শাহবাগে বিক্ষোভ মিছিল পুলিশের লাঠিপেটা

লেখক মুশতাকের মৃত্যুতে তদন্ত কমিটি

আজাদী ডেস্ক | শনিবার , ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৫:১২ পূর্বাহ্ণ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দি মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় শাহবাগে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর বিক্ষোভ মিছিলে লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। এসময় ৩০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিক্ষোভকারীরা। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে সকালেও শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো। এক ঘণ্টার বেশি সময় বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নেয়। ফলে শাহবাগ মোড়ের চারপাশের রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হয়। বিকালে প্রতিবাদ সমাবেশ ও গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে শাহবাগে। এদিকে লেখক মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনায় দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তার মৃত্যুতে একটি ‘অপমৃত্যু’ মামলা করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

শাহবাগে মিছিলে পুলিশের লাঠিপেটা: প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নেতাকর্মীরা বলছেন, পুলিশ তাদের ‘শান্তিপূর্ণ’ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে, ‘রাস্তার আলো বন্ধ করে’ তাদের লাঠিপেটা করেছে এবং কাঁদুনে গ্যাস ছুড়েছে। তবে পুলিশ বলছে, মশাল মিছিল থেকে তাদের উপর আক্রমণ হওয়ার পর তারা ‘আত্মরক্ষামূলক’ পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে মশাল মিছিলটি শাহবাগে গিয়ে পুলিশের বাধা পায়। সেখানে বাক-বিতণ্ডার একপর্যায়ে পুলিশ রাস্তার ল্যাম্পলাইট বন্ধ করে বিক্ষোভকারীদের লাঠিপেটা শুরু করে। পরে বিক্ষোভকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাসের শেল ছুড়ে তাদের ধাওয়া দেয়। এরপর মিছিলকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সরে এলে সেখানেও কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয়।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স বলেন, পুলিশ আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে। রাস্তার লাইট অফ করে আমাদের উপর লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করেছে। বাধা পেয়ে ফিরে আসার সময় পুলিশ পেছন থেকে ধাওয়া করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঢুকেও পিটিয়েছে। এতে আমিসহ আমাদের ৩০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। এই হামলার প্রতিবাদে আমরা আগামীকাল বিক্ষোভ করব। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে তিনি জানান। পুলিশের রমনা জোনের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সকাল থেকেই শাহবাগে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ও বিভিন্ন ব্যানারে বিক্ষোভ করেছে। আন্দোলন সংগ্রাম করবে সেটা ঠিক আছে। কিন্তু পুলিশের উপর হামলা! পুলিশ অনেক ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করেছে।
তদন্ত কমিটি গঠন: লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম তরিকুল ইসলাম এ খবর নিশ্চিত করেন। জেলা প্রশাসক জানান, গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন, গাজীপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াসিউজ্জামান চৌধুরী ও উম্মে হাবিবা ফারজানা।
প্রতিবাদ সমাবেশ ও গায়েবানা জানাজা: গতকাল বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানানো হয়। একইসঙ্গে এই আইনে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি তোলা হয়েছে। এ ঘটনাকে ‘রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে বর্ণনা করে সমাবেশ থেকে ৩ মার্চ সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সমাবেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, লেখক মুশতাক আহমেদকে হত্যা করা হয়েছে। সরকার, আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা প্রত্যেকে এর জন্য দায়ী। বিচারপতিরা যদি এই হত্যার দায় উন্মোচন না করেন, তাহলে তারাও এই হত্যায় দায়ী। বিচারপতিদের বলা উচিত এই আইন মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি, এই আইন কোনোক্রমেই থাকতে পারে না। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত করে রায় দিতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানান জাফররুল্লাহ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, মুশতাক তরুণদেরকে স্বপ্ন দেখাতেন। এই স্বপ্ন দেখানো মানুষটার স্বপ্নকে শুধু হত্যা করা হয়নি, এই মানুষটাকেও আজকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টকে দায়ী করছি। মুশতাক হত্যার জন্য, কার্টুনিস্ট কিশোরের জেলে থাকার জন্য যারা এই আইন তৈরি করেছে, যারা প্রয়োগ করছে তারা সকলেই দায়ী।
সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, মুশতাকের হত্যাকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত হয়, এই সরকার জনগণের সরকার না। এই রাষ্ট্র খুনি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর বলেন, আমাদের মত-পথের ভিন্নতা আছে। কিন্তু আজ যদি আমরা সংগঠিত হতে না পারি, একত্রিত হতে না পারি, তাহলে আমাদের অবস্থাও লেখক মুশতাকের মত হবে। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে লেখক মুশতাকের গায়েবানা জানাজা হয়। সেখানে ইমামতি করেন ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসাইন। এরপর লেখক মুশতাকের একটি লেখার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিক্ষোভকারীরা শহীদ মিনারে গিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাল নিলামে তোলা হচ্ছে ৫০ লট পণ্য
পরবর্তী নিবন্ধডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মানুষের নিরাপত্তার জন্যই : তথ্যমন্ত্রী