শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে অনশনের তৃতীয় দিনে ২৩ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে আটজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে এবং বাকিদের স্যালাইন পুশ করা হয়েছে বলে গতকাল শুক্রবার সকালে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের (২০১৮-২০১৯) সেশনের শিক্ষার্থী অনশনরত শাহেরিয়ার আবেদীন জানান। শাহেরিয়ার বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বুধবার দুপুর ৩টা থেকে অনশনে আছি। প্রায় ৪০ ঘণ্টা পার হয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত আটজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ডাক্তারের বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও তারা অনশন ভাঙতে রাজি হয়নি। আমাদের অনেকের গ্লুকোজ লেবেল, ব্লাড প্রেসার, পালস রেট কমে গেছে। সবকিছুর অনিয়ম হয়ে গেছে। উপাচার্যের মানবিক মূল্যবোধ থাকলে তিনি পদত্যাগ করতেন। যেহেতু এখনও পদত্যাগ করেনি, আমাদের কথা হচ্ছে, যতক্ষণ না পদত্যাগ করছেন, ততক্ষণ যত কষ্টই হোক, যত ত্যাগই প্রয়োজন হোক, আমরা অনশন চালিয়ে যাব। খবর বিডিনিউজের।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন তারা শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসতে চান না। তবে তারা ভার্চুয়াল মাধ্যমে আলোচনা করতে রাজি আছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা করলে শিক্ষার্থীরা তাদের মতামত জানান।
শিক্ষার্থীরা বলেন, তাদের মধ্যে অনেকেই অসুস্থ। তাই তাদের পক্ষে ঢাকায় যাওয়া সম্ভব নয়। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী যদি তাদের দেখে যান, তাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন, তাহলে তারা খুশি হবেন বলে জানান। তাছাড়া শিক্ষামন্ত্রী চাইলে ভার্চুয়াল মাধ্যমে আলোচনা করতে আগ্রহী বলে জানান শিক্ষার্থীরা। আলোচনার জন্য তারা ইতোমধ্যেই একটা প্রতিনিধি দল গঠন করেছেন।
এর আগে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপস্তক বোর্ডের নতুন পাঠ্যক্রম নিয়ে পর্যালোচনা সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান। তাছাড়া দুপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি কথা বলেছেন তিনি।
অনশনে থাকা শিক্ষার্থীদের সেবায় নিয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারং বিভাগের শিক্ষার্থী সবুর খান জানান, ছয়জন ছাত্র ও দুইজন ছাত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই আটজনের মধ্যে পাঁচজন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, দুজন জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং একজনক আখালিয়ায় এলাকায় মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকিদের স্যালাইন পুশ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, অনশনে থাকা ২৪ জনের একজনের বাবা ছেলের অনশনের খবর শুনে হার্ট অ্যাটাক করেন। এজন্য ওই শিক্ষার্থী অনশন ভেঙে বাবাকে দেখতে বাড়ি গেছেন। আর ওসমানী মেডিকেলে ভর্তিদের মধ্যে দুজনের শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছে। ডাক্তার তাদেরকে বলছেন অনশন ভাঙতে, কিন্তু তারা অনশন ভাঙবেন না বলে জানিয়ে বলেছেন, অনশন তখনই ভাঙবেন, যখন উপাচার্য পদত্যাগ করবেন।
বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা। রোববার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
সোমবার বিকেলে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েনের প্রতিবাদ করলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরের ধাওয়া দেয় পুলিশ। ধাওয়া-পাল্টার এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাসহ অন্তত অর্ধশত আহত হন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিলেও তা উপেক্ষা করে উল্টো উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন তারা।
ওই ঘটনায় পুলিশ ‘গুলি বর্ষণ ও হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিটের অভিযোগে’ অজ্ঞাতপরিচয় ২০০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে। বুধবার বিকেল ৩টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কিলোতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। অনশনরতদের মধ্যে ১৫ জন ছাত্র ও নয়জন ছাত্রী।
এদিকে অনশন কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়লেও দাবি আদায়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল বাশার জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী অনশন ভাঙেননি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীরা চিকিৎসকদের অনুরোধেও অনশন ভাঙেনি। যতক্ষণ পর্যন্ত না উপাচার্য পদত্যাগ না করছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আর কোনো কারণেই অনশন কর্মসূচি বন্ধ হবে না।