জব্বারের বলী খেলার এক সময়ের নিয়মিত দৃশ্য ছিল দিদার বলী আর মর্ম সিং ত্রিপুরা। তখনকার চিত্রনাট্যের প্রধান কুশীলব ছিলেন যেন এ দুজন। একবার দিদার তো আরেকবার মর্ম সিং ত্রিপুরা চ্যাম্পিয়ন। আবার এ দুজন যুগলভাবেও জিতেছেন একাধিক শিরোপা। সে জামানা শেষ। এখন চলছে জীবন বলী আর শাহজালাল বলীর দ্বৈরথ। জব্বারের বলী খেলার গত কয় বছরের শিরোপা বলে দিচ্ছে– একবার জীবনের মাথায় তো আরেকবার শাহজালালের মাথায় উঠছে সেরার মুকুট। একবার হারলে পরের বছরে যেন তার প্রতিশোধ নিয়ে নিচ্ছে একে অপরের উপর। পরস্পরের সবচাইতে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠা কুমিল্লার মোহাম্মদ শাহজালাল এবং চকরিয়ার তরিকুল ইসলাম জীবন আরো একবার অবতীর্ণ হলেন জব্বারের বলী খেলার সেরার লড়াইয়ে। তবে এবারে জয়টা শাহজালালেরই।
গত আসরে হারিয়ে ফেলা শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট এবার সেই জীবনের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছেন তিনি। তবে এবারের দুজনের লড়াইটি দর্শকদের মন ভরাতে পারেনি মোটেও। মাত্র এক মিনিট পাঁচ সেকেন্ডে জীবন বলীর হার! নিজ থেকেই হার মেনে নিয়েছেন জীবন। কারণ ইনজুরির কারণে পারছিলেন না তিনি। এর আগে সেমিফাইনালে তিনি ১১ মিনিটেরও বেশি সময় লড়াই করেছেন সৃজন চাকমার সঙ্গে। এরপর দুপুরে জীবন জানিয়ে দেন তিনি খেলবেন না ইনজুরির কারণে। তবে সিদ্ধান্ত বদল করে শেষ পর্যন্ত তিনি খেলেছেন। কিন্তু হারিয়েছেন সেরার মুকুট।
শাহজালাল আর জীবনের দ্বৈরথ শুরু ২০১৮ সালে। সেবার দুজনের প্রথম দেখায় ১৮ মিনিট লড়াই করলেও কেউ কাউকে হারাতে পারেননি। কিন্তু টেকনিকের দিক থেকে এগিয়ে থাকায় রেফারিরা সেবার তরিকুল ইসলাম জীবনকে বিজয়ী ঘোষণা করেছিলেন। ২০১৯ সালে আবার ফাইনালে দেখা দুজনের। এবার লড়াই হলো ২৩ মিনিট। কিন্তু কেউ কাউকে হারাতে পারল না। এবারে রেফারিদের বিচারে চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল। মুকুট ফিরল কুমিল্লার এ বলীর মাথায়। ২০২২ সালে আবার দেখা দুজনের। এবার দুজন লড়াই করলেন ৩০ মিনিট। কেউ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান ভাবেই চলতে থাকে লড়াই। শেষ পর্যন্ত এবারেও এলো রেফারির ঘোষণা। এবার হাত উচিয়ে ধরা হলো জীবনের। অর্থাৎ আবার মুকুট ফিরল চকরিয়ার এই বলীর মাথায়। এ বছর আবার দুজনের মুখোমুখি লড়াইয়ে এক মিনিটেই পরাজয় বরণ করে নিলেন জীবন। মুকুট আবার ফিরল শাহজালালের মাথায়। আবার জব্বারের বলি খেলার চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার সুঠাম দেহী শাহজালাল বলী।
ঈদের দুদিন পরই বসল এবারকার জব্বারের বলী খেলার ১১৪তম আসর। স্বাভাবিকভাবেই শঙ্কা ছিল কতটা জমবে এই আসর। তবে সব শঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে দারুণ সফল হলো এবারের আসরটি। সারাদেশ থেকে প্রায় ৬৩ জন বলী অংশ নেন এবারের প্রতিযোগিতায়। প্রথম রাউন্ডে ২৬ জন জয় লাভ করে। একটি ম্যাচে দুই প্রতিযোগীকে ডিসকোয়ালিফাই করা হয়। আগের আসরের সেরা চারজনের তিনজনই হাজির ছিলেন গতকাল। তারাসহ ৮ জনকে নিয়ে করা হয় কোয়ার্টার ফাইনাল পর্ব। যেখানে মুছাকে হারিয়ে আবদুন নুর, রুবেলকে হারিয়ে শাহজালাল, সেলিমকে হারিয়ে জীবন এবং আমির হোসেনকে হারিয়ে সৃজন চাকমা জায়গা করে নেন সেমিফাইনালে। প্রথম সেমিফাইনালে জীবন এবং গত আসরে তৃতীয় হওয়া সৃজন চাকমা দারুণ লড়াই করে। এতে জয়ী হয়ে ফাইনালে পা রাখেন জীবন। আর আবদুন নুরকে সহজে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেন শাহজালাল। তবে ফাইনাল ম্যাচটি দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। নড়েচড়ে বসার আগেই খেলা শেষ।
দুহাত উচিয়ে শাহজালাল জানিয়ে দিলেন তার শ্রেষ্ঠত্বের কথা। জীবনকে ফিরতে হলো শিরোপা হারিয়ে। হয়তো পরের আসরে আবার ফিরে আসার জন্য প্রস্তুত হবেন চকরিয়ার তারিকুল ইসলাম জীবন। চ্যাম্পিয়ন শাহজালালকে দেওয়া হয় ট্রফিসহ নগদ ৩০ হাজার টাকা। রানার্স আপ জীবনকে দেওয়া হয় ট্রফিসহ নগদ ২০ হাজার টাকা। তৃতীয় হওয়া সৃজন চাকমা পেয়েছেন ১০ হাজার টাকা। আর চতুর্থ হওয়া আবদুর নুর পেয়েছেন ৮ হাজার টাকা। এছাড়া প্রথম রাউন্ডে বিজয়ীরা পেয়েছেন মেডেলসহ দেড় হাজার টাকা করে।
এর আগে দুপুরে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন পুলিশ কমিশনার কৃঞ্চপদ রায়। উদ্বোধনী এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র এবং প্রতিযোগিতার স্পন্সর আবদুস সবুর লিটন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, আলকরণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুস সালাম মাসুম, বলী খেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, সাধারণ সম্পাদক শওকত আনোয়ার বাদলসহ মেলা আয়োজক কমিটির কর্মকর্তাবৃন্দ।












