আধুনিক বাংলা কবিতার ইতিহাসে শামসুর রাহমান অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। যুগ সচেতন এই কবির কাব্যকৃতির প্রধান বৈশিষ্ট্য সমাজ বাস্তবতা, সমকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, প্রেম, চিরায়ত জীবনের হতাশা-বেদনা-গ্লানি-আকাঙক্ষা আর সব কিছু ছাপিয়ে প্রবল আশার স্বপ্ন বিভোরতা।
শামসুর রাহমানের জন্ম ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর ঢাকায়। কবিতায় তাঁর শ্রেষ্ঠ পরিচয় হলেও কিছু ছোটগল্প এবং কয়েকটি উপন্যাস রচনা করেছেন তিনি। আর সকল রচনাতেই সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ এবং চিন্তাশীল একজন ব্যক্তিমানসের সন্ধান মেলে। শামসুর রাহমানের কবিতার সংখ্যা বিপুল, বিষয়বৈচিত্র্যেও তা অনন্য। কখনো তিনি রোম্যান্টিক, কখনো দেশ-কাল-সমাজ আর রাজনীতি চেতনার অনুভূতি-অভিজ্ঞান তাঁকে তাড়িয়ে বেড়ায় নিয়ত। গ্রামীন জীবন-ছবি শামসুরের কবিতায় কখনো উঠে এলেও মূলত তাঁকে নাগরিক চেতনায় সমর্পিত কবি বলা চলে। মানবপ্রেম, ইহজাগতিকতা, বাঙালি মধ্যবিত্তের জীবন সংস্কার, ভাষা-স্বদেশ-সংগ্রাম তাঁর কবিতার প্রধান অনুষঙ্গ হয়েছে। কেবল কবিতার ভাষাতেই নয়, ব্যক্তি শামসুর রাহমান হিসেবেও বাঙালির স্বাধীন জাতিসত্তা বিকাশের পরিপন্থী সকল অন্যায়-অপসংস্কৃতি আর সামপ্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চারকণ্ঠ। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ‘দৈনিক বাংলা’ পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন তিনি। বাংলা একাডেমীর সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে : ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’, ‘নিজ বাসভূমে’, ‘বন্দী শিবির থেকে’, ‘ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা’, ‘ধ্বংসের কিনারে বসে’, ‘ছায়াগণের সঙ্গে কিছুক্ষণ’ ইত্যাদি। ছড়া, স্মৃতিচারণ ও প্রবন্ধ রচনায়ও তাঁর মননশীলতার পরিচয় মেলে। ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট বহুমাত্রিক এই কবি প্রতিভার জীবনাবসান ঘটে।