শাহ আমানত বিমানবন্দরে অগ্নি নির্বাপণ মহড়া

উন্নত প্রযুক্তি ও সরঞ্জামের ব্যবহার

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২২ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ

অগ্নি দুর্ঘটনা পরিস্থিতি মোকাবেলার অংশ হিসেবে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পূর্ণাঙ্গ অগ্নি নির্বাপণ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এই মহড়ায় নেপচুন এয়ারলাইন্সের একটি ডামি বিমানে কৃত্রিম দুর্ঘটনার পরিস্থিতি তৈরি করা হয়, যেখানে বিমানটি অবতরণের সময় আগুন লেগে যায়। এরপর সিভিল এভিয়েশন, সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস এবং পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং হতাহতদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। মহড়ায় ব্যবহৃত হয় উন্নত প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম, যা প্রকৃত দুর্ঘটনার সময় কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই মহড়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল কোনো উড়োজাহাজে দুর্ঘটনার পর অগ্নি নির্বাপণ এবং যাত্রীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া অনুশীলন করা। পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থার যৌথ সমন্বয় এবং দ্রুত কার্যক্রমের মাধ্যমে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। মহড়ায় ফায়ার ক্রুদের দক্ষতা ও পেশাগত জ্ঞান বৃদ্ধি এবং সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতির কার্যকারিতা যাচাই করা হয়, যাতে কোনো ত্রুটি চিহ্নিত হলে তা দ্রুত সমাধান করে বাস্তব দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিশ্চিত করা যায়। মহড়ায় বেবিচক, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার, ফায়ার সার্ভিস, র‌্যাব, এপিবিএন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল চট্টগ্রাম, বিমানবন্দর স্বাস্থ্য কেন্দ্র, চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতাল, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএসবাংলা, এয়ার এস্ট্রা এবং নভোএয়ারসহ বিভিন্ন সংস্থা একযোগে অংশ নেয়। মহড়ায় দেখানো হয়েছে, ৬৫ জন যাত্রী এবং ক্রু নিয়ে নেপচুন এয়ারলাইন্সের একটি মাঝারি ধরনের উড়োজাহাজ এয়ারবাস৩২০, যার কলসাইন নেপচুন ৪০৬, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে২৩ এর পূর্ব দিক থেকে অবতরণ করে। রানওয়ে২৩এ অবতরণের পরপরই বিমানটি অপ্রত্যাশিতভাবে রানওয়ে থেকে সরে ট্যাঙিওয়ে ব্রাভোর ২০০ ফুট দূরে কার্গো এপ্রোনের সামনে গিয়ে ছিটকে পড়ে। সহসা উড়োজাহাজের ডান পাশের ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায়। মুহূর্তের মধ্যে কন্ট্রোল টাওয়ার বিষয়টি অবলোকন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ক্রাস অ্যালার্ম সুইচ অন করার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকলকে অবগত করে। সেইসাথে কন্ট্রোল টাওয়ার বিমানবন্দরের ফায়ার স্টেশন, বিমানবন্দর পরিচালক, স্যাটো, সহকারী পরিচালককে (ফায়ার) তাৎক্ষণিকভাবে অবগত করে। ইতোমধ্যে উড়োজাহাজের নিচের অংশ দিয়ে আগুন দেখা দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটিতে পুরোপুরি আগুন ধরে যায়। সর্বশেষ ৪০ জন যাত্রীকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়, ২১ জন আহত হয় এবং ৪ জন মারা যায়।

মহড়ায় প্রধান অতিথি ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইকাও) নির্দেশিকা অনুযায়ী, বিমানবন্দরে কর্মরত ফায়ার ক্রুদের দক্ষতা ও পেশাগত জ্ঞান উন্নত করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রপাতিগুলো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্যোগের সময় কার্যকরভাবে ব্যবহারের উপযোগিতা যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারই অংশ হিসেবে আজকের এ মহড়ার আয়োজন করা হয়। সবাই অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, এ ধরনের মহড়া আমাদের আত্মবিশ্বাস জোগায়; যেকোনো অনভিপ্রেত পরিস্থিতিতে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারব।

এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া। তিনি বলেন, জরুরি মুহূর্তে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই ধরনের মহড়া গুরুত্বপূর্ণ। সরকারিবেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা বিমানের অগ্নি নির্বাপণ ও যাত্রী উদ্ধার তৎপরতায় প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা অর্জন করছি। যেকোনো অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য সবাইকে সর্বোচ্চ প্রস্তুত থাকতে হবে। মহড়াতে আমরা যা দেখিয়েছি, বাস্তব অগ্নি দুর্ঘটনা আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করে। কারণ বিমানে প্রচুর পরিমাণ জ্বালানি থাকে।

মহড়ায় বেবিচক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনসহ অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিক্ষায় কেউ দৃষ্টি দিচ্ছে না,কথাও বলছে না : ফখরুল
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা