যে রয়েছে হিউম্যান হলার, লেগুনা, বাঁশখালী সার্ভিস মিনিবাস, ঈগল ফার্স্ট সুপার সার্ভিস, ঈগল প্লাস, ঈগল, ঈগল–১ ও ঈগল স্পেশাল সার্ভিস।
শাহ আমানত সেতুর টোল প্লাজার ইজারাদার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ–ভারত যৌথ কোম্পানি সেল–ভ্যান জেভির প্রকল্প ব্যবস্থাপক সুমন ঘোষ জানান, শাহ আমানত সেতু দিয়ে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ২৭ হাজারের বেশি গাড়ি চলাচল করে। তিনি বলেন, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার যানবাহনের চাপ কিছুটা বাড়ে। ৮টি লেন দিয়ে টোল আদায় করা হলেও ছুটির দিনে চাপ বেড়ে যানজট সৃষ্টি হয়। সওজ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দুই পাশে আরও দুটি লেইন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এতে বুথের সংখ্যা ৮টি থেকে বেড়ে ১০টি হবে। আশা করা হচ্ছে, এর ফলে যানজটের সমস্যা অনেকটাই সমাধান হবে।
মইজ্জ্যারটেক এলাকার ট্রাফিক ইনচার্জ (টিআই) আবু সাঈদ আকাশ বলেন, এই রুটে যানবাহনের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আমাদের ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন যানজট নিয়ন্ত্রণ রাখতে। নতুন করে ট্রাফিক পুলিশ বঙ নির্মাণের কাজ চলছে। তবুও গাড়ির চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
শাহ আমানত সেতু থেকে টোলপ্লাজা হয়ে মইজ্জ্যারটেক এলাকা পর্যন্ত দীর্ঘ ভয়াবহ যানজটের কারণে যাত্রী, অ্যাম্বুলেন্সের রোগী, শিক্ষার্থী, চাকরিজীবীসহ সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মাসের পর মাস; বছরের পর বছর।