শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখতে যোগ হস্তমুদ্রা

দীনা মরিয়ম | শনিবার , ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

সমগ্র বিশ্বসংসার তোলপাড় করে নারী প্রিয়জনের জন্য সুখ খুঁজে আনতে পারে, আর্তের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারে, হাসি ফোটাতে পারি মূর্তিমান বিষাদের ঠোঁটে! এমনই শত মহাকীর্তির অভিযাত্রায় নারীরা নিজেকে হারিয়ে ফেলে নিজেরই অজান্তে। ‘আমার আমি’ হয়ে ওঠায় যেন চরম অনীহা তাদের। নিজের জন্য একটু সময়, একটু যত্ন, একটু পরিচর্যা, নিয়ম করে একটা দু’টো ভালো অভ্যাসের চর্চা আর হয়ে ওঠে না। শুধু নিজের জন্য এক কাপ চা তাও যেন বাহুল্য! নারীর কেন নিজের প্রতি এই অবহেলা, নাকি আত্মঅভিমান? বাস্তবতা এটাই যে সবার আগে নিজেকে ফিট রাখতে হবে। নিজে সুস্থপ্রশান্ত থাকলেই সাচ্ছন্দ্যে অন্যদের ভালো থাকার উৎস হয়ে উঠতে পারা যায়। আর সেই ভাল থাকার উদ্যোগ নিতে হবে নিজেকেই। তার আগে জানা প্রয়োজন কিভাবে নিজেকে সহজে ফিট রাখা যায়। জিমে না গিয়ে, পার্কে জগিং না করে, ব্যায়ামের দামীদামী ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহার না করেও কীভাবে ফিট থাকা যায় সেসব বিষয়ের উপর আলোকপাত করবেন দীনা মরিয়ম। ১৯৯৯ সাল থেকে তিনি যোগ ফাউন্ডেশনের (বর্তমানে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের) আওতায় মেডিটেশনের কোর্স চর্চা শুরু করেন। ২০১১ সালে তিনি গুরুজী জনাব শহীদ আল বোখারী মহাজাতকের তত্ত্বাবধানে যোগ ব্যায়ামের উপর কোর্স সম্পন্ন করেন।

অতীতের দিকে তাকালে দেখতে পাব আমাদের উপমহাদেশের যোগ সাধনার ইতিহাস । যুগ যুগ ধরে আমাদের পূর্বসুরীগণ যোগের চর্চা করে আসছেন এবং বর্তমানে সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তা পেয়েছে যোগের বিভিন্ন উপকরণ। ধ্যান বা মেডিটেশন তার মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও প্রাণায়াম, দমচর্চা, যোগাসন, যোগহস্তমুদ্রা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে ব্যাপকভাবে চর্চা এমনকি গবেষণাও চলছে। সেই গবেষণা থেকেই আমরা জানতে পারি মাত্র আধাঘন্টা ধ্যান কীভাবে মানুষের কর্মদক্ষতা অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়, যোগাসন ও দমচর্চা কীভাবে দেহযন্ত্রকে সঠিকভাবে পরিচালিত হতে সাহায্য করে, একটিমাত্র “ভ্রামরী” কিভাবে ব্রেইনের কার্যক্ষমতা শতগুণ বাড়িয়ে দেয়। আজ জানবো যোগ বা ইয়োগার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়যোগ হস্তমুদ্রা সম্পর্কে।

যোগ হস্তমুদ্রা হলো হাত ও আঙ্গুলের এমন কিছু বিশেষ ভঙ্গি যা শরীরের মধ্যে প্রাণশক্তির প্রবাহকে প্রভাবিত করে, নার্ভাস সিস্টেমের উপর প্রভাব সৃষ্টির মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখে। শারীরিক সুস্থতা, মানসিক প্রশান্তি বাড়িয়ে দেয়। সাইকোসোমাটিক রোগ মুক্তিতে সহায়তা সহ আরও বিভিন্ন ধরণের উপকার করে থাকে। যোগ সাধনা ও ধ্যানের ক্ষেত্রে এই মুদ্রাগুলো প্রায়শই বিভিন্ন আসন, দমচর্চা বা প্রাণায়ামের সাথে একত্রে ব্যাবহৃত হয়। টিভি বা ইউটিউবে বিভিন্ন বিদেশি প্রতিবেদনে ইলন মাস্ক, ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভ্লাদিমির পুতিন, মার্ক কিউবান, কেভিন ও লেরি, নরেন্দ্র মোদি, ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোসহ অনেক সেলিব্রিটিদের আমরা হাতে বিশেষ ভঙ্গি করে বসতে দেখি, এই ভঙিগই হস্তমুদ্রা। এক একটি মুদ্রার কার্যকারিতা একেকরকম।

বিভিন্ন ধরণের যোগ হস্তমুদ্রাকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়

.অসমযুক্ত হস্তমুদ্রাযা শুধুমাত্র একহাতে করা হয়।

.সমযুক্ত হস্তমুদ্রাযা উভয় হাত ব্যবহার করে করা হয়।

.নৃত্য মুদ্রাএ ধরণের মুদ্রা ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যের জন্য ব্যবহৃত হয়।

হাজার হাজার বছর ধরে অগণিত সাধকগণ তাঁদের দীর্ঘদিনের সাধনা এবং চর্চার মাধ্যমে বিভিন্ন হস্তমুদ্রা সৃষ্টি এবং এর কার্যকারিতা ও উপকারিতা আবিষ্কার করেছেন। আজকে আমরা যা ইউটিউব, গুগলে সার্চ দিয়ে মুহুর্তের মধ্যে পেয়ে যাচ্ছি তা কিন্তু রেডিও ট্রান্সমিটার, রাডার , স্যাটেলাইট, ওয়েবসাইট ইত্যাদি আবিষ্কারের শত শত বছর আগে পৃথিবীতে এসেছে। অগণিত সাধক তাঁদের সাধনার মাধ্যমে ইন্দ্রিয়যোগে এসব তথ্য লাভ করেছিলেন। কতজন সাধক, কত বছর সাধনায় কীভাবে এসব মুদ্রা আবিষ্কার করেছেন তার কোন সঠিক তথ্য আজও জানা যায়নি। তেমনি জানা যায়নি ঠিক কতগুলো হস্তমুদ্রা আবিষ্কৃত হয়েছে। আনুমানিক এই সংখ্যা ৩৯৯, কারো কারো ৪০০, কারো মতে আরো অনেক বেশি। তবে একটি বিষয়ে সবাই একমত যে আঙ্গুল ও হাতের এই নির্ধারিত মাধ্যমে মানুষের শরীরের মূল পাঁচটি তত্ত্ব (অর্থাৎ মাটি,পানি,বায়ু,আকাশ,আগুন) ব্যালান্স করা যায়। যোগ হস্তমুদ্রার একটি স্থির সংখ্যা বলা কঠিন, তবে এর প্রয়োগ ও প্রকারভেদ বিশাল। আমি ব্যক্তিগতভবে ১৯৯৯ সাল থেকে চর্চায় আছি। মেডিটেশন, যোগাসন,প্রাণায়াম ছাড়াও প্রায় পঞ্চাশের বেশি সংখ্যক হস্তমুদ্রার সাথে সখ্যতা আছে। আমরা পরবর্তীতে বিভিন্ন মুদ্রার কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনায় আসবো।

(চলবে)

পূর্ববর্তী নিবন্ধঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উদযাপনে অশেষ পুণ্য ও কল্যাণ নিহিত
পরবর্তী নিবন্ধমতবিনিময় সভায় নগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির