চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য এমপি এম এ মোতালেব বলেছেন, সাতকানিয়া-লোহাগাড়াকে শান্তির জনপদ হিসেবে গড়তে চান তাই সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার প্রধান রাস্তাসমূহ মেরামত এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য আগামী ১০০ দিনের অগ্রাধিকার কাজের কর্মসূচি ঘোষণা করছেন তিনি।
রোববার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় এবং চট্টগ্রাম-১৫ সংসদীয় এলাকায় পরবর্তী ১০০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
দ্বাদশ নির্বাচনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম-১৫ আসনের জনগণের জন্য একটি নতুন দিনের সূচনা হয়েছে জানিয়ে এম এ মোতালেব বলেন, আগামী ১০০ দিনে পরবর্তী উন্নয়নমূলক কাজের মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় পিছিয়ে পড়া অবকাঠামোসমূহের উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে। সাতকানিয়া-লোহাগাড়াকে শান্তির জনপদে পরিণত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছি।
প্রশাসনকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছি অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগে কোন পক্ষপাতিত্ব বা শিথিলতা দেখানো যাবে না। আগে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে। সাতকানিয়া-লোহাগাড়াকে আদর্শ বাসযোগ্য জনপদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য শুরু থেকেই উদ্যোগ নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় শান্তিপূর্ণ ও সহাবস্থান নিশ্চিত হয়েছে। নির্বাচন পরবর্তী কোনো সহিংসতা যাতে না হয়, সে জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা ও আইনিব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যদি কেউ নির্বাচনোত্তর সহবস্থান বিনষ্ট করে নিজেদের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বিরোধ নির্বাচনের আড়ালে মিটাতে চান, তাদের কোনো দায় আমি নিবো না। পুলিশ প্রশাসনকেও তা পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছি ও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করেছি।
সাতকানিয়া-লোহাগাড়াকে মাদকমুক্ত করার লক্ষ্যে মাদক ব্যবসায়ী, পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতাদের তালিকা তৈরি করে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য সাঁড়াশি অভিযান চালানোর জন্য প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বালু মহাল নিয়ে সন্ত্রাসী কমকাণ্ডের লাগাম টানা হবে জানিয়ে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ মোতালেব বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলন ও দখলবাজ সিন্ডিকেটকে আইনের আওতায় আনা হবে। অবৈধ বালু উত্তোলন সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় যেকোনো মূল্যে বন্ধ করা হবে। স্বাস্থ্য খাতে স্বচ্ছতা আনার জন্য সরকারী-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক কঠোরভাবে মনিটরিংয়ের আওতায় আনা হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহে সেবার মান বাড়ানো হবে। জনগণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কের সেতুবন্ধন গড়ে তোলার জন্য দুই উপজেলাতেই নিয়মিত উঠান বৈঠক করা হবে।
সাবেক সংসদ সদস্যের প্রতিহিংসার শিকার সকল ভুক্তভোগীদের আইনি সহায়তা ও চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হবে। আমাদের সমর্থক অনেক নেতাকর্মী এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন বিভিন্ন হাসপাতালে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আমি আমার নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করবো। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মূলোৎপাঠন করা হবে।
নির্বাচনে পরাজিত হয়ে সাবেক সাংসদ ও তার স্ত্রী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্রমাগত মিথ্যাচার শুরু করেছেন জানিয়ে এম এ মোতালেব বলেন, তারা নানা উস্কানিমূলক অসত্য তথ্য দিয়ে প্রশাসনকে উত্তেজিত ও বিব্রত করার অপচেষ্ঠায় নেমেছেন। তারা স্থানীয় সন্ত্রাসীদের মদদ দিচ্ছেন, এ রকম অনেক তথ্য প্রশাসন এবং আমাদের হাতে আছে।
তারা আসলে কি করতে চান? তারা দশ বছর এলাকায় নানা অত্যাচার ও জুলুম করেছেন। তাদের সঙ্গে অনেকের অবৈধ লেনদেনের সম্পর্ক আছে, এসব তাদের ব্যক্তিগত ঝামেলা। এসব ঝামেলা থেকে বাঁচতে তারা সব দায় নির্বাচনী চাদরে ঢেকে আমার উপর তুলে দিতে চাইছেন। নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে এখন তারা সংবাদ মাধ্যমে অসত্য রিপোর্ট করাতে সচেষ্ট। আমরা দলমত নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সহবস্থান নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। নির্বাচনে অনেকেই আমার বিরোধীতা করতে পারেন, এটা তাদের নিজ নিজ অধিকার, আমার বিপক্ষে যারা কাজ করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও আমার কোন ক্ষোভ নেই, সুতরাং বৈরীতাও নেই। তাই সবাই মিলে মিশে কাজ করুন, সাতকানিয়া-লোহাগাড়াকে শান্তির জনপদে পরিণত করে মানুষকে উন্নত জীবন যাপন করার সুযোগ করে দিতে চাই।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এমপি এমএ মোতালেবের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অধ্যাপক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান, সদস্য সচিব ও সাতকানিয়া পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ জোবায়ের, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সাতকানিয়া অংশের চেয়ারম্যান ও সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আহমদ সাইফুদ্দিন সিদ্দিকী, সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী, যুগ্ম -সম্পাদক ফয়েজ আহমদ লিটন, মো. জসিম উদ্দিন, সাতকানিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল গফুর লালু, সাতকানিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের মধ্যে এওচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবু সালেহ, সাতকানিয়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. সেলিম, কাঞ্চনা ইউপি চেয়ারম্যান রমজান আলী, সোনাকানিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন, পশ্চিম ঢেমশা ইউপি চেয়ারম্যান রিদুয়ানুল ইসলাম সুমন, আমিলাইশ ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক, সাতকানিয়া উপজেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি শফিকুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক নজরুল ইসলাম সিকদার, আওয়ামী লীগ নেতা নাজিমউদ্দিন, আমির উদ্দিন চৌধুরী, রিদুয়ানুল হক, আলাউদ্দিন মো. সাবের, রফিকুল ইসলাম, মোর্শেদ আলম ও সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।