শারদীয় দুর্গোৎসবে আজ মহাসপ্তমী

চট্টগ্রামে এবার মণ্ডপ ২ হাজার ৪৫৮টি

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১০ অক্টোবর, ২০২৪ at ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ

ঢাকের বাদ্যের সঙ্গে উলুধ্বনি, শঙ্খনাদ আর কাসর ঘণ্টা বাজিয়ে গতকাল ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে বেলগাছের নিচে ঘট স্থাপন করে ষোড়শ উপাচারে ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভে ষষ্ঠীপূজা শুরু হয়। মহাষষ্ঠীতে মহিষাসুরমর্দিনী দেবী দুর্গাকে বরণ করে নিয়েছেন ভক্তরা। শারদীয় দুর্গোৎসবের আজ মহাসপ্তমী। আজ বৃহস্পতিবার সকালে দেবী দুর্গার চক্ষুদান, নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, সপ্তাদি কল্পারম্ভ ও সপ্তমীবিহিত পূজা হবে। আগামীকাল শুক্রবার মহাষ্টমী পূজা, এ দিন হবে সন্ধিপূজা। এদিন চট্টগ্রামের পাথরঘাটা শ্রীশ্রী শ্বান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। শনিবার সকালে বিহিত পূজার মাধ্যমে হবে মহানবমী পূজা। আর রোববার সকালে দর্পণ বিসর্জনের পর প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। সনাতনী শাস্ত্র অনুযায়ী, মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচারে দেবী দুর্গাকে পূজিত করা হয়। মূলত এদিন দুর্গোৎসবের মূল পর্ব শুরু হয়। ষোড়শ উপাচারে অর্থাৎ ষোলটি উপাদানে দেবীর পূজা করা হয়। প্রথমে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান, এরপর দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা সমর্পণ।

মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে পাঁচদিনের সার্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসব শুরুর পর সারাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আনন্দে ভাসছে। ধূপ, ঢাকের বাদ্যের সঙ্গে মণ্ডপে মণ্ডপে উচ্চারিত হচ্ছে পুরোহিতের মন্ত্র। আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হয়েছে মহাসপ্তমীর আনুষ্ঠানিকতা। রীতি অনুযায়ী সকাল ৬টায় নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, সপ্তম্যাদি কল্পারম্ভ ও সপ্তমীবিহিত পূজা শুরু হবে। পূজা শেষে ভক্তরা অঞ্জলি দেবেন।

গতকাল ষষ্ঠী তিথিতে চট্টগ্রামে রামকৃঞ্চ সেবাশ্রম, চট্টেশ্বরী কালী মন্দির, দয়াময়ী কালী মন্দিরসহ সকল পূজা মণ্ডপে সকাল সাড়ে ৮টায় বেলগাছের নিচে ঘট স্থাপন করে ষোড়শ উপাচারে হয় দেবীর কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা। এ সময় ভক্তরা দেবী দুর্গার চরণে পুষ্পার্ঘ্য দিয়ে প্রার্থনা করেছেন দেশ তথা বিশ্বে অশুভ শক্তির বিনাশ আর শুভ শক্তি প্রতিষ্ঠার জন্য। এরপর সায়ংকালে দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল পূজা। সন্ধ্যায় মণ্ডপ ও মন্দিরে চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে বোধনের মধ্য দিয়ে চলে দক্ষিণায়নে নিদ্রিত দেবীর নিদ্রা ভাঙার বন্দনা।

ষষ্ঠীপূজা উপলক্ষে গতকাল চট্টগ্রামের প্রধান প্রধান পূজামণ্ডপগুলো ভোর থেকেই মুখর হয়ে ওঠে। চট্টগ্রামের লাভলেইনস্থ প্রাচীনতম দয়াময়ী কালী মন্দিরে দুর্গাপূজা মণ্ডপের অধ্যাপক অর্পন ব্যানার্জি বলেন, ষষ্ঠীর সকালের পর্বটি মূলত কল্পারম্ভ। এর মাধ্যমে আমরা কল্পনা করছি যে, দেবী বিল্ব বৃক্ষে অধিষ্ঠান করেছেন। তাঁকে আমরা পূজা করব। এই সংকল্প করাটাই কল্পারম্ভ। সন্ধ্যায় বোধন এবং অধিবাসের মধ্য দিয়ে দেবীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বোধন হলো উপলব্ধি করা যে দেবী এসেছেন। বৃহস্পতিবার (আজ) সপ্তমী থেকে মূলত পূজা শুরু হবে।

চট্টগ্রামে ২ হাজার ৪৫৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা : এবার চট্টগ্রামে ২ হাজার ৪৫৮টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে মহানগরীর ১৬ থানায় ২৯৩টি ও জেলার ১৫টি উপজেলায় ২ হাজার ১৬৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হচ্ছে। পূজা উদযাপনের সার্বিক নিরাপত্তায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অধিকাংশ মণ্ডপে লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।

জেলার ১৫টি উপজেলায় ২ হাজার ১৬৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে প্রতীমা পূজা হচ্ছে ১ হাজার ৫৯৪টি মন্ডপে। বাকিগুলো ঘটপূজা। পূজামণ্ডপের মধ্যে আনোয়ারা উপজেলায়া ২৯৯টি, কর্ণফুলীতে ২৮টি, মীরসরাইয়ে ৯০টি, সীতাকুণ্ডে ৬৭টি, সন্দ্বীপে ৩০টি, ফটিকছড়িতে ১২৩টি, হাটহাজারীতে ১১৪টি, রাউজানে ২২৮টি, রাঙ্গুনিয়ায় ১৬১টি, বোয়ালখালীতে ১৪৬টি, পটিয়ায় ১৯৫টি, চন্দনাইশে ১২৮টি, সাতকানিয়ায় ১৮৪টি, লোহাগাড়ায় ১১১টি, বাঁশখালীতে ২৫০টি মণ্ডপে পূজা উদযাপিত হচ্ছে। অপরদিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর ১৬টি থানা এলাকায় ২৯৩টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গা উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি এডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ বলেন, এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে পূজামণ্ডপ ঘিরে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পূজায় সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদর করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসারসহ সরকারি সব সংস্থা পূজার আয়োজনে সহযোগিতা করছেন। তারা আমাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছেন, সভা করেছেন।

পূজায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা : চট্টগ্রামে শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে এরই মধ্যে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রতিটি মণ্ডপে পুলিশ, আনসারভিডিপির পাশাপাশি র‌্যাবের টহল জোরদার করা হয়েছে। রয়েছে স্ট্রাইকিং ফোর্স। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যদের সতর্ক পাহারা। অনেক মণ্ডপে আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টরে কড়া তল্লাশির মধ্য দিয়ে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে দেখা গেছে। তবে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছেদ ফেলেনি পূজার আনন্দমুখরতায়।

এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে স্বেচ্ছাসেবক টিম ও মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।

আকবর শাহ পূজান্ডপে ষষ্ঠী পূজার উদ্বোধন : নগরীর আকবর শাহ থানা এলাকায় লতিফপুর কিশোর সংঘের দুর্গাপূজা উদ্বোধন করা হয়েছে গতকাল রাতে। প্রধান অতিথি হিসেবে উক্ত পুজার উদ্বোধন করেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের পরিচালক ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সদস্য বিপ্লব পার্থ। এ সময় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবদল নেতা বিপ্লব চৌধুরী বিল্লু, সমাজসেবক অয়ন দাশ, লতিফপুর কিশোর সংঘের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল দে, অর্থ সম্পাদক বিধান সরকার, প্রান্ত মজুমদার, পলাশ মজুমদার, জয় দে, কাজল কর্মকার, জনি সেন প্রমুখ। পুজার উদ্বোধনকালে বিপ্লব পার্থ বলেন, বাংলাদেশ সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এবার দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সনাতনীদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা এবং রাজনৈতিক দলের সমন্বয় ও সস্প্রীতির মাধ্যমে এই আয়োজন আরও ফলপ্রসূ হয়েছে। দেশের মানুষ সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি ও মৈত্রির বন্ধনে বিশ্বাস করে। হাজার বছরের একটি ঐতিহ্য রয়েছে এদেশে। ভয়হীন ও শঙ্কা মুক্ত দুর্গাপূজা উদযাপনে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। অনুষ্ঠানের শুরুতে মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছাত্র আন্দোলনে সরব না থাকায় আন্তরিকভাবে দুঃখিত সাকিব
পরবর্তী নিবন্ধদুর্গোৎসব পালনে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে