শাহজালালে বিদেশি যাত্রীর ব্যাগে ১৩০ কোটি টাকার কোকেন

গায়ানার সেই নারী ফের পুরনো কারবারে

আজাদী ডেস্ক  | বুধবার , ২৭ আগস্ট, ২০২৫ at ৪:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় ১৩০ কোটি টাকার কোকেনসহ এক বিদেশি যাত্রীকে আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। ক্যারেন পেটুলা স্টাফল (৬৩) নামের ওই নারী দক্ষিণ আমেরিকার দেশ গায়ানার নাগরিক বলে গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে সংস্থাটি। শাহজালাল বিমানবন্দর শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত সার্কেলের উপপরিচালক সোনিয়া আক্তার বলেন, দোহা থেকে ঢাকায় আসা কাতার এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে (কিউআর ৬৩৮) সোমবার রাত আড়াইটার দিকে শাহজালালে নামেন ওই যাত্রী। মাদকের একটি চালান আসার গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ায় শুল্ক গোয়েন্দারা আগে থেকেই সতর্ক অবস্থান নেন। খবর বিডিনিউজের।

উড়োজাহাজটি শাহজালালের ৬ নম্বর বোর্ডিং ব্রিজে সংযুক্ত হলে ওই যাত্রীর আসন নম্বর ৩০এ গিয়ে ক্যারেন পেটুলা স্টাফলের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়। ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর তার ব্যাগেজ স্ক্যান করা হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওই যাত্রীর লাগেজে প্লাস্টিকের তিনটি জার পাওয়া যায়। জারের ভেতরে ২২টি ডিম্বাকৃতির ফয়েলে মোড়ানো ছিল কোকেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এয়ারপোর্ট ইউনিট প্রাথমিক পরীক্ষায় কোকেনের বিষয়টি নিশ্চিত করে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর বলছে, উদ্ধার হওয়া কোকেনের ওজন ৮ কেজি ৬৬০ গ্রাম, যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ১৩০ কোটি টাকা। এ ঘটনায় ক্যারেন পেটুলা স্টাফলার বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও শুল্ক আইনে মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে বলে শাহজালাল বিমানবন্দর শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত সার্কেলের উপপরিচালক সোনিয়া আক্তার জানিয়েছেন।

গায়ানার সেই নারী ফের পুরনো কারবারে : ক্যারেন পেটুলা স্টাফল নামের যে নারীকে শাহজালাল বিমানবন্দরে কোকেনসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে, একই অপরাধে তাকে নিজের দেশ গায়ানায় জেল খাটতে হয়েছিল। ২০১৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর গায়ানার চেডি জগন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কোকেন পাচারের অভিযোগে তাকে ৪ বছরের কারাদণ্ড এবং ২.৩ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করা হয়েছিল। ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর গায়ানার চেদ্দি জাগান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১ দশমিক ১৪২ কেজি কোকেনসহ ধরা পড়েছিলেন স্টাফল। দোষ স্বীকার করে নিলে দেশটির আদালত তাকে চার বছরের কারাদণ্ড এবং ২৩ লাখ ডলার জরিমানা করে। সেবার কোনেন নিয়ে নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা করার পথে ধরা পড়েন। আর এবার কাতারের দোহা থেকে ঢাকায় এসে তিনি কোকেনসহ ধরা পড়েছেন।

স্টাফল পেশায় একজন হেয়ারড্রেসার। আগেরবার তার কোকেনসহ ধরা পড়ার ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায় স্ট্যাব্রোয়েক নিউজ নামের একটি সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে। সেখানে বলা হয়, ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ এয়াওয়েজের একটি ফ্লাইটে নিউ ইয়র্কে যাওয়ার জন্য গায়ানার চেদ্দি জাগান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান স্টাফল। চেকইন স্ক্যানারে যাওয়ার সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং পরে তাকে তল্লাশি কক্ষে নেওয়া হয়। সেখানে তার শরীর তল্লাশি চালিয়ে নিচের অংশ থেকে প্লাস্টিকে মোড়ানো একটি বস্তু পাওয়া যায়। সেটি খোলার পর ভেতরে সাদা গুঁড়া সদৃশ বস্তু পাওয়া যায়, যা কোকেন সন্দেহে জব্দ করা হয়।

প্রাথমিক পরীক্ষায় সেটি কোকেন প্রমাণিত হলে স্টাফল বলেন, আমার কাছে এটুকুই কোকেন আছে। এরপর তাকে গ্রেপ্তার করে গায়ানার কাস্টমস অ্যান্টিনারকোটিক ইউনিটের (ক্যানু) সদর দপ্তরে নেওয়া হয় এবং মাদকের ওজন মাপা হয়। পাশাপাশি শরীর এঙরে করে তার অন্ত্রে সন্দেহজনক বস্তুর উপস্থিতি ধরা পড়ে। এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে জোলাপ খাওয়ানো হলে মলের সঙ্গে দুদিনে ১০০টি কোকেন ভর্তি ক্যাপসুল বেরিয়ে আসে। পরে সেগুলোর ওজন করে ৯২৮ গ্রাম কোকেন পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া কোকেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ দশমিক ১৪২ কেজি।

মাদকের মামলা দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হলে আইনজীবীর পরামর্শে দোষ স্বীকার করে নেন স্টাফল। অপরাধের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে প্রতিশ্রুতি দেন, এমন কাজ আর কখনো করবেন না। ওই বছর ১৪ সেপ্টেম্বর দেওয়া রায়ে আদালত তাকে চার বছরের কারাদণ্ড এবং ২৩ লাখ ৯৮ হাজার ৩০০ ডলার জরিমানা করে। এছাড়া তার সঙ্গে পাওয়া ৪০০ মার্কিন ডলার বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেয়। সাত বছরের মাথায় দেখা যাচ্ছে আদালতকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখেননি তিনি। আবারো তিনি মাদক পাচারের পুরনো কারবারে ফিরে গেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচাম্বলে সড়কে ধানের চারা রোপণ করে প্রতিবাদ
পরবর্তী নিবন্ধআগামী বছরে নিয়মিতদের সংক্ষিপ্ত, অনিয়মিতরা পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে