কর্ণফুলীর বড়উঠানে শাশুড়ির মৃত্যুর খবর শুনে একমাত্র ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন আইরিন নিগার (২৮)। পথেই বাস ও ডাম্প ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ হারান আইরিন নিগার ও তার ৭ মাস বয়সী সন্তান মো. আরহাম বিন নোমান। গত রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের উত্তর গয়ালমারা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় আহত হয়েছেন নিহত নিগারের ছোট ভাই মোহাম্মদ আবির (১৭)। নিহত আইরিন নিগার কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের আলী আহমদ চেয়ারম্যানের পুরাতন বাড়ির মো. নোমানুর রশিদের স্ত্রী। নিহতের পারিবারিক সূত্র ও স্থানীয়রা জানান, গত শনিবার কক্সবাজারের রামু উপজেলায় পিতা মারা গেলে সন্তানকে নিয়ে বাবার লাশ দেখতে যান নিহত আইরিন। স্বজনদের সাথে বাপের বাড়িতে থাকেন সন্তানকে নিয়ে। রোববার রাত ১২টার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার শ্বাশুড়ি ফাতেমা বেগম (৭০) মারা যান। তার মৃত্যুর খবর শুনে ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে স্বামীর বাড়িতে আসছিলেন আইরিন। আসার পথে চট্টগ্রামগামী বাস ও পাথরবোঝাই ডাম্প ট্রাকের সংঘর্ষে নিহত হন আইরিন নিগার। এ সময় গুরুতর আহত হন শিশু সন্তানসহ আরও সাতজন। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শিশু আরহাম।
দুর্ঘটনায় স্ত্রী–সন্তান নিহতের খবরে দিশাহারা হয়ে পড়েন মো. নোমানুর রশিদ। গতকাল সকালে স্ত্রী ও সন্তানের লাশ বাড়িতে এনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিলাপ করতে বলছিলেন, মা, স্ত্রী–সন্তান গেলো, আমারে দেখার কেউ রইল না আর। মাকে দাফন করে ঘরে এসেই স্ত্রী–সন্তানকেও কবরে দিয়ে আসতে হলো।
তিনি বলেন, মায়ের মৃত্যুর খবরে দ্রুত আসতে বলেছিলাম। তারা ফিরেছে ঠিক, তবে লাশ হয়ে। কিন্তু কেন? আমার সাজানো গোছানো সংসারের এই পরিণতি কেন? আমার স্ত্রী সন্তানদের এই পরিণতির জন্য দায়ী কে? আমি তাদের শাস্তি চাই।
প্রতিবেশী যুবদল নেতা এসএম খোরশেদুল ইসলাম জানান, কিছুদিন আগে নোমানুর রশিদের শ্বশুর মারা গেলে, সেখানে তার স্ত্রী সন্তান যায়। রাতে শাশুড়ির মৃত্যুর খবর শুনে বাড়িতে আসছিলেন তারা। ক’দিন আগেও স্ত্রী সন্তানদের প্রাণচাঞ্চল্যতায় মুখরিত ছিল যে বাড়ির আঙিনা, সেই ভিটে মাটিতে এখন চলছে শোকের মাতম। বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে যেন পড়েছে শোকের আস্তর।
নিহতের ভাসুর আমিনুল রশিদ বলেন, সোমবার (গতকাল) সকাল ১০টায় মায়ের জানাজা শেষে দাফন করা হয়। এরপর দুপুরে ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ও তার সন্তানের দাফন সম্পন্ন হয়।