আনোয়ারা উপজেলায় পরকীয়ার কথা জেনে যাওয়ায় শাশুড়িকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় আসামি পুত্রবধূ নাইম উদ্দিন লিজাকে (২৬) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার পাশাপাশি পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ অর্থদণ্ড অনাদায়ে আসামিকে আরো এক বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। একই আদালতে মামলার আরেক আসামি ওই নারীর কথিত প্রেমিক হাফিজুল ইসলাম কফিলের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেয়া হয়েছে।
২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ডের বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে গতকাল রোববার আসামিদের উপস্থিতিতে ৭ম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আ স ম শহীদুল্লাহ কায়সারের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। জানা গেছে, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি লিজা সাতকানিয়া উপজেলার ঢেমসা ইউনিয়নের হাজারখিল গ্রামের আমীর হোসেনের মেয়ে। ঘটনার সময় আসামি লিজার বয়স ছিল বিশ বছর।
অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৭ম আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট রুবেল পাল বলেন, পরকীয়ার কথা জেনে যাওয়ায় আসামি লিজা তার শাশুড়িকে গলা কেটে হত্যা করেন। এ ঘটনায় লিজাকে এজাহারভুক্ত একমাত্র আসামি করে মামলা হয়েছিল। পরবর্তীতে পুলিশের তদন্তে নাম উঠে আসে হাফিজুল ইসলাম কফিলের। তার সাথে লিজার পরকীয়া সম্পর্ক থাকার অভিযোগ ওঠে। লিজা আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ খুনের ঘটনার সাথে তার প্রেমিক কফিলের জড়িত থাকার কথা জানিয়েছিলেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরে দু’জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছিলেন।
অ্যাডভোকেট রুবেল পাল বলেন, এ খুনের ঘটনার পর থেকেই এজাহারনামীয় আসামি লিজা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। অন্যদিকে হাফিজুল ইসলাম কফিল পরবর্তীতে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গেলেও হাইকোর্টের জামিনে বেরিয়ে আসেন।
রোববার রায় ঘোষণার সময় দুই আসামিই আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তিনি।
মামলায় এক আসামি খালাস পাওয়ার বিষয়ে অ্যাডভোকেট রুবেল পাল বলেন, আমরা আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পর্যন্ত অপেক্ষা করছি। সেটি পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
২০১৪ সালে ৯ সেপ্টেম্বর আনোয়ারা বরুমছড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে পুত্রবধূ লিজার হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন শোহাগ খাতুন (৫৫)। এ ঘটনায় পরদিন ১০ সেপ্টেম্বর নিহতের স্বামী ফজলুল হক (৬২) তার পুত্রবধূ নাইম উদ্দিন লিজাকে একমাত্র আসামি করে আনোয়ারা থানায় হত্যা মামলা করেন।
মামলার এজাহারে জানা গেছে, খুনের ঘটনার তিন মাস আগে নিহতের বড় ছেলে জসিম উদ্দিনের সাথে লিজার বিয়ে হয়। ঘটনার দিন নিহতের ছেলে বাড়িতে না থাকায় শোহাগ খাতুন ও লিজা একই রুমে ঘুমাতে যান। রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টায় ফজলুলের ভাতিজা বাদশা প্রকৃতির ডাকে ঘরের বাইরে গেলে শোহাগের কাতরানোর শব্দ শুনতে পেয়ে লোকজন জড়ো করেন। পরে দরজা ভেঙে রুমে ঢুকে সবাই শোহাগের হাত-পা ও মুখ বাঁধা এবং গলা থেকে রক্ত পড়া অবস্থায় দেখতে পায়। তার পাশেই রক্তাক্ত ছুরি নিয়ে লিজাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। এ সময় পরিবারের লোকজন শোহাগ খাতুনকে দ্রুত উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিতে রওয়ানা হলে পথিমধ্যে তিনি মারা যান।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় মামলার পর একই বছর ২০ নভেম্বর আনোয়ারা থানা পুলিশের সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা এজাহারনামীয় আসামি লিজার পাশাপাশি তার কথিত প্রেমিক হাফিজুল ইসলাম কফিলকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন। ২০১৬ সালে ২৫ নভেম্বর আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনপূর্বক আনুষ্ঠানিক বিচারকার্য শুরু হয়। এ মামলায় মোট ১২ জন সাক্ষীকে উপস্থাপন করা হয়েছিল।