শান্তিপূর্ণ-সমৃদ্ধ এশিয়া গড়ার ডাক হাসিনার

ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আনতে চায় বাংলাদেশ।। বাংলাদেশ আমার দ্বিতীয় ঘরের মতো : লোটে

আজাদী ডেস্ক | বৃহস্পতিবার , ২৫ মার্চ, ২০২১ at ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ

শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়া গড়তে এ অঞ্চলের রাজনৈতিক ও নীতি-নির্ধারকদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে গতকাল বুধবার রাজধানীর প্যারেড স্কয়ারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি। এর আগে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সড়ক, রেল ও বিমান যোগাযোগ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী একমত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। পাশাপাশি ভুটানে জল-বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভারতকে সঙ্গে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়েও দুই সরকারপ্রধান ঐকমত্যে পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং। দুই নেতার বৈঠকের পর দুপুরে ফরেইন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে ওই বৈঠকের বিভিন্ন দিক সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ‘মুজিব চিরন্তন’ শীর্ষক মূল প্রতিপাদ্যের ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার ৮ম দিনে গতকাল প্রতিপাদ্য ছিল ‘শান্তি, মুক্তি ও মানবতার অগ্রদূত’। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের এই শুভ মুহূর্তে আমি দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক নেতা এবং নীতি-নির্ধারকদের প্রতি একটি শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষের বসবাস। এ অঞ্চলে যেমন সমস্যা রয়েছে, তেমনি রয়েছে প্রচুর সম্ভাবনা। আমাদের এ অঞ্চলের মানুষের রয়েছে অসম্ভব প্রাণশক্তি, উদ্ভাবন ক্ষমতা এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে জয় করে টিকে থাকার দক্ষতা। পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে প্রাপ্ত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে আমরা সহজেই দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটাতে পারি। আমরা যদি আমাদের জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করি, তাহলে অবশ্যই দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।
ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্কের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ভুটান আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী বন্ধু-রাষ্ট্র। ভৌগোলিক নৈকট্য ছাড়াও আমাদের রয়েছে প্রায় একই ধরনের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের অবস্থান প্রায় এক এবং অভিন্ন। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে সহযোগিতার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভুটানের প্রয়াত মহামান্য তৃতীয় রাজা জিগমে দোর্জি ওয়াংচুক এবং সেদেশের জনগণ স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের শুধু সমর্থনই দেননি, সাধ্যমতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ভুটানের তরুণেরা ভারতের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আহত এবং অসুস্থ বাঙালি শরণার্থীদের সেবা করেছিলেন। বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ভুটানই প্রথম দেশ যে স্বাধীন বাংলাদেশকে সর্বপ্রথম স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়লাভের আগেই ৬ ডিসেম্বর ভুটান বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। আমরা ভুটানের জনগণের সে অবদানের কথা কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করি।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১২ সালে ভুটানের তৃতীয় রাজা জিগমে দোর্জি ওয়াংচুককে ‘বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার’ সম্মাননায় ভূষিত করার কথা উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, পর্যটন, শিক্ষা ইত্যাদি খাতে সহযোগিতা ক্রমাগত বাড়ছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভুটানি ছাত্রছাত্রী বাংলাদেশে চিকিৎসাশাস্ত্রসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। আজকের সম্মানিত অতিথি প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে চিকিৎসাবিদ্যায় গ্রাজ্যুয়েশন করেছেন। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। ভুটানের মানবসম্পদ উন্নয়নে সহযোগী হতে পেরে আমরা গর্বিত।
অনুষ্ঠানে লোটে শেরিং বলেন, বাংলাদেশকে আমার সেকেন্ড হোম মনে হয়। দুই দেশের মধ্যে অনেক মিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দেশের পররাষ্ট্রনীতিতে বলেছেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমাদের দেশের রাজাও বলেছিলেন, সবার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্কের কথা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রশংসা করে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নেতা হিসেবে পেয়ে এই দেশের মানুষ সত্যিই ভাগ্যবান। আমার বিশ্বাস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তাকে নিয়ে গর্ববোধ করতেন। তিনি এবং তার দল যে দক্ষতার সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরো বলেন, বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। এই করোনার মধ্যেও দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ জিডিপি বাংলাদেশের। এগুলো জেনে আমাদের সত্যিই আনন্দ অনুভূত হয়। এছাড়াও নিজ বক্তব্যে কয়েক দফা বাংলায় শেখ মুজিবুর রহমানসহ বাংলাদেশ ও এদেশের জনগণের প্রশংসা করেন তিনি। একই সঙ্গে উভয় দেশ ও দেশের জনগণের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করেন একসময় বাংলাদেশে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে থাকা ডা. লোটে শেরিং।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ফের বাড়ছে
পরবর্তী নিবন্ধআজ সেই ভয়াল কালরাত